বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

γ আশষণঢ় যে-সকল সাধারণ যন্ত্রপাতি বাহিরের সাহায্য ব্যতিরেকে সহজেই নিৰ্ম্মণ বা সংগ্রহ করা যায় তাহার সাহায্যে প্রতি পরিবারের লোকের স্বস্ব গৃহে লবণ সহজেই প্রস্তুত করিতে পারে। (তাৎপর্ব ) কঁথিতে স্থানীয় গৃহস্থের বাটতে কিরূপে লবণ প্রস্তুত হয় তাহ দেখিবার সুবিধা আমার ঘটিয়াছিল। এই লবণপ্রস্তুত প্রণালীকে সংক্ষেপে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়— ১। নোনা মাটি সংগ্রহ ; ২ । সেই নোনা মাটি হইতে পরিবক্ষত করিয়া তীব্র লবণাক্ত জল বহিস্করণ ; ৩। এই নোনা জলকে উনানে জাল দিয়া বা ফুটাইয়। লবণের দানা নিষ্কাশণ । কলিকাতার নিকটস্থ গ্রামবাসীরাও প্রায় এই ভাবেষ্ট লবণ প্রস্তুত করে । মলঙ্গীর সম্ভবতঃ এই ভাবেই লবণ প্রস্তুত করিত। চট্টগ্রাম বা সুন্দরবনের অধিবাসীরা এখনও নিকটস্থ বন হইতে কাঠ সংগ্ৰহ করিতে সমর্থ হইতেছে, কিন্তু সৰ্ব্বত্র সে সুবিধা নাই। অনেক স্থানে ঘুটে, কয়ল, তুয, খড় ব্যবহার করিতে হয় এবং সেই জন্য সে সমস্ত স্থানে খরচ একটু বেশী পড়িয়া যায়। মলঙ্গীর কাথি মহকুমায় সমুদ্রতীরবর্তী ধে “জলপাই” বনজঙ্গল হইতে জালানী কাঠ সংগ্ৰহ করিত সেই জলপাই-বন অনেক দিন হইল লুপ্ত হইয়াছে। সেই জন্য গৃহস্থর বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে কয়লাই ব্যবহার করিয়া থাকে । এইবার কিরূপে নোন মাটি সংগৃহীত হয় তাহার কথা বলিব। সাগর-উপকূলের নিকটস্থ নিম্নভূমি জোয়ারের সময় সমুদ্রের নেন৷ জলে প্রায়ই কিছু ক্ষণের জন্য প্লাবিত হইয়। যায়। ইহার ফলে ঐ সমস্ত স্থানের মাটি অতিশয় লবণাক্ত হইয় উঠে। কাথির উপকূলে বঙ্গোপসাগর অগভীর এবং অন্যান্য স্থান অপেক্ষ এখানে জল বেশী নোন—সেই জন্তই বোধ হয় হিজলীপ্রদেশে লবণ-প্রস্তুতির প্রসার বাড়িয়াছিল। সাধারণ জোয়ার অপেক্ষ কোটালের জোয়ার সমস্ত নিম্নভূমিটিকে অধিক লবণাক্ত করিয়া দিয়া যায়। এই ভূমি শুষ্ক হইলে, উপরকার নোনা মাটি একটি লোহার ছোট পাত দ্বারা চাচিয় স্থানে স্থানে ছোট ছোট পাহাড়ের আকারে জড়ো করিয়া ” রাখে। পরিক্রতীকরণ-নিকটেই সাধারণতঃ অল্প উচ্চ ভূমির উপর দুইটি গৰ্ত্ত ঘুড়িয়া এক-একটি ফিলটার-বেড়, ۲ -سس- 3۹ ংলার লবণ-শিল্পের পুনবিকাশ voማለ0: নিৰ্ম্মাণ করে। এগুলিকে গাড়ী বলে। প্রথমে প্রায় দুই ফুট গভীর এবং তিন ফুট ব্যাস একটি বৃত্তাকার খাদ খনন করিয় তাহার জমি পলিমাটি দিয়া সমতল ও মন্থণ করিয়া দেয়—তার পর উহার ভিতরে কতকগুলি সরু নালি কাটিয়া একটি ছিদ্রে সংযুক্ত করিয়া দেয় (চিত্র দ্রষ্টব্য )। এই নালি-কাট বেড়টির উপর চাচারী এবং কঞ্চি ও খড় চাপ৷ দিয়া এমনভাবে মাচার মত নিৰ্ম্মাণ করিয়া দেয় যাহাতে মাটি তলায় পড়িয়া নালিগুলিকে বদ্ধ না করে। এইরূপ ভাবে প্রস্তুত ফিল্টার-বেডের উপর নোনা মাটি নিক্ষেপ করিলে সমতল ভাবে ইহা উপর হইতে একটি অতি অগভীর ক্ষুদ্র পুষ্করিণীর মতই দেখায়—ভিতরে যে এত কারিগরি থাকে বুঝা যায় না। উপরিউক্ত ছিদ্রটির ঠিক নিম্নে নোনা জল পড়িবার জন্য একটি গৰ্ত্ত থাকে। গাড়ীগুলি বাহির হইতে অনেকট মাটির উনানের মত দেখায়। বড় গৰ্ত্তটিতে নেনিমাটি দিয় তাহার উপর সাদা জল ঢালিলে এই জল চুইয়া মাটির লবণভাগকে গলাইয় দেয় এবং সেই লবণ-মিশ্ৰিত জল নিমুস্থিত গর্ভটি পূর্ণ করে। গ্রামবাসীরা এই নোন জল ' কলসে পূর্ণ করিয়া নিজ নিজ গৃহে লইয়া যায়। এইরূপে মাটির লবণাংশ বহিষ্কৃত হইলে সেই মাটি তুলিয়া ফেলিয়া পুনরায় নূতন নোন। মাটি ভরিয়া দেওয়া হয়। এই নোনা জলের লবণ-ভাগ সামুদ্রিক জল অপেক্ষা অনেক পরিমাণে বেশী। সামুদ্রিক জলে সাধারণত: শতকরা দুই-তিন ভাগের বেশী লবণ থাকে না। কিন্তু বোম্ ( Beune ) হাইড্রোমিটার দিয়া দেখা গিয়াছে যে এই নোনা জলে শতকরা কুড়ি হইতে বাইশ পৰ্য্যস্ত লবণভাগ থাকে। লবণের সেচুরেশন si(Ti ( saturation point ) ৩০।৩৫—শতকরা ৩০|৩৫ ভাগের বেশী হইলেই লবণ নিজ হইতে পড়িতে থাকে—সেই অবস্থায় আনিবার জন্তই আগুনে ফুটানোর প্রয়োজন। শীতকালে যখন রৌদ্রতেজ প্রখর থাকে এবং সাগর-স্কুলের প্রচও হাওয়ার আর্দ্রত কমিয়া যায় তখন এই নোনা জল উন্মুক্ত অবস্থায় ফেলিয়া রাখিলে দুই তিন দিনের মধ্যে লবণের দানা পাওয়া যাইতে পারে। ইহা আমরা পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছি। স্থানীয় অধিবাসীরা এরূপ করে কি না জানি না । উপরিউক্ত উপায়ে নোনা জল (ব্রাইন) সংগ্ৰহ করিয়া যে যার