পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিষিদ্ধ দেশে সওয়া বৎসর রাহুল সাংকৃত্যায়ন > y তিব্বতের মত অজ্ঞাত বা অল্পজ্ঞাত দেশ জগতে আর দ্বিতীয় নাই । ইহা ভারতের উত্তর সীমায় স্থিত, কিন্তু এ-দেশের জনসাধারণ কেন, শিক্ষিত লোকেও ঙিব্বতের বিষয় খুবই অল্প জানেন। আমার এক বন্ধুকে তিব্বত হইতে চিঠি লিখিয়াছিলাম পুস্তকের প্রাণ্ডুলিপি লিখিবার জন্য ডাকে কিছু কাগজ পাঠাইতে ; তিনি পত্রোত্তরে লিখিলেন, ডাক অপেক্ষা রেলে পাঠাইলে মাশুল কম লাগিবে, সুতরাং রেলওয়ে ষ্টেশনের নাম পাঠাইলে ভাল হয়। এই উত্তরে এ-দেশ সম্বন্ধে আমাদের ইংরেজী শিক্ষা জাত জ্ঞানের অপূৰ্ব্ব পরিচয় সহজেই বুঝিতে পারা যায়। বস্তুতঃ তিব্বত সম্বন্ধে জ্ঞাতব্য বিষয় আমরা কিছুই জানি না, লোকের ধারণ নাই যে, হিমাচলের পাদমূলস্থ ত্রিটিশ ভারতীয় রেলওয়ে ষ্টেশন হইতে এক মাসের পথ চলিয়া বিশ হাজার ফুট উচ্চ কয়েকটি গিরিসঙ্কট পার হইলে তবে লাসা পৌছান যায়। কালিম্পং হইতে পথের দুই-তৃতীয়াংশ পার হইলে পর গ্যাঞ্চী : তাহাই ইংরেজের শেষ ডাকঘর, ঐ পর্য্যন্ত ভারতীয় ডাকমাণ্ডলে চিঠিপত্র ও পার্শেল ইত্যাদি যায় । লাস পর্য্যস্ত টেলিগ্রাম ভারতীয় দরেই যায়। সভ্য জগতে তিব্বতের এইরূপ অপরিচিত থাকার প্রধান কারণ ইহার দুর্গমতা । দক্ষিণ ও পশ্চিমে হিমালয়ের গগনভেদী বিরাট পৰ্ব্বতমালা, উত্তরে (লাসা হইতে এক শত মাইলের কিছু বেশী দূরে ) বিশাল মরুভূমি ; এই সকলই অতি দুর্গম। ভারত হইতে তিব্বত যাইবার প্রধান পৃথগুলি কাশ্মীর ও দাজিলিং অঞ্চল হইতে গিয়াছে ; দাৰ্জিলিং হইতে লাসার দূরত্ব ৩৬০ মাইল। এ-দেশের অধিকাংশ স্থলই সমুদ্রপৃষ্ঠ হইতে ১৬,০০০ ফুটের উপরে, এইজন্ত বৎসক্ষেত্ব আট মাস এ-দেশের মাটি তুষারাচ্ছন্ন থাকে। তিব্বতই জগতের সৰ্ব্বোচ্চ জনপদ । তিব্বত বিশাল দেশ। ইহা নামমাত্র চীন সাম্রাজ্যের অস্তৰ্ভুক্ত । এ-দেশের লোক বৌদ্ধধৰ্ম্মাবলম্বী, কিন্তু সামাজিক প্রথাদিতে এক প্রাস্তের আচার-ব্যবহারের সহিত অন্ত প্রাস্তের মিল নাই, তথাপি এ-দেশে ধর্মের প্রাধান্ত অতি দৃঢ়। দেশের শাসক দলাই লামা ভগবান বুদ্ধের অবতার রূপে পরিচিত এবং লোকের বিশ্বাস যে নূতন দলাই লামা সিংহাসনে বসিলে তাহার মধ্যে বুদ্ধদেবের আত্মা আবিভূত হয়। সারা দেশ বৌদ্ধ মঠে পরিপূর্ণ। লাসায় এরূপ তিনটি মঠ আছে, যাহার প্রত্যেকটিতে চার-পাচ হাজার ভিক্ষু বাস করে । ইহা ছাড়া আরও অনেক মঠ আছে যাহাতে শত শত ভিক্ষু থাকে । প্রাঙ্গতিক অবস্থানের ফলে তিব্বত অন্য দেশ হইতে বিশেষভাবে বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়িয়াড়ে এবং এইরূপ পরিস্থিতির প্রভাবে এ-দেশীঘেরাও অন্য দেশের অধিবাসীর সহিত মেলমেশায় অনিচ্ছুক । তিব্বতীয় ভদ্রলোক সাধারণতঃ শাস্ত শিষ্ট এবং আপনভাবে ভরপুর । বিদেশীয়ের সঠিত সম্পর্ক রাখা ইহারা ভাল মনে করেন না। নিজেদের প্রাচীন ধৰ্ম্মে ইঙ্গদের অসীম শ্রদ্ধ, উপরস্তু প্রাচীন পন্থায় চাষবাস ও ক্রিয়াকৰ্ম্মাদি করিয়া সন্তোষের সহিত জীবন যাপল ইহার সংসারের প্রধান লক্ষ মনে করেন। আধুনিক বিংশ শতকের সভ্যতা হইতে ইঙ্গর ধর্থাসম্ভব দূরে থাকিতে চাহেন এবং সেই জন্যই এদেশে বিদেশীয়ের প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু তাহা হইলেও ঈহার বিশেষ অতিথিবৎসল । তিববতীয়ের প্রচুর চা পান করে । নৃত্যগীতেও ইহাদের বিশেষ উৎসাহ । নৃত্য প্রধানতঃ পুরুষেরাই করে, স্ত্রীলোকের মধ্যে নুত্যের বড় চলন নাই । এ-দেশে স্ত্রীলোকের পর্দা নাই, পুরুষের মত তাহারা স্বাধীনভাবে কাজকৰ্ম্ম করিয়া উপার্জনের পথ দেখে । তিব্বতে, বিশেষতঃ লাসা অঞ্চলে, প্রবেশ করা কি কঠিন ব্যাপার তাহ তিব্বত-যাত্র-সম্বন্ধীয় গ্রন্থ পাঠেষ্ট বুঝা যায় । আমি ফাল্গুন শুক্ল যষ্ঠতে ভারতসীমাস্ত হইতে যাত্রারম্ভ করিয়া আষাঢ়ের শুক্ল ত্রয়োদশীতে লাসায় উপস্থিত হুই । আমার এই যাত্র আত্মতৃপ্তি অথবা ভৌগোলিক অনুসন্ধানের জন্য হয় নাই ; এ-দেশের সাহিত্য উত্তমরূপে অধ্যয়ন এবং উহা হইতে ভারতীয় এবং বৌদ্ধধৰ্ম্মসম্বন্ধীয় ঐতিহাসিক ও ধৰ্ম্মনৈতিক তথ্য আহরণের জন্য আমি এ-দেশে আসি । খ্ৰীষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে নালন্দার আচাৰ্য্য শাস্তরক্ষিতের কাল হইতে আরম্ভ করিয়া একাদশ শতাব্দীতে বিক্রমশীলার আচাৰ্য্য দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের সময় পৰ্য্যস্ত ভারত ও তিব্বতের সম্বন্ধ কিরূপ ঘনিষ্ঠ ছিল তাহ ইতিহাসপ্রেমিক মাত্রেই অবগত আছেন। ভারত তিববতকে ধৰ্ম্ম, অক্ষর ও সাহিত্যিক ভাষা দান করেন। ভারতীয়ের এ-দেশে আসিয়া কিছু হিন্দী এবং বহু সহস্ৰ সংস্কৃত পুস্তকের তিব্বতী ভাষায় অনুবাদ