পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজবংশের রাজধানী ছিল, তাহাতে লক্ষ পরিবারের বসতি ছিল । যাহা হউক, যে রাজবংশ ভোটদেশের অন্যতম মহান ধৰ্ম্মপ্রচারক দীপঙ্কর শ্ৰীজ্ঞান অর্থাৎ অতীশের ( জন্ম খ্ৰীষ্টাব্দ” ৯৮২, মৃত্যু ১০৫৪) আবির্ভাবে গৌরবাম্বিত, সেই রাজবংশেই সপ্তম শতকের মধ্যভাগে ( অস্ত খ্ৰীষ্টাব্দ ৬৫০ ) মাচার্ষ্য শাস্তরক্ষিত জন্মগ্রহণ করেন । নালন্দার ভূমি ভথগিতের চরণধুলাস্পর্শে বহুবাব পবিত্র হইয়াছিল । ভগবান বুদ্ধ এক বৰ্ষাঋতু যাপন এখানেই করিয়াছিলেন । ইহারই অভিসন্নিকটে নালক প্রাম ; লালক ভগবান বুদ্ধের সর্বপ্রধান শিয্য ধৰ্ম্মসেনাপতি আধ্য সারপুত্রকে জন্মদান করে ; এখানে বুদ্ধের জীবিতকালেই প্রাবারক শেঠ নিজের আম্রবন দান করিয়াছিলেন । এই স্থানের পবিত্রতা সহজেই উপলব্ধি করা যায়। এখানে পূৰ্ব্বকাল হইতেই বিহার প্রতিষ্ঠিত ছিল । সম্রাট অশোকের সময়ে তৃতীয় ধৰ্ম্মসঙ্গীতিতে ( অর্থাৎ কনফারেন্মে ) সৰ্ব্বাস্তিবাদ আদি নিকায় ( সম্প্রদায় ) স্থবিরবাদ হইতে বহিষ্কৃত হয়, ফলে সৰ্ব্বাস্তিবাদী ও অতুরূপ অন্য সাম্প্রদায়িকেরা নালন্দায় সভা স্থাপন করেন, সে কারণে নালন্দা সৰ্ব্বাস্তিবাদীদিগের কেন্দ্রস্থল হয়। বৌদ্ধ মৌৰ্য্যকুলের ধ্বংস-সাধন করিয়া বৌদ্ধদ্বেষী ব্রাহ্মণমতাবলম্বী গুজবংশ ১৮৮ খ্ৰীষ্টাব্দে মগধ সিংহাসন অধিকার করিলে, দেশের বিপরীত পরিস্থিতির ফলে সকল বৌদ্ধনিকায় মগধ ত্যাগ করিয়া নিজ নিজ কেন্দ্রসমূহ দেশদেশাস্তরে স্থাপিত করেন। সৰ্ব্বাস্তিবাদীরা মথুরার সন্নিকটে গোবৰ্দ্ধন পৰ্ব্বতে কেন্দ্র স্থাপন করেন এবং এই সময় তাহারা নিজের পিটক সংস্কৃতে রূপান্তরিত করায় তৎকালীন সৰ্ব্বাস্তিবাদ ইতিহাসে “অায্য সৰ্ব্বাস্তিবাদ” নামে পরিচিত হয়। পরে মহাকুষাণ রাজকুল ইহাতে বিশেষ শ্রদ্ধাশীল হওয়ায় ইহাদের কেন্দ্র মথুরা হইতে কাশ্মীর-গন্ধারে স্থানাস্তরিত হয়। কাশ্মীর-গন্ধারের সর্বাস্তিবাদই মূল সৰ্ব্বাস্তিবাদ নামে থ্যাত। সম্রাট কনিষ্ক এই সম্প্রদায়ের পক্ষে দ্বিতীয় অশোক ছিলেন । তিনিই তক্ষশীলায় ধৰ্ম্মরাজিক স্তুপে “আচরিয়ুণাং সৰ্ব্বতথবদিনং পরিগাহে” শব্দ অঙ্কিত করিয়া উহা মুল সৰ্ব্বাস্তিবাদের নামে উৎসর্গ করেন। কমিষ্কের সংরক্ষণকালে চতুর্থ মহতী বৌদ্ধধৰ্ম্মপরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়। তাহাতে মূল সৰ্ব্বাস্তিবাদ অনুসারে ত্রিপিটকের বিস্তুত টকা প্রস্তুত হয় । এই টীকার নাম বিভাষা হওয়ায় মূল সৰ্ব্বাস্তিবাদের নামান্তর “বৈভাষিক । এই মূল সৰ্ব্বাস্তিবাদ হইতেই মহাযানের উৎপত্তি, তাহাতে বৈপুল্য (পালি—বৈতুল্ল ) অবতংসক আদি স্বত্র নিজ স্বত্রপিটক রূপে আসে, কেবলমাত্র বিনয়পিটক রূপে সৰ্ব্বাস্তিবাদের বিনয়ই থাকে। মহাযান হইতে বজ্রযান এবং ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের ভরাডুবি-যুগের সহজযান ( ১২শ শতক খ্ৰী: ) নামক ঘোর বজ্রযান উদয় হইলে পরেও وجود مسجاسو&s < নালন্দা, বিক্রমশীল, উদস্তপুরী আদি মহাবিহারে মূল সৰ্ব্বাস্তিবাদের বিনয়পিটক স্বীকৃত হইত। ভেটয় ভিক্ষুরা আজও ইহাকে মানেন এবং অতি গর্বের সহিত বলেন যে তাহারা মূল সৰ্ব্বাস্তবাদের বিনয়, বোধিসত্ত্ব ( মহাযান ) ও বজ্রযান এই তিনেরই শল ধারণ করেন । এই উক্তির অর্থ অন্ত লোকের পক্ষে বোধগম্য হওয়া কঠিন, কেন-ম। যদিও যে কোন লোক এক সহস্র প্রকার শীল ধারণ অনায়াসেই করিতে পারে তথাপি পরস্পরবিরোধী আলোক ও অন্ধকার কি প্রকারে এক স্থানে বিরাজ করিতে পারে তাহা ঐক্লপ শীলধারিগণ প্রকাশ করিয়া বলেন না । বলা বাহুল্য, বিনয় ও বজ্রযান নিরতিশয় পরম্পরবিরোধী । শাস্তরক্ষিতের সময় নালন্দার মহিমা দিগস্তবিস্তৃত ছিল । উহার অল্প দিন পূর্বেই যুদ্ধন-চবাং ঐ স্থানে বিদ্যার্জন করিয়া গিয়াছেন । তথন ওখানে বজ্রযান বা তন্ত্রযানের প্রভাব । শাস্তরক্ষিত ঐখানেই গৃহত্যাগ করিয়া আচার্ষ্য জ্ঞানগর্ভের নিকট মূল সৰ্ব্বাস্তিবাদ বিনয় মতে প্রত্ৰজ্যা ও উপসংপদ ( অল্পমান ৬৭৫ খ্ৰী: ) ও শাস্তরক্ষিত নাম গ্রহণ করেন । নালন্দাতেই তাহার গুরুর নিকট সাঙ্গোপাঙ্গ ত্রিপিটক অধ্যায়নের পর তিনি বোধিসত্ব মাগীয় ( মহাযানিক j অভিসময়ালঙ্কার আদি পাঠ করিবার আচার্ষ্য বিনয় সেনের নিকট উপস্থিত হন । আচার্য্যের নিমিত্ত নিকট তিনি মহাযান মাগের বিস্তৃত ও গষ্ঠীর উভয় ক্রমের সহিত আধ্য মাগাৰ্জুনের * মাধ্যমিক সিদ্ধাস্তও পাঠ করেন । উহারই উপর পরে তিনি সটীক মধ্যমকালঙ্কার নামক গ্রন্থ রচনা করেন । চীনা ভিক্ষু ঈ-চিও নালন্দায় শাস্তরক্ষিতের সমসাময়িক ছিলেন—খ্রীঃ ৬৭১-৯৫এর মধ্যেপ্রণীত তাহার পুস্তকে কিন্তু অঙ্ক অনেক পণ্ডিতের নাম থাকা সত্বেও শাস্তরক্ষিতের কোনও উল্লেথ নাক্ত ৷ বোধ হয় তখনও তিনি প্রসিদ্ধিলাভ করেন নাই। পাঠ সমাপনাস্তে শাস্তরক্ষিত নালন্দাতেই অধ্যাপনকাৰ্য্য আরম্ভ করেন । তাহার ছাত্রদের মধ্যে হরিভদ্র ও কমলশীল পরে যশস্বী লেখক হন। মূল ভাষায় লুপ্ত হইলেও ভোটায় অনুবাদরূপে তংগুরে তাহাদের বহু সংস্কৃত গ্রন্থ পাওয়া যায়। আচাৰ্য্য শাস্তরক্ষিতের অনেক দার্শনিক গ্রন্থও ঐ সংগ্রহে ভাষাস্তর রূপে পাই ; সংস্কৃতে তাহাদের অস্তিত্ব লোপ হইয়াছে, কেবল অন্ত পুস্তকে তত্ত্বসংগ্রহ বা উল্লেখরূপে তাহা বিদ্বৎসমাজের গোচরীভূত । আচাৰ্য্য তন্ত্রেরও অনেক পুস্তক লিখিয়াছিলেন • নাগাৰ্জ্জুন খ্ৰীষ্টায় দ্বিতীয় শতকের মধ্যভাগে দক্ষিণ কোশল (ছত্তিশগড়ে) আবিহুত হইয়াছিলেন । তিনি অতি মহান দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক ছিলেন । ভারতীয় দর্শন, চিকিৎস ও অঙ্কান্ত শাস্ত্রে তিনি অনেক নূতন বিচার ও তথ্যের প্রচলন করেন । তিনি মহাষানের প্রবর্তক ।