পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তাহা কি এখনও কেহ বুঝেন নাই ? এইসব ব্যবস্থাপক সভায় ভারতীয়গণ দেশের কল্যাণের জন্ত বিশেষ কিছুই করিতে পরিবেন না। কিন্তু ক্ষমতা এত সঙ্কুচিত কারাও আমাদের কৰ্ত্তাগণ স্বস্তি পান নাই। তাহারা অন্ত উপায়েও ব্যবস্থাপক সভার মর্যাদা ও সংহতি-শক্তিকে বিনষ্ট করিবার ব্যবস্থা করিয়া রাখিয়াছেন। সেই উপায় হইতেছে এই বহুনিন্দিত বাটোয়ারা। ব্যবস্থাপক সভায় নির্বাচিত সদস্যগণ যদি একজোটে কাজ করিবার অবসর পাইতেন, তবে অন্ত কিছু না পারিতেন, দেশের অনিষ্টে বাধা দিতে পারিতেন, এবং পুনঃপুনঃ প্রতি বিষয়ে সংঘবদ্ধভাবে বাধা দিয়া উহার অকিঞ্চিৎকরত্ব প্রমাণিত করিতে পারিতেন, প্রত্যেক ব্যবস্থাপক সভাকে আচল করিয়া দিতে পারিতেন। ইহার পরিণাম স্বদূরপ্রসারী হইত। কিন্তু বাটোয়ারার জঙ্ক ইহা কোন মতেই সম্ভব হইবে না। কারণ ভারতীয়গণ যাহাতে একজোট হইতে না পারে সেই উদ্দেশুকে সামনে রাখিয়া বাটোয়ারা রচিত হইয়াছে, অন্ততঃ সেইটা তাহার অন্যতম উদ্দেশু। আর যত দিন বাটোয়ারা বর্তমান অবস্থায় অক্ষুণ্ণ থাকিবে, তত দিন যে দেশের সর্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপকভাবে জাতীয়তাবোধ জাগিবেনা ইহা সুনিশ্চিত । পরম্পরের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কোলাহল লাগিয়াই থাকিবে, মাঝে মাঝে যে দাঙ্গাহাঙ্গামা হইবে না, তাহাও মনে হয় না। এই ঈর্ষা-বিদ্বেষ, দ্বন্দ্ব-কোলাহল ও সাম্প্রদায়িক দ্বাজার মধ্যে মুসলমানদের স্বাখ সংরক্ষিত থাকিতে পারে না, নানা ভাবে তাহাদের অন্ধবিধা হইবে, প্রতিশোধমূলক কার্ধে তাহাজের সময় ও শক্তি অধিক ব্যয়িত হইবে। তাহীদের স্বার্থসাধনের জন্য অধিক ভোট পাইতে হইলে তাহাদিগকে অন্য সম্প্রদায়ের শরণাপন্ন হইতে হইবে। কিন্তু নির্বাচন-ক্ষেত্রে তাহাজের সহিত কোনরূপ বাধ্যবাধকতা থাকিবে না বলিয়া তাহাজের নিকট বিশেষ সাহায্য পাইবেন না। হয়ত কতকগুলি আসার বিষয়ে অন্যবিধ কারণে ইউরোপীয়ানদের সাহায্য পাইতে পারেন, কিন্তু তাহার প্রতিদানে তাহাদিগকে দেশের স্বাৰ্থ বলি দিতে হইবে। ইহা সত্য ষে বাটোয়ারার অঙ্গিয়ে বিভিন্ন প্রদেশের ব্যবস্থাপক সভা সমূহে মুসলমানদের আকুপাতিক সংখ্যা বাড়িয়া বাইবে। আর কেন্দ্রীয় সভায়ও মুসলমানের এক-তৃতীয়াংশ জাসন পাইবেন । বাংলা ও পঞ্জাবে অপর সম্প্রদায় অপেক্ষা তাহাদের জন্য অধিক আসন নিদিষ্ট হইয়াছে, এবং অন্যান্য প্রদেশে আশাহুরূপ ওয়েটেজ সহ আসন পাইয়াছেন। এই দিক দিয়া বাটোয়ারার কল্যাণে মুসলমানদের বোল আন লাভই হইয়াছে। কিন্তু ইহা প্রকৃত লাভ নহে। সাম্রাজ্যবাদীদের স্বয়ার দানকে আশার রঙীন চশমা দিয়া দেখিলে কাৰ্য্যক্ষেত্রে হতাশ হইতে হইবে। এই আপাতমধুর স্থবিধার মোহে না ভুলিয়া বাটোয়ারার অন্য দিকটা একবার দেখিলে সমস্ত আশা ও আনন্দ নিরাশা, হতাশা ও নিরানন্দে পরিণত হইবে। সদস্তদের স্বাধীনভাবে কাজ করিবার যদি কোন ক্ষমতা না থাকে, যদি তাহাদের প্রস্তাবিত প্রত্যেক কাৰ্য্য পদে পদে বাধাপ্রাপ্ত হইতে থাকে, এবং ক্ষমতা সম্প্রসারণের যদি কোন অধিকার না থাকে, তবে আশানুরূপ অতিরিক্ত আসন লাভ করিয়া তাহারা কি কোন কাজ করিতে পারিবেন ? আর নূতন ব্যবস্থাপক সভার যে কোনই ক্ষমতা থাকিবে না তাহা সকলেই একবাক্যে স্বীকার করিয়াছেন। ফাকা আওয়াজে বক্তৃতা দেওয়া ব্যতীত তথায় বিশেষ কোন কাজ হইবে না। স্বতরাং বাটোয়ারার আশ্রয়ে নিজেদের ভারতবাসী হিসাবে নিরাপদ মনে করা নিতান্ত ভূল হইবে। এই প্রলোভনে না ভুলিয়া মুসলমানদের উচিত, প্রকৃত ক্ষমতা আদায়ের জন্য সংগ্রাম করা । এরূপ ক্ষেত্রে বাটোয়ারাকে প্রত্যাখ্যান করা ব্যতীত আমাদের জন্ত দ্বিতীয় পন্থা নাই। কেন প্রত্যাখ্যান করিতে হইবে সে সম্বন্ধে দু-একটা কথা বলা আবশুক । পরাধীন দেশের ব্যবস্থাপক সভায়, যেখানে কোনরূপ প্রকৃত ক্ষমতা দেওয়া হয় না, আর যে সামাঙ্ক ক্ষমতা দেওয়া হয় তাঁহা নানাবিধ আইন দ্বারা কণ্টকিত, সেখানে দুইটি উপায়ে ক্ষমতা প্রসারের অথবা আদায়ের চেষ্টা করা যাইতে পারে। প্রথমত, উহাকে সরাসরিভাবে পরিত্যাগ বা বয়কট করা। দেশবাসীকে এমন ভাবে একত্র করিতে হইবে যাহাতে প্রত্যেকে উহাকে স্পর্শ মাত্র করিতে ঘৃণা বোধ করে। শাসনকৰ্ত্তাদের প্রদত্ত বা তাঁহাদেরকেই প্রতাপর্ণ করিতে হইবে। যদি কেহই উহা স্পর্শ না করে তবে সরকার তাহা পরিবর্তন করিয়া দেশবাসীর দাবী অনুযায়ী শাসনসংস্কার দিতে বাধ্য হইবেন । দ্বিতীয় পন্থা এই যে, ব্যবস্থাপক