পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RSశ్రీ লীলা বলল— ঐ যে শুনলে ভাই, দুগগা— —দুর্গ নয়, রাণী দুর্গাবতী বলুন । মিলিটারী রকমসকম দেখে সেটা আন্দাজ হয়েছে । কিন্তু জিজ্ঞান্স হচ্ছে, এই খুকী দুর্গাবতীটি তোমার কে হন, বৌদিদি ? লীলা বলবার আগেই নীরদ জবাব দিল—উনি ওঁর বোন। কিন্তু তুমি হতভাগ কেবল ওঁর মিলিটারী হুলের ঘা খেয়েই গেলে.মধু পেলে না— স্বধানাথ বাধা দিয়ে বলল- সে কি কথা, দাদা,—খুবই পাচ্ছি। এ-বাড়িতে পা দেওয়া থেকেই। ওঁর কণ্ঠ সত্যিই মধুময় । —ঠাট। । ওরে ইডিয়ট, জান না ত ক্ষমতা । গানবাজনায় মেডেল পেয়েছে । কি গলা, কি রকম হাত মিষ্টি ! যাও ত দিদি ঐ টুলের উপর। মুখাটার মাথা ঘুরিয়ে দাও— দেওয়াল ঘেষে দামী অর্গান। পাড়াগ হ'লেও এ-ঘরে ও-ঘরে অনেক কিছু সৌধীন আসবাব সাজানো। আশ্চৰ্য্য ! এত কথাম্বরের পরও নিরাপত্তিতে গিয়ে দুর্গ বাজনার সামনে বসল। সুধানাথ মনে মনে হাসল—বাহাদুরী দেথাবার লোভ এদের এমনই বটে। তার পর দুর্গা প্রবলবেগে অর্গানের চাবি টিপে চলল—যেন ঝড় উঠেছে, কলোচ্ছাসে বন্য জেগেছে । লীলার বাচোয়, সে ইতিমধ্যে কখন রান্নাঘরে ঢুকে দরজা দিয়েছে । এদিকে দুজন অভাগ্য শ্রোতার কান ঝ ঝণ করতে লাগল ; মহাপ্রলয়ের সময় মহামারী, প্লাবন, কল্কিঅবতার, বেগুনতলার হাট প্রভৃতি সকল উপদ্রবের সঙ্গে সঙ্গে সম্ভবতঃ এই রকম স্বরবৃষ্টিও সরু হবে । পুরো আধ ঘণ্ট ধরে চলল এই রকম তুমুল বাদ্যভাণ্ড। বাপ রে বাপ ! মেয়েটার আঙুলেও ব্যথা ধরে ন-- অবশেষে স্বধানাথ নীরদের কানে মুখ নিয়ে চেচিয়ে প্রাণপণে শ্রীতিগম্য ক'রে বলল– দাদা, স্বীকার করছি— এক-শ বার স্বীকার করছি, ক্ষমতা আছেই। থামতে বলে। মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছেনই সত্যি, ঘুরে পড়বার জোগাড়।. নীরদ বলল-পরিত্রাহি দেবি, আপাতত: স্থিরো ভব। যথেষ্ট হয়েছে। বিশাল চোখ ফুটে তাদের দিকে স্থাপন করে ঠিক সেই মুহূৰ্ত্তেই দুর্গ বাজনা বন্ধ করল। ভ্ৰকুঞ্চিত ক'রে বলল— এ রকম হবে আমারই অনুমান করা উচিত ছিল । প্রবাসী >い之8● —কি ? —আমি স্বেচ্ছায় বাজাতে বসি নি, আপনারাই ডেকে বসিয়েছেন। পাড়াগায়ের লোক আপনার জামাইবাবু, কথায় কথায় লগুড় ধরা অভ্যাস। মেয়েদের মৰ্য্যাদা বুঝবেন কি ? দুর্গ পুনশ্চ একবার চাবিগুলির উপর দিয়ে দ্রুত আঙল বুলিয়ে গেল । বলল-এইবার গান হবে--ডেকে বসিয়েছেন, মনে থাকে যেন । শেষ না হ'লে উঠতে পারবেন না। গানও লাগবে ভাল—জানেন ত মেডেল পেয়েছি--- সুধানাথ বলল--আপনি বলে দিন দাদা, মেডেল পেলে থামেন যদি, তাতে রাজী আছি । গাইবার দরকার নেই-- কিন্তু নাছোড়বান্দা ভবী কিছুতেই ভোলবার নয়, গল| সাধ আরম্ভ হয়ে গেল । সহসা যেন ঐশী-প্রেরিত হয়ে লীল। এসে উদ্ধার করল । বলল—জায়গা হয়েছে, এস তোমরা--- ঘুম থেকে উঠতে সুধানাথের বড় বেলা হয়ে গেল। মীরদ তখন বৈঠকখানায় । সেখানে গিয়ে দেখে, মামলার কতকগুলো দলিলপত্র সামনে রেখে চেয়ারে বসে সে-ও ঘুমচ্ছে । কাধে হাত রাখতেই সচকিত হয়ে জেগে নীরদ হেসে ফেলল । মৃধানাথ বলল—-দাদী, মক্কেলের টাকা থেয়ে এই রকম ভাবে কাজ করছ ? নীরদ বলল-আমার দোষ নেই ভাই, যত দোষ এই কানফোড়া নথিগুলোর । পড়তে গেলেই ঘুম পায়। এখন আমি ঘুমচ্ছি—আবার কাছারী গিয়ে ধখন পড়তে আরম্ভ করব, হাকিমেরও ঘুম পাবে। যুধানাথ বলল—যাই হোক, আমার কাগজগুলো আনি এইবার— --হবে, হবে । চা হয়ে যাক আগে। ওগো দেবীযুগল, কৃপা করে আবিভূত হও । আইন-নঞ্জীর-নথিপত্র-ভাব দেখলে মনে হয়, নীরদ বাঘের মত ভয় করে, পাশ কাটাতে পারলেই বেঁচে যায়। অথচ সে পশারওয়াল ভাল উকীল । যেমন লোকে যাত্রথিয়েটার দেখে, তাস থেলে, গালগল্প করে--আদালতে গিয়ে মামল-মোকদ্দমা চালানো তার বেশী সে মনে করে না কিছু ।