পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀՑՎ, সময়ে, বিয়ের আগে থাকতেই, পুরুষ-মানুষের বিদ্যের ড়ে কতকটা বুঝে না রাখতে পারলে, কোন আধুনিক সতী কি এরকম ক'রে ভাবতে পারবেন, না মাথা উচু রেখে মনের ভাব বলতে পারবেন ? এতক্ষণ আমরা সংস্কৃত বা উৎকৃষ্ট মানুষ ও সমাজের কথা ভেবে চলেছি। এ কথাও ভুললে চলবে না যে, সমাজ যতই সংস্কৃত হোক্‌ না কেন, তার মধ্যে মানুষের আদিম প্রাকৃত ভাব মাঝে মাঝে ঠেলে উঠবার চেষ্টা করবে, আর যেখানেই উঠবে সেখানে উৎপাত বাধাবে। সমাজ বা নারী সম্বন্ধে যার যে আদর্শই থাকৃ, অস্থানে রিপুরুপে কামের আবির্ভাব কেউই পছন্দ করেন না। তা বলে করাই বা কি ? বিশ্বামিত্র পরাশর প্রভৃতি ঋষিরাও ত সে রিপুর হাত এড়াতে পারেন নি। অস্থানকে যথাস্থানে, রিপুকে মিত্রে, পরিণত করাই নরোত্তমের কাজ, সে অভিপ্রায়ে এক-পক্ষে ব্যক্তিগত চিত্তশুদ্ধির, অপর পক্ষে সমাজে চলিত কু-প্রথা বদলের, কি উপায় করা যেতে পারে, তার আলোচনা আজকের বৈঠকে প্রাসঙ্গিক হবে না। তবে সহ-শিক্ষালয়ের পক্ষে এইটুকু বলা যায় যে, যে জায়গায় সারাক্ষণ সদ্ভাব সদালোচনা দিয়ে সংস্কৃতির চেষ্টা চলছে, সেখানে প্রাকত বদ্‌-ভাব উকি-বুকি মারতে পারে, কিন্তু তেড়ে ঢুকে শিং মারবার স্বযোগ সহজে পাবে না । বরং স্থাবরপন্থীর ঘরে-ঘরে যে-সব শিক্ষা চলে, তাতে কাম-রিপু বিলক্ষণ প্রশ্রয় পায়। সারিকতার ঠেলায় যেমন, কি খাব, কোথায় থাব, কার হাতে খাব, কি খাব-না, সারা দিনমান পেটেরই ভাবনা ; তেমনি সতীত্বের তাড়ায়, সময় নেই অসময় নেই, স্ত্রীলোকের স্ত্রীত্বের উপর যত ঝোক । একদিকেত মেয়েটাকে সকাল-সন্ধে শশব্যস্ত রাখা হয়—“ওদিকে যাসনি, সেদিকে তাকাস নি, মুখ ঢাক, গা ঢাকা দে," ইত্যাদি --কিসের এত ভয় ? সোঞ্জ কথায় বলতে গেলে, পাছে হতভাগা পুরুষটার মনের বিকার হয়ে অনর্থ ঘটে । অন্য দিকে মেয়েকে সাজাও-গোজাও, আলতা লাগাও, রূপটান মাথাও, নইলে বিয়ের আগে পাত্রের মন টানতে পারবে না, বিয়ের পর স্বামীর মম রাখতে পারবে না। মনের গয়নার কথা কেউ কয় না,-ভাববার দরকারই বোঝে না । এ দলের মানসপটে আঁকা পুরুষ-মনের চেহারাথন দেখে বলিহারি যাই ! প্রবাসী SNS8\○ সে যাই হোক, ফলে দাড়ায় এই যে, মেয়ে বেচারীকে ছেলেবেল থেকে বেশ করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়—সে কামিনী, কামিনী ভাবে চলাফেরা ছাড়া তার গতি নেই। শেষে, পুরস্কারের বেলায়, তাকে কাঞ্চনের সঙ্গে এক কোঠায় ফেলে দিয়ে, ধৰ্ম্মচারীকে তাকে বিষের মত ভরাতে সাবধান কর হয়! আরও তাজব এই যে, কোন কোন সন্ন্যাসী-মহারাজ, যাদের স্ত্রীপুরুষ-ভেদের উপর-তলায় বসবাস করার কথা, র্তারাও এই উপদেশ দেন। প্রকৃতির আদ্যাশক্তিকে অপমান করলে অন্ধকার লোকে তলিয়ে যাবার যে ভয়ের কথা উপনিষদে বলা হয়েছে, তার খবর কি এর রাখেন না, মা সামাজিক বঁধিগতের বিরুদ্ধে কথা কইতে কুষ্ঠিত হন ? হায় রে আর্য্যাবৰ্ত্ত । অবশেষে তোমার এই দশ ? তোমার পবিত্র সীমানার মধ্যেও নর-নারীকে শেখান হয় না যে, পুংলিঙ্গ-স্ত্রীলিঙ্গ ভেদে তাদের জীবনের অর্থের এমন কিছু হেরফের করে না, যথাযথ বংশরক্ষা-কাৰ্য্যেই তার অবসান, তাও অর্থনীতি স্বাস্থ্যনীতির নিয়মে সংযত না করলে বিপদ । মহামূল্য মানবজীবনের বাকী অধিকাংশ সম্বন্ধে তাদের মনে রাখা উচিত,-কিন্তু সে কথা কোন অভিভাবকে স্মরণ করিয়ে দেয় ? যে, তারা উভয়ই নারায়ণের তুল্য-অংশ, সুতরাং সমশিক্ষ-দ্বারা সম-দক্ষতা ও সম-অধিকার অর্জন করে, নারায়ণ যে মহোৎসবের আয়োজন করেছেন সেটা সুসম্পন্ন করবার চেষ্টাতেই তাদের সার্থকতা ও পরমানন্দ । এই উদ্দেশু। সাধনের একটা উপায় মনে ক’রেই আমি উপযুক্ত অাদর্শ সামনে রেখে সহশিক্ষার পক্ষপাতী | আজকের পালাট সাঙ্গ করবার আগে আমার সেই কাল্পনিক স্থাবরপন্থীর সঙ্গে ঝগড়াটা মিটিয়ে নিতে চাই । ভেবে দেখছি, আদশ নিয়ে আমাদের মনান্তর আসলে হয় নি, আলাদা রকমে মান্তষ হওয়ায় মতান্তর ঘটেছে মাত্র। বিগড়েযাওয়া বা বিগড়ে-দেওয়াই স্ত্রী-স্বভাবের লক্ষণ, এ ধারণার মধ্যে যে জীবন কাটায়, সে মেয়েদের গুদামজাত ক’রে সাবধানে পাহারা দেবার ইচ্ছে না ক’রেই থাকতে পারে না । নারীজাতিকে নিজেদের মতই মাতুষ-জ্ঞানে তাদের সঙ্গে কারবার না করতে পেরে সে কি হারিয়েছে, নরনারীর সমকক্ষ মেল-মেশায় কেমনতর শক্তি-লাভ আনন্দ-লাভ হয়, সে ব্যক্তি তার কি বা জানবে ?