পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখ তুলিয়া চাহিলাম। বিস্থিত হইলাম না। বুকের মধ্যে একটা তীব্র ব্যথা অনুভব করিলাম। অদূরে বটগাছতলায় যেখানে শু্যামলী দাড়াইয়াছিল তাহার পাশে ঠানদিও আসিয়া জুটিয়াছেন । হায় রে অন্ধস্নেহ । ত নাড়িলাম—শু্যামলীর হাতখানাও নড়িয়া উঠিল। ঠানদি তার হাত দুখানা কোষ করিয়া চোখের উপর ধরিয়া এই দিকে একদৃষ্টে চাহিয়া রহিলেন । গাড়ী বাকের মুখে অদৃশু হইয়া গেল । ভাবিয়াছিলাম আর হয়ত ফিরিব না কিন্তু আমার ভাঙা স্বাস্থ্য আর জোড়া লাগিল না। টানাহঁ্যাচড়া করিয়া আরও গোটা-দুই বছর চাকুরী করিয়া নির্দিষ্ট সময়ের পূৰ্ব্বে পেন্সন লইয়া গ্রামে ফিরিলাম, কিন্তু এখন ভাবিতেছি ফেরা আমার সার্থক হয় নাই । কিছুদিন হইতে খুড়োই আমার কুঁড়েখানি দখল করিয়া বাস করিতেছিলেন । আমার আগমনে বাধ্য হইয়াই তাহাকে দখল ছাড়িতে হইল। কিন্তু যে-আগ্রহ লইয়া আমি গ্রামে ফিরিয়াছিলাম তাহার এক কণাও আর মনের মধ্যে খুজিয়া পাইতেছিলাম না । ঠানদি নাই । বছরখানেক হইল তার নিঃসঙ্গ জীবনযাত্রার অবসান হষ্টয়াছে। শুামলী করিয়াছে আত্মহত্যা। অনেকের মুখে অনেক গুজব শুনিলাম, কিন্তু কারণ অনুসন্ধান করি নাই—ভয় হইল, কি জানি কি রূঢ় সত্য আবিষ্কৃত হয়। কিন্তু ওদের কাহাকেও আমি মন হইতে বিদায় দিতে পারি নাই। ঠানদির শূন্ত ঘরের দিকে চাহিলেই একসঙ্গে আমার চোখের সম্মুখে দুইখানি ভিন্ন আকারের মুখ ভাসিয়া উঠে। রাস্তার পাশের বটগাছটার পাশ দিয়া চলিতে গেলেই আমার বুকের মধ্যে হাহাকার করিয়া ওঠে–চোখের সম্মুখে শু্যামলী ও ঠানদি আসিয়া দাড়ায়। মনে পড়ে বিদায়ক্ষণের একখানি জীবন্ত ছবি । যারা ছিল তারা নাই । এই গ্রাম হইতে নিশ্চিহ্নে মুছিয়া গিয়াছে। কিন্তু আমার স্মৃতির ভাণ্ডারে তাহারা অক্ষয় অমর হইয়া রহিয়াছে। যত দিন বাচিয়া থাকিব আমার চেতনার সহিত উহারা নিবিড় ভাবে জড়াইয়া থাকুক—এর চেয়ে বড় কামনা আপাততঃ আমার নাই । একদল শ্রীনিৰ্ম্মলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এক দিন এসেছিলে নিকটে আমার, সেদিন দোহায়ু যেন স্বপন-আবেশে এক হয়ে মিশেছিকু ; কত কেঁদে হেসে কেটেছিল কত দিন ; কত বেদনার রসঘন অনুভূতি, কত যন্ত্রণার কেমন সহজে ভাগ কত ভালোবেসে নিয়েছিন্ত দু-জনায় । আজ অবশেষে দলিত কুহুম মাত্র জাগে স্মৃতি তার । হেমস্তের হিমে হেথঃ ভরেছে বাতাস ঝর-ঝর শতদলে শিশির শিহরে ; দিকে দিকে জাগিতেছে বেদনা-আভাস ধূমল আকাশে আর পত্র-মরমরে । এই পূর্ণ পরিব্যাপ্ত অবসাদ মাঝে জানি না ফিরিছ তুমি কোথা কোন সাজে।