পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

: تومسوا مسوا একটা মায় পড়ে গেছে। নইলে কি এমন আমার দায় ঠেকেছে। সেদিনে মেয়েটাকে বলেছে, ও-বুড়ীর কাছে যাস নে, ও ডান-সেইদিনই দিয়েছিলাম দূর করে। --তবুও আমার পিছু নেবে। ঐ একরত্তি দশ-এগার বছরের মেয়ে, মেরে ত আর তাড়িয়ে দিতে পারি না। আচ্ছ তুই-ই বল সে-দোষও কি আমার— দোষ কাহার ? নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করিলাম । ইচ্ছা হইতেছিল বলি, দোষ তোমার নয় ঠানদি, দোষ তোমার কালে কদাকার দেহের অস্থায়ী ঐ মাংসপিণ্ডটার, আর তোমার বাপের জমার অঙ্কটার। কিন্তু মুখে আমি কোন কথাই কহিলাম না। নিজের শ্রীহীনতার দৈন্য যার প্রতি কথায় ও কাজে অহরহ প্রকাশ পাইতেছে তাহাকে সে-কথ। স্মরণ করাইয়া দিবার মত নিষ্ঠুরতা আমার মধ্যে নাই। সহসা ঠানদি ক্ষিপ্ত হইয়া উঠিলেন। শুামলাঁর পিঠের উপর ঘ-কয়েক বসাইয়া দিয়া কহিলেন, দূর হয়ে যা আমার চোখের স্বমুখ থেকে । তোর মাকে বল গে দিদিমা আমায় মেরে তাড়িয়ে দেছে । ঠানদি আস্ফালন করিতে লাগিলেন । যত সব আগাছ-পরগাছা কেটে সাফ ক’রে ফেলব। মেয়েট। কিছু সময় ঠানদির মুখের প্রতি চাহিয়া থাকিয় বিমর্ষ মুখে প্রস্থান করিল। আমার অলক্ষ্যে ঠামদি তার চোখের জল মুছিয়া ফেলিবার প্রয়াস পাইলেন । কিন্তু আমার সতর্ক দৃষ্টিকে তাহা ফাকি দিতে পারিল না। হায় রে দুর্ভাগ মেয়েট, কেমন করিয়া তুই বুঝিবি তোকে তাড়না করিবার অন্তরালে কতখানি স্নেহ লুকাইয়া রহিয়াছে ঐ রুক্ষ-মেজাজ ঠানদির অস্তরে। বুঝিলাম সবই মিথ্যা, তথাপি প্রতিবাদ করিলাম, লোকের কথায় কি এসে যায় ঠানদি—মেয়েটাকে মারধর ক’রে যখন নিজেই তুমি সকলের চেয়ে বেশী ব্যথা পাওঁ তখন এ মিথ্যা আস্ফালনে লাভ কি ! লোকের কথায় ত আর গায়ে ফোস্কা পড়ে না । ঠানদি স্থিরকণ্ঠে কহিলেন, আমি বলেই এত দিন পড়েনি, তোদের হ'লে ঘা হয়ে যেত রে বিশু । ঠানদি আর দাড়াইলেন না । মনটা আমার ভারাক্রাস্ত হইয়া রহিল। সারাদিন আর ঠানদির সাক্ষাৎ মিলিল না। শুমলীর দেখা বার-কয়েক প্রবাসী $NరిgNరి মিলিল। এত তাড়ন খাইয়াও মেয়েটা ঘুর-ঘুর করিয়া ঠানদির ঘরের চতুদিকে ঘুরিয়া ফিরিতে লাগিল । আমার কাছে আসিয়াও সে বহু প্রশ্ন করিয়াছে—ছেলেমান্বষী প্রশ্ন, কিন্তু সাদা মনের অকপটতা তার প্রতিটি কথায় মূৰ্ত্ত হইয়া উঠিয়াছে। শু্যামলী বলে, দিদিমার ভাতগুলি তেমনি পড়ে। আছে বিশুদাদা, আমি জানালার ফাকে দেখে এলাম । বুঝিলাম, অভুক্ত মেয়েটাকে তাড়াইয়া দিয়া ঠানদিও উপবাসী আছেন, কিন্তু সে-কথা এষ্ট বালিকাকে বুঝাই কি করিয়া। বলিলাম, ঠানদির শরীর ভাল নেই, তাকে বিরক্ত করতে যাস নে শু্যামলী । মেজাজটা আমারও তেমন ভাল ছিল না, হয়ত শামলীর প্রশ্নের যথাযথ উত্তর আমি দিতে পারি নাই, অথবা যাহা দিয়াছি তাহ কিঞ্চিং রূঢ়ভাবে প্রকাশ পাইয়াছে। শু্যামল কি বুঝিয়াছে জানি না, কিন্তু তার পরেও তাকে বার-কয়েক ঠানদির ঘরের আশেপাশে দেখিয়াছি, অথচ আমি ডাকাডাকি করিয়াও আর তার সাড়া পাই নাই । ঠানদি দিনরাত দূর দূর করিয়াও যাহা পারেন নাই আমার একটি মাত্র রূঢ় কথা তার চেয়ে ঢের বেশী কাজ করিয়াছে। তাই ত ভাবি, একরত্তি ঐ মেয়েটা কি একথান আয়ন যে এমনি করিয়া অস্তরের প্রতিবিম্ব তার বুকেপ্রকাশ পাইতেছে । ছোট্ট মেয়ে মনস্তত্ত্বের ধার ধারে ন}, অথচ মানুষকে যাচাই করিবার কি নিতুল অদ্ভুত ক্ষমত, আমার আহবানকে শু্যামলী উপেক্ষা করিয়াছে—ভালই করিয়াছে, আমার দম্ভকে পদাঘাত করিয়া । কেন জানি না হঠাৎ মনটা আমার বড় প্রফুল্প হইয়া উঠিল । ইচ্ছা হইতেছিল, মেয়েটাকে ডাকিয়া আনিয়া জিজ্ঞাসা করি, মানুষকে চিনিবার এ তীক্ষ অনুভূতি তুই কোথায় পেলি ? কিন্তু মনের এ-পাগলামি মনেই চাপিয়া রাখি । সন্ধ্যার প্রাক্কালে ও-পাড়ার নরেশ আসিয়া জানাষ্টয়া গেল, তাদের পাড়ায় আজ মুকুন্দ দাসের গান আছে। যাত্রাগানে আমার আকর্ষণ নাই, কিন্তু মুকুন্দর গানের প্রশংসা আমি স্বদুর প্রবাসেও শুনিয়াছি। ঠানদির দরজায় আঘাত করিলাম, বলিলাম, সন্ধ্যা হয়ে এসেছে ঠানদি। ঠানদি তার স্বাভাবিক-কণ্ঠে ঝঙ্কার দিলেন,