পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*SR নাথ তীর্থস্বামী ফুলাবধৌত নামে খ্যাত হয়েন, তিনি যদিও রাজার সন্নিধানে ছায়াবৎ অতুগত ছিলেন, কিন্তু তিনি তন্ত্রোক্ত সাধন বামাচারে রত ছিলেন, বেদান্ত প্রতিপাদ্য ব্ৰহ্মজ্ঞান অনুশীলনে তাহার নিষ্ঠ মাত্র ছিল না । এদেশীয় ব্ৰাহ্মণ পণ্ডিতদিগের মধ্যে শ্ৰীযুক্ত রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ তাহার সম্যক অনুবর্তী ছিলেন কিন্তু লোকভয় প্রযুক্ত তিনিও সৰ্ব্বদা স্বমতামুগত ব্যবহার করিতে সমর্থ হইতেন না। সহমরণ নিবারণের ব্যবস্থা প্রচার হইলে তাহ রহিত করিবার জন্য প্ৰবৰ্ত্তক পক্ষর রাজবিচারালয়ে যে আবেদন পত্র প্রদান করিয়াছিলেন, তাহাতে বিদ্যাবাগীশ লোকভয়ে স্বনাম স্বাক্ষর করিয়াছিলেন, ইহাতে রাজা রামমোহন রায় তাহার প্রতি বিরাগ প্রকাশ করেন। ইতিমধ্যে ১৭৩৯ শকে রাজার ভ্রাতু-পুত্র তাহার বিরুদ্ধে স্থপ্রীমকোর্ট বিচারালয়ে অভিযোগ করেন, ইহাতে তিনি প্রায় তিন বৎসর পর্য্যস্ত বিব্রত থাকাতে জ্ঞানচর্চা জষ্ঠ তাহার তিল মাত্র অবকাশ ছিল না, আত্মীয় সভা, পৰ্য্যস্ত আর হইত না । পরস্তু তিনি সেই অন্যায় অভিযোগ হইতে মুক্ত হইয়া পুনৰ্ব্বার সভা আরম্ভ করিলেন। রাজার কলিকাতাস্থ ভবনে সভারম্ভ হইলে পর প্রথমত: ঐযুক্ত বৃন্দাবনচন্দ্র মিত্রের গৃহে এবং তদনস্তর ভূকৈলাসে শ্ৰীযুক্ত রাজা কালীশঙ্কর ঘোষালের বাটতে এক একবার ব্রাহ্মসমাজ হয়। ১৭৪১ শকের পৌষ মাসে শ্ৰীযুক্ত বেহারীলাল চৌবে আপনার তুলাবাজারের বাটতে ব্রাহ্মসমাজ আহবান করেন তাহাতে শ্ৰীযুক্ত তারিণীচরণ মিত্র, রাজা রাধাকান্ত দেব, রাজা রামমোহন রায়, রঘুরাম শিরোমণি, হরনাথ তর্কভূষণ এবং সুব্রহ্মণ্য শাস্ত্রী প্রভৃতি অনেক ধনবান ও জ্ঞানবান ব্যক্তিকে নিমন্ত্ৰণ করিয়াছিলেন । তথায় স্বত্রহ্মণ্য শাস্ত্রী এই বিচার উত্থাপন করেন যে বঙ্গদেশে বেদ পাঠ নাই ও ব্রাহ্মণও নাই, সভাস্থ তাবৎ ব্রাহ্মণ পণ্ডিত নিরুত্তর রহিলেন, কেবল রাজা রামমোহন রায় একাকী বহু বিচারাস্তে শাস্ত্রীকে নিরস্ত করিলেন । ইহার পরে রাজার যত্ন দ্বারা পৌত্তলিকদিগের বিরুদ্ধে গ্রন্থ সকল প্রকাশ হওয়াতে উত্তরোত্তর দেশস্থ লোকদিগের শক্রতা বৃদ্ধিই হইতে লাগিল, এই সময়ে আত্মীয় সভাও ভঙ্গ হইয়াছিল, কিন্তু রাজার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ও প্রগাঢ় ব্রহ্মনিষ্ঠ কিঞ্চিম্মাত্র বিচল হয় নাই ; তিনি নিয়ত সন্ধ্যাকালে বিশেষরূপে ঈশ্বরের আরাধনা প্রবণসী ৷ ్సNegve করিতেন। অনন্তর ১৭৪৪ শকের ২৩ মাথে যুক্ত উমানন্দন ঠাকুর তাহার বিরোধে পাষণ্ডপীড়ন নামে যে গ্রন্থ প্রকাশ করেন, তাহার উত্তর স্বরূপ পথ্য প্রদান গ্রন্থ তিনি ১৭৪৫ শকের ২৫ পৌষ প্রকাশ করিলেন । খ্ৰীষ্টানদিগের সহিত বিস্তর বাদামুবাদ হয়, তাহাতে তিনি খ্ৰীষ্টান শাস্ত্র হইতেই নিম্পন্ন করেন যে এক অদ্বিতীয় জ্ঞানস্বরূপ পরমেশ্বরের উপাসনাই সত্য ধৰ্ম্ম, এবং তদনুসারে প্রোটেস্টণ্ট মিশনরী শ্ৰীযুক্ত উইলিয়েম এ্যাডাম সাহেবকে সেই ধৰ্ম্মাবলম্বনে প্রবৃত্ত করেন । এই এ্যাডাম সাহেব ১৭৪৯ শকে বাঙ্গাল হরকরা নামক ইংরাজি সম্বাদ পত্রের কাযালয়ের উপরিভাগে সপ্তাহ মধ্যে এক দিবস সায়ংকালে ধৰ্ম্মোপদেশ করিতেন, তাহাতে বাঙ্গালির মধ্যে শ্ৰীযুক্ত রাজ রামমোহন রায়, তাহার ভাগিনেয় পুল্ল ও অন্যন্ত কেই দূরস্ত কুটুম্ব এবং প্রযুক্ত তারাচাঁদ চক্রবত্তী ও চন্দ্রশেখর দেব গমন করিতেন । এক দিবস রাজ সেই স্তান হইতে প্রত্যাগমন করিতেছিলেন, পথিমধ্যে শ্রযুক্ত চন্দ্রশেখর দেব ও তারাচাঁদ চক্রবর্তী তাহাকে কহিলেন যে বিদেশীয় লোকের ধৰ্ম্ম যাজন গুহে যাইয়। অামারদিগের উপদেশ শুনিতে হয়, অামারদিগের এমত কোন সাধারণ স্থান নাই যে তথায় বেদ অধ্যয়ন বা অন্য প্রকার পরমার্থ প্রসঙ্গ হয়, ইহা অতি অমুখের কারণ। এই মহৎ প্রস্তাবত সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ স্থাপনের সূত্র হইল । রাজা ইহাতে সম্মতি প্রকাশ করিলেন এবং স্তির করিলেন যে শ্রযুক্ত দ্বারিকানাথ ঠাকুর ও কালীনাথ রায়ের সহিত সাক্ষাৎ হইলেই এ বিষয় তাহারদিগের গোচর করিয়া ধার্য্য করিবেন । তদনন্তর এ বিষয়ে তাহারদিগের পরামর্শ সিদ্ধ হইল । শ্ৰীযুক্ত দ্বারিকানাথ ঠাকুর, প্রসন্নকুমার ঠাকুর, কালীনাথ রায় ও মথুরানাথ মল্লিক এ বিষয়ে সাহায্য করিতে স্বীকার করিলেন। রাজা ব্রাহ্ম সমাজ স্থাপনের প্রতি অত্যন্ত সত্বর ছিলেন, এবং অবিলম্বে শিমুলিয়াস্থিত শ্ৰীযুক্ত শিবনারায়ণ সরকারের বাটার দক্ষিণ যে এক খণ্ড ভূমি ছিল, তাহার মূল্য স্থির করিবার জন্য শ্ৰীযুক্ত চন্দ্রশেখর দেবকে জিজ্ঞাসা করিলেন। পরস্তু ঐ স্থান নির্দিষ্ট না হওয়াতে ১৭৫০ শকে ভাদ্র মাসে যোড়াসাকোস্থিত শ্ৰীযুক্ত কমল বস্থর বাটতে ব্ৰাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠিত হইল। তৎকালে প্রতি শনিবার সায়ংকালে সমাজ হইত, তাহাতে প্রথমতঃ দুই জন তৈলঙ্গি ব্রাহ্মণ বেদ উচ্চারণ