পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবনায়ন শ্ৰীমণীন্দ্রলাল বসু (רט ) ভদ্রের রাত্রির আকাশে ছিন্ন কৃষ্ণমেঘদলের আনাগোনার অন্ত নাই। নবমীর চন্দ্র এই চঞ্চল মেঘরাজ্যে ঝঙ্কার সমুদ্রে রূপালী তরীর মত বার-বার ডুবিতেছে, উঠিতেছে, পথ হারাইতেছে । উদ্ধে আকাশে বায়ুস্রোত প্রবল কিন্তু নিম্নে ধরণীতে একটুও বাতাস নাই । গাছগুলি কালো ছায়ার মত স্থির দাড়াইয়া। বিছানায় শুষ্টয় অরুণের ঘুম আসে না। চোখ জাল করে, মাথা দপদপ, করে। পঙ্কের কাজ-ওঠা প্রাচীন বিবর্ণ দেওয়ালে চাদের পাণ্ডুর আলো মাঝে মাঝে ঝিকিমিকি করিয়া ওঠে । কালো ছায়ামূৰ্ত্তির দল নাচিতে নাচিতে চলিয়া ११ ।। ঘুম আসে না । মায়ের পুরাতন কারুকাৰ্য্যময় কালে বৃহৎ খাটের এক পাশ হইতে অপর পাশে সে গড়াইয়া যায়, বাব-বার পাশ বদল করে । ধুম আসে না । অরুণ ব্যথিত হৃদয়ে প্রার্থনা করে, ঘুম দাও, বিধাতা ধুম দাও। মাতার বৃহৎ অয়েল-পেটিঙের দিকে করুণ নয়নে চাহিয়া থাকে। চোখ বুজিয়া স্থির হইয়া শোয়, ঘুম ICP | | পুরাতন ফ্রেঞ্চ ঘড়িটি আবার বিকল, বন্ধ হইয়া গিয়াছে। রাত বোধ হয় দুইটা হইবে । চারিদিক গভীর শুদ্ধ, প্রাণহীন । তপ্ত শয্যা ত্যাগ করিয়া অরুণ ওঠে। কুঞ্জা হইতে জল গড়াইয় খায়। ইলেকট্রিক আলো জালাইয়৷ কিছু ক্ষণ ইজিচোরে চুপ করিয়া বসে। ঘড়িগুলি দেখে। সব ড়িই বন্ধ। তাহার মাথায় ঘড়ির চাকার মত চিন্তার }ারা কুণ্ডলী পাকাইয়। ঘুরিতেছে। এই চিন্তার ঘূর্ণাবওঁ # কিছুতেই থামে না। সে কিছু ভাবিতে চায় না। V3 --X 3

দম-দেওয়া কলের চাকার মত চিন্তাগুলি মাথায় এমন ঘোরে কেন ? আলো নিবাইয় অরুণ ঘুমাইতে চেষ্টা করিল। চেষ্টা করিলেই ঘুমান যায় না। ইচ্ছা করিলেই ভোলা যায় না ; চিন্তার স্রোত ত নিজের ইচ্ছায় থামান যায় না। সে যেন কোন অদৃশ্ব শক্তির হস্তের ক্রীড়নক । সে শক্তি তাহার হেমনে এত বেদন দিয়া কি অভিপ্রায় পূর্ণ করিতে চায় ? অরুণ ঘর হইতে বাহির হইয়া চণ্ডীমণ্ডপের বারানায় আসিয়া দাড়াইল । যেন একটা ভূতের বাড়ি। অন্ধকারময় প্রাঙ্গণ রহস্যময় নয়, ভীতিপ্রদও নয়, প্রাণহীন অন্ধ বিবরের মত | ধীরে সে প্রতিমার ঘরের সম্মুখে আসিয়া দাড়াইল । ঘর তালাবন্ধ, ভিতরে কি মৃদু শস্ব হইতেছে, বোধ হয় ইদুরের দল ঘুরিতেছে। Hে ভুলিয়ু গিয়াছিল যে প্রতিমা এখন সিমলায়। এক মাস হইল অজয়ের সহিত প্রতিমার বিবাহ হইয়৷ গিয়াছে সিমলাতে। কাকার মৃত্যুর ঠিক পরেই প্রতিমার বিবাহ দেওয় অরুণের ইচ্ছা ছিল না । স্বর্ণময়ীও আপত্তি করিয়াছিলেন। কিন্তু হেমবাবু বিশেষ তাগাদ দিয়া চিঠি দিলেন। একদিন তিনি স্বর্ণময়ীকে ভয় দেখাইয়া বলিলেন—তোমার ছেলের যদি এখন বিয়ে না দাও তাহলে – স্বর্ণময়ী বাধা দিয়া বলিলেন,—আচ্ছ, তোমায় আর বলতে হবে না, আমি যতশীঘ্র সম্ভব ব্যবস্থা করছি। হেমবাবুর প্রথম যৌবনের দু-একটি কীৰ্ত্তি র্তাহার মনে পড়িয়া গেল । প্রতিমাও বিবাহে বিশেষ উৎসাহিত । এ বৎসর তাহাকে আর পরীক্ষা দিতে হয় না। বি-এ পরীক্ষার ফল বাহির হইতেই, অজয়ের বিবাহ