বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশষণটি আমাকে বলছিল তাই। বলছিল এটা কি ছোট্ট একট ছাই ইষ্টিশন-তুই প্যাসেঞ্জার ট্রেন এলেই হুড়মুড়িয়ে দেখতে ছুটিস, এ ত ভরি ট্রেন-ডাকগাড়ী আসত ত দেখতিস। তা একটা সে-রকম জায়গায় কি তোমার কাজ হয় না? একবার সাহেবকে ব’লে দেখ না।” ভবতোষ সাহেবকে বলত কি না জানা নেই কিন্তু ডাকগাড়ী দেখা আন্নাকালীর ভাগে এখনও হয়ে ওঠে নি। প্যাসেঞ্জার ট্রেন এলেই আম্নাকালী জানলার ধারে বসে বসে দেখে। ট্রেনে কত লোক, কত মেম, সাহেব, হিন্দুস্থানী, বাঙালী, কত দূরপথের যাত্রী সব ; তারা ক্ষণকালের জন্য আল্লার ঘরটির সামনে এসে দাড়ায়—ক্ষণকালের জন্য লোকজন, গোলমালে, আলোয় ডাকাডাকি হাকাইকিতে ঘুমস্ত স্থানটি যেন চকিত মুখরিত হয়ে ওঠে-আন্না চেয়ে চেয়ে দেখতে থাকে। যতক্ষণ না ট্রেনটি প্লাটফর্ম ছেড়ে চলে যায়, আবার আয়ার ঘরের সম্মুখের স্থানটি আগের মত অন্ধকার নিঝুম না হয়ে যায়, আল্লা জানল ছেড়ে উঠতে পারে না। কিন্তু এই মালগাড়ীগুলোর উপরে আন্নার একটুও আকর্ষণ নেই । সে একবার মাত্র সেই ট্রেনটার দিকে তাকিয়ে নিয়ে ধিয়ের পাত্রটি উলুনের কাছে নামালে । ট’নে আগুন দিয়ে তবে আল্লা কুসুমলতার কাছে খি আনতে গিয়েছিল--এতক্ষণে উকুন ধরে উঠেছে, গনগনে আগুনে ঘরটি গরম হয়ে উঠেছে। সন্ধ্যাবেলা কোনদিন আয় রান্নাঘরে রাধতে যায় না, তোল-উতৃনে আগুন দিয়ে ঘরের মধ্যে এনে জানলার ধারে বসে বসে রাধে আর ট্রেনের যাওয়া-আসা দেখে । ঘিয়ের বাটিটি নামিয়ে রেখে আন্ন প্রথমে নিজের নবলব্ধ অতি যত্বের শাড়ীখানি খুলে অালনায় রাখলে— পাছে রান্না করতে গিয়ে কাপড়থানি নষ্ট হয়ে যায় । আলনায় বুলিয়ে তার সেই পাড়ের কাটা জায়গাটুকু হাতে তুলে নিয়ে নিরীক্ষণ করে দেখতে লাগল। একটু বেশীঠ কেটেছে কাপড়খানা—পোড়াইফুর আর কাটবার কিছু জিনিষ পায় নি। এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে আল্লা দেখতে লাগল কেমন করে সেলাই ক'রে ওটুকু জুড়ে শাড়ীটি নিখুত করা যায়। কিন্তু সেলাই সম্বন্ধে আল্লার জ্ঞান গভীর ছিল না—দেখে দেখে বুঝতে না পেরে শেষে একটি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে কাপড়খানি

  • हूँव्नंनंॉन

সস্নেহে পাট ক'রে রেখে সকালবেলার পরিহিত ময়লা শাড়ীখানি গায়ে জড়িয়ে নিলে । উকুনের কাছে এসে ঘিয়ের বাটিটি দেখে এতক্ষণে আল্লার মুখখানি আবার প্রসন্ন হয়ে উঠল। সে আজ স্বামীকে আশ্চৰ্য্য করে দেবে—খুশী ক'রে দেবে। স্মিতহাসিমুখে জানলার ধারে ফিরে গিয়ে আন্না ভাবলে এখনই ভাজলে ঠাণ্ড হয়ে যাবে লুচিগুলো—একটু পরে তবে রান্ন স্বরু করবে। গরম লুচি ভবতোষ বড় ভালবাসে। থানকয়েক বেশী ক’রেই করতে হবে—কাল সকালে হরিপদকে ডেকে আল্লা কথান লুচি খাওয়াবে। আহা, বেচারী ছেলেমানুষ—আট-দশটি ভাইবোনের সংসার ; বাপের মাইনে ত ঐ কুড়িটি টাকা— ভাল জিনিষ থাবে কোথা থেকে ? বড় গরিব ওরা—আন্নাদের মত ত নয় যে যখন ইচ্ছে কাপড় কিনে পরলে, যখন ইচ্ছে লুচি ভেজে থেলে । হরিপদ ছেলেমানুষ—-বাপমায়ের সংসারের অভাব ত বোঝে মা-— ভাল পাবে, ভাল পরবে ব'লে কত সময়ে আবদার করে আর মায়ের কাছে মার খায় । আল্লা কাল তাকে ডেকে এনে কাছে বসিয়ে লুচি থাওয়াবে ...শাড়ীর ছেড়াটুকুও কাল সকালে মেরামত করতে হবে যেমন ক'রে হোকৃ। বেশ শাড়ীখানা—বেগুনী রংটা কি সুন্দরই মানিয়েছে ঐ পাড়ে । কুমমলতারও একখানা এরকম শাড়ী বোধ হয় নেই। মালগাড়ীর শেষে একথান নূতন ধরণের গাড়ী লাগান— ঝকঝক করছে, নতম সাদা রং-তারই জানলা দিয়ে মুখ বার ক’রে একটি ভদ্রমহিলা আন্নাকে দেখছিলেন ; এতক্ষণুে আল্লার চোথ তার দিকে পড়ল । ট্রেনের জানলার ধারে যেন ফুলের মত ফুটে রয়েছে আন্নার মনে হ’ল । বিস্ময়বিমুগ্ধ দৃষ্টিতে খানিক ক্ষণ তাকিয়ে থাকতে থাকতে আল্লা দেখলে, তিনি গাড়ীর দরজা খুলে নেমে এসে তার জানলার সম্মুখে দাড়ালেন। জিঞ্জস্য করলেন, “এইটি বুঝি আপনাদের বাড়ী?” তার পরনে কালে রেশমের উপরে চক্‌চক্‌ করছে চওড়া জরির পাড়-দেওয়া শাড়ী--সোনার মত ঝলমল ক'রে উঠছে ট্রেনের আলো পড়ে। মহিলাটির হাতের চুড়ি, গলার হার, কানের দুল, শাড়ীর পাড়ের উজ্জ্বলতা আল্লার চোখে যেন অকস্মাৎ দৃষ্টিবিভ্রম এনে দিলে । অন্ধকার, দরিদ্র, তার সুন্দর মুখখানি