২২০ তার পর হেসে বলল—না বড্ড রেগেছে, আজকে আর হবে না দেখছি— স্বধানাথ জিজ্ঞাসা করল—কোর্টের খবর কি ? জিব কেটে নীরদ বলল—বিলকুল ভুলে গেছি, ভাই— স্বধানাথ বলল—ষা-হয় হোক গে। আমার থাকবার জো নেই—অামি চলে যাব কাল— বিপন্নস্বরে নীরদ বলল—এই নাও। এবার বুঝি তোমার পালা। সমস্ত ঠিকঠাক হয়ে যাবে, একটা দিন ক্ষমা দে, ভাই । পরের দিন নীরদ যত্ন ক'রে কাগজপত্র সব পড়ল, অনেক ক্ষণ ভাবল, তিন-চার ছিলিম তামাক পুড়ল, তার পর ধীরে ধীরে বাড়ির ভিতর চলে গেল। সুধানাথ বাইরের ঘরে একটি চেয়ারে স্থাণু হয়ে বসে আছে, এবং জানলা দিয়ে মনেযোগের সঙ্গে স্বভাবের শোভা দেখছে । আরও অনেক পরে নীরদ এসে বলল—ব্যাপার সঙ্গীন। খুব ভরসা দিতে পারি নে ভাই। অন্তমনস্ক স্বধানাথ চমকে উঠে জিজ্ঞাসা করল—সদরের কথা বলছ ? —সদর, অন্দর দুই-ই। অবহেলা ক'রে বিষম জট পাকিয়ে ফেলেছ। হার হয় কি জিত হয়, কোট থেকে নাআসা অবধি বলা যাচ্ছে না কিছু । নীরদ বেরিয়ে যাবার কিছু পরেই স্থধানাথের অস্বাভাবিক চীৎকার শোনা গেল—বৌদি ! বৌদি ! যে যেখানে ছিল,—ছুটে এসে দেখে, দালানের বিছানায় সে এলিয়ে পড়ে আছে। পায়ের এক জায়গায় রুমাল দিয়ে বাধা । লীলার দিকে চেয়ে একটু স্নান হেসে স্থধানাথ বলল--- দেখছ কি বৌদি, ম-মনসা ঠুকে দিয়েছেন। চললাম এবার | ব্যাকুল হয়ে লীলা কেঁদেই ফেলল। দুর্গারও শুষ্ক শঙ্কাচ্ছন্ন মুখ। সে এগিয়ে ক্ষতস্থান দেখতে লাগল। কালীপদ ছুটল যোগীন-ওঝার বাড়ি। খানিক তীক্ষু চোখে দেখে দুর্গ একটু সরে এসে দাড়াল। মুখের মেঘ তখন কেটেছে, দু-চোখ উজ্জল হয়ে উঠেছে। লীলা প্রশ্ন করল—কি ? প্রৰণসী ১৩৪৩ দুর্গ বলল—বেশী কিছু নয়, আমি পারব, যোগীন-ওঝার দরকার হবে না । রোগী একদৃষ্টে লক্ষ্য করছিল। সে বলল—আপনি পারবেন কি রকম ? ডাক্তারীও জানা আছে নাকি ? লীলা বলল—কোথায় ? ফাষ্ট.এড. শিখবার সময় বুঝি একটু-আধটু— না, না—সে কোন কাজের কথা নয়। কালীপদ ফিরে এলে সদরে পাঠাচ্ছি...ভাল ডাক্তার নিয়ে উনি চলে আসুন । ভাল মাচুষ বেড়াতে এসে কি যে হ’ল—আমার ত গা কঁপিছে... দুর্গ এবার খিল খিল ক'রে হেসে উঠল ---কিছু ভাবনা নেই দিদি, সদরে ছুটোছুটির দরকার নেই। আমার কথা শোন । যে সাপে কামড়েছে, দাগ দেখে বুঝছি, তার ফণা নেই। স্বধানাথও সমর্থন করল--না, না, সদরের ডাক্তার এসে কি করবে ? অামারও যেন মনে হচ্ছে, ও টোড়া সাপ । সেই রকমই দেখেছি । ইতিমধ্যে কালীপদ যোগীন-ওঝাকে নিয়ে এসেছে। দুগী ছকুমের স্বরে বলল—মস্তোর-তস্তোর তোমার পরে হবে, ওঝা-মশাই । বঁধিল মোটে একটা দেওয়া হয়েছে, ক’লে আরও দু-তিনটা দাও । আমি সাপের ডাক্তারী পাস ক’রে এসেছি—বুঝলে ? ওঝ সসন্ত্রমে দুর্গার দিকে একবার তাকিয়ে তাড়াতাড়ি বঁধেন দিতে প্রবৃত্ত হ’ল। দুর্গা ঘাড় নাড়ে—ও ঠিক হয় নি। আরও–আরও জোরে—। যোগীন আর কালীপদ প্রাণপণ বলে দড়ি কষতে স্বরু করে । আৰ্ত্তকণ্ঠে স্থধানাথ বলল—বৌদি, সাপের বিষে প্রাণ না-ও যদি যেত, বাধনের চোটে যাবে নিশ্চয় । লীলা কিন্তু এবার এদের দলে । বলল--বিষ ওপরে না ওঠে, সেটা আগে দেখতে হবে। হ্যা রে দুগ্গা, এবার হয়েছে—না ? তুমি চোখ বুজে শুয়ে থাক, ভাই— দুর্গ পরীক্ষা করে খুশী মুখে ঘাড় নাড়ল । তার পর যোগীনকে বলল—এবার না-হয় তোমার চিকিৎসাই চলুক, ওঝা-মশাই। তার পর দরকার হ'লে আমি পরেই দেখব । যোগীন অনেকক্ষণ মন্ত্র পড়লে, অনেকগুলো শিকড় এনে স্বধার পারে বুলালে, শেষে ক্ষতের মুখে মুখ দিয়ে খানিকট
পাতা:প্রবাসী (ষট্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২২৬
অবয়ব