ミ.3b" আমি কোন জমিদার-তনয়। মোটেই তাহা নয়। বাবা সৌধীন লোক ছিলেন এবং সেই জন্যই সম্ভবতঃ কিছু রাখিয়া যাইতে পারেন নাই। গড়গড় বাধা দিয়া গোটা দশেক টাকা মিলিল। হাতে আরও গোট-দশেক ছিল। সুতরাং বাহির হইয় পড়িলাম। ૨ এক দুর-সম্পর্কের আত্মীয়ের বাসায় আসিয়া আশ্রয় লইলাম। সম্পর্কটা এতই জটিল যে বিকাশ বাবু আমার ঠিক কি তাহ নির্ণয় করা আমার পক্ষে দুঃসাধ্য হইল। আমার মায়ের_বোল-বির খুড়-শাশুড়ীর ভাইপোর পিসতুতো শালার আপন ভায়রাভাই এই বিকাশ বাবু। রীতিমত অঙ্ক না কষিলে ঠিক সম্পর্কটি বাহির করা শক্ত। অত হাঙ্গামার মধ্যে ন গিয়া প্রথম-সাক্ষাতেই তাঁহাকে বলিয়া বসিলাম, “কি ভায়, চিনতে পারছ।” ভায়া নিশ্চয়ই আমাকে চিনিতে পারেন নাই। তথাপি বলিলেন, “অনেক দিন পরে কি না ! তাই একটু—মনে- বঁাশবেড়ে থেকে আসছেন বুঝি ?” বুঝিলাম বংশবাটিকাতেও ইহাদের বংশের কেত আছেন। বলিলাম, “না: চিনতে পার নি দেখছি। চেনবার কথাও নয়। আসছি আমি বঁাকুড়া থেকে । মানে বঁকুড়ারও ইন্টিরিয়ারে থাকি আমরা । আমি হলাম গিয়ে তোমাদের” বলিয়া মায়ের নিকট হইতে সম্পর্কের যে ফরমুলাটা মুখস্ত করিয়া আসিয়াছিলাম তাত বলিয়া গেলাম এবং শেষকালে বলিলাম, “তুমি হ’লে গিয়ে আমাদের হেমস্তের ভায়রাভাই । " আপন লোক সব ক'লকাতার গলি-ঘুজিতে পড়ে আছ—দেখাশোনা আর হয়ে ওঠে ন। এবার মনে করলাম যাই একটু বিকাশ-ভায়ার সঙ্গে দেখা ক’রে আসি।” কুলীর মস্তকস্তিত আমার বিবর্ণ ট্রাঙ্ক এবং মলিন বিছানাপত্রের দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া বিকাশ বাবু বলিলেন, “থাকৃবেন নাকি এখানে ?” “বেশী দিল নয়—দু-চার দিন !” “દ્ધ I” ফুলী বিছানাপত্র নামাইয়া পয়সা লইয়া চলিয়া গেল । প্রবাসী ১৯৩৪৩ একটু পরে দেখিলাম বিকাশভায়াও খাওয়া-দাওয় সারিয়া পোষাক পরিয়া বাহির হইয়া গেলেন। এক চুপ করিয়া বসিয়া রহিলাম। স্থৈৰ্য্য অবশ্য বেশী ক্ষণ টিকিল না । নানা আকৃতির একপাল ছেলে-মেয়ে আসিয়া আমাকে ঘিরিয়া ধরিল। কেহ বলে, “লজেঞ্জুস দাও!” কেহ বলে, “ঘুড়ি চাই’ ! কেহ কিছু না বলিয় পকেটে হাত ঢুকাইয়া দিল। আমার কর্ণমূলে একটি অচিল ছিল—তাহা লইয় কেহ কেহ ভারি খুশী হইয়া উঠিল। এত অল্প সময়ের মধ্যে ছেলেরাই শুধু জমাইতে পারে! ...বাহির হইয় পড়িতে হইল । Vද් তিন দিন কাটিল । কলিকাতায় প্রায় দশ বৎসর পু}ে আসিয়াছিলাম— অধ্যয়ন উপলক্ষে। এখন ঘুরিয়া দেখিলাম আমার পরিচিত এক জনও নাই । সহপাঠিগণ কে কোথায় চলিয়া গিয়াছে । অধ্যাপকের সব নুতন লোক । যে মেসে পূৰ্ব্বে থাকিতাম তাই এখন ক্লিনিং" আমাকে কেহ চিনিল না—আমিও কাহাকেও চিনিলাম না । ঘূরিয়া ফিরিয়া পুনরায় বিকাশভয়ার বাসায় ফিরিয়া আসিতে হঠল । উপযু পরি তিন দিন এই রূপে কাটিল । বিকাশ বাবুর সহিত একটু দেখা হয় সকালে । সমস্ত সকালটা তিনি তাড়াহুড়া করিতে থাকেন, যেন ‘লেট না হক্টয়া যায়। নিজেই গামছা লষ্টয়া সকালে বাহির হইয়া যান--- বাজার করিয়া ব্যস্ত-সমস্ত ভাবে ফিরিয়া আসেন । বাজারট রাখিয়াই তেল মাখিতে বসিয়া যান। কোন রকমে গায়ে মাথায় তেল চাপডাঠয়৷ কলতলায় স্নান করিতে করিতেই গৃহিণীকে হুকুম দেন, “ভাত বাড়। ওগো শুনছ—লেট হয়ে যাবে—পৌনে নটা হ’ল-যেতেও ত আবার খানিক ক্ষণ লাগবে-—” তাহার পরই উৰ্দ্ধশ্বাসে " নাকে-মুথে গুজিয়া তাড়াতাড়ি বাহির হইয় পড়েন। ফেরেন কোন দিন রাত্রি দশট, কোন দিম এগারটা । সুতরাং বিকাশ বাবুর সহিত আলাপ বেশী ক্ষণ জমাইবার অবসরই পাই না। ভাবি“কাজের মানুষ !” বিকাশভয়াকে দেখিয়া হিংস হয়। কেমন সুন্দর রোজ আপিসে যায়, সারাদিন কাজকৰ্ম্মে ব্যস্ত থাকে-রাত্রে আরামে ঘুমায়। বিকাশভায়ার “ডাষ্টং হইয়াছে ।
পাতা:প্রবাসী (ষট্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৫৮
অবয়ব