পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চৈত্র সে ইস আমার আছে, বিশ্বনাথ । কথা বাড়াইবার ইচ্ছা আমার ও ছিল না, তথাপি কহিলাম, ওগায়ে মুকুন্দর যাত্রাগান আছে, যাবে নাকি ঠানদি ? ঠানদির আর সাড়া পাওয়া গেল না। আমাকে বাধ্য হইয়া নিজের পথ দেখিতে হুইল । পোছাইতে কিছু বিলম্ব হইয়া গিয়াছিল। গান তথম প্রায় আরম্ভ হয়-হয় । কোন রকমে কষ্টেস্থষ্টে এক কোণে জড়সড় হইয়া বসিবার মত একটু স্থান হইল। গান মুরু হইয়াছে। ঘন ঘন হাতত:লিও কালে আসিতেছিল, কিন্তু সব ছাপিয়া থাকিয়া থাকিয় আমার ঠানদির কথাই মনে পড়িতে লাগিল । হয়ত তিনি এখন তেমনি অভুক্র অবস্থায় গৃহকোণে পড়িয়া আছেন—হয়ত শু্যামলী তার অপরিণত মনের দুৰ্ব্বার টানে ঘুরিয়া ফিরিয়৷ ঠানদির গৃহপ্রাঙ্গণে আসিয়া নিতাস্ত অসহায়ের মত ফিরিয়া যাইতেছে । বিবাহ আমি করি নাই। থামক দরিদ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি করিয়া লাভ কি ! লোকে বলে আমি রূঢ়, দয়ামায়াহীন, যেহেতু আমার পিছুটান নাই। তাই ত ভাবি, মানুষ তার কল্পনায় রং চড়াইয়া মিথ্যাকে সভ্য বলিয়া কত বাহাদুরীই নেয় । গান শোনার মত মন আমি হারাইয়া ফেলিয়াছি। পকেট ইহঁতে ঘড়িটা বাহির করিলাম। ধাত নিতাস্ত কম হয় নাই। বারটা । উঠিয়া পড়িলাম। হেমস্তের শেষ । অন্ধকার রাত্রি, তায় গ্রামের পথ । রাস্তায় জনমানবের সাড় নাই । দুই হাতে কুয়াশা-সিক্ত অন্ধকারকে ঠেলিয়া অগ্রসর হইতে লাগিলাম। সঙ্গে একট। টর্চ পৰ্য্যস্ত মাত । পায়ের পাশ দিয়া সড়াৎ করিয়! কি একট। সরিয়া গেল । সাপ নয়ত-যদিও শীতের স্পর্শ পাওয়া যাইতেছিল। এইটুকুই যা ভরসা। স্বচাভেদ্য অন্ধকার...আশেপাশের ঘন সন্নিবেশিত গাছের ফাকে ফঁাকে আজ এই প্রথম উহার রূপকে উপলব্ধি করিলাম। কৰ্ম্মজীবনে এমনি কত অন্ধকার রাত্রে বন্দুক ঘাড়ে করিয়া ঘুরিয়া বেড়াইয়াছি, কিন্তু প্রকৃতি কোন দিনই আমায় আকর্ষণ করিতে পারে নাই। আজ সেদিন আর আমার নাই, চোখের দৃষ্টি আমার বদলাইয়া গিয়াছে। ভূতপ্রেতে আমার বিশ্বাস আছে, যদিও চোখে কখন দেখি মিছে বিরক্ত করিস নে অস্তঃসলিলণ

      • ) يامسواسسوا

নাই। বুকে সাহস আছে, দুঃসাহস নাই। সতর্কতার সহিত অগ্রসর হইতেছিলাম। বাড়ীর সীমানায় আসিয়া পড়িয়াছি । আর খানিক অগ্রসর হইতে পারিলেই আমার গান শুনিতে যাহবার দুর্ভোগের অস্ত হয়। কিন্তু সংস সম্মুখে একটি অস্পষ্ট ছায়ামূৰ্ত্তি দেখিয়া থমকিয়া দাড়াইলাম । হাক দিলাম, কে ? ঠানদির গলার সাড়া পাঙ্গলাম, কে, বিস্ত ? গান শেষ হয়ে গেল বুঝি ? বিস্মিত হইলাম, এত রাহে এ পোড়ে। ভিটায় ঠানদির কি প্রয়োজন থাকিতে পারে । আরও খানিক অগ্রসর হইলাম। ততোধিক বিস্মিত কণ্ঠে বলিলাম, ভোমার মাথায় ওগুলো কি ঠানদি ? . ঠানদি শব্দ করিয়৷ গসিধু উঠিলেন, বলিস কেন অার--- তা এ এক রকম মন্দ নয়...অবল জীব, কথা কহঁতে ত আর পারবে না । বুঝিলাম না ঠানদি কি বলিতে চান । পুনরায় একই প্রশ্ন করিলাম । ঠানদি কহিলেন, ছাগলছানাটার জন্য দুটি কাঠালপাত নিয়ে এলুম ভট্টাচাযিদের বাগান থেকে । দিনের বেলায় কি আর আনবার যে আছে ! আহা ! অবলা জীব, দুটি পাতা থেতে গিয়েঙ্গ না পা খোড় ক’রে এল । ভট্চাধ্যি ঠাকুরের কি মায়াদয়া আছে – বুঝিলাম ঠানfদর এ-আয়োজন তার বছর-দুয়েকের লালিত পুরুষ্ট, ছাগলটির জন্য । মামুসের কাছে যে-ভালবাসা তার আঘাত থাইয়া প্রতিহত হইয়াছে, তাহারভ খানিক, আজ নিত্যস্ত সামান্য কারণে ছাগলটির উপর উচ্ছ্বসিত হষ্টয়া উঠিয়াছে। ঠানদি পুনশ্চ কহিলেন, ম-মরা ছাগলছানাটা কতকষ্টে এত বড় করেছি, তার ওরা কি বুঝবে । তেমনি আমিও হিমি বামুনি-নিয়ে এসেছি বামুনের পোর সব ক-টা চার গাছ উপড়ে । অন্ধকারে পথ চলিতে চলিতে ঠানদি পুনরায় কহিলেন, মেয়েটার জন্যে সভ্যই মায়া হয় বিশু । ওরও যে মা নেষ্ট । আমি নীরব রহিলাম । ঠানদি বলিতে লাগিলেন, দিনরাত মুখ করি তবুও আমার কাছে ঘুরে ফিরে আসে। সন্ধ্যাবেল ছুটে এসে