পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

و 8۵ একখানা চেয়ারে রসরাজ স্তব্ধ হইয়া বসিয়া আছে । আমি শঙ্কিত হইয়া প্রশ্ন করিলাম,—রসরাজ তুই ! সে বলিল—হঁ্য । পারলাম না সেখানে থাকতে, পালিয়ে এলাম। সেখানেও এই ৷ চমকিয়া প্রশ্ন করিলাম-প্লেগ ? —नां । शृङ्ग-कॉम । আমি নীরব বিস্ময়ে তাহার মুথের দিকে চাহিয়া রহিলাম। রসরাজ বলিল-ষ্টেশনে নেমে শহরে ঢুকছি দেখলাম এক শব চলেছে । আবার কাল বিকেলে একদল ছেলে রাস্তায় থেল করছিল । আমি দাড়িয়ে তাদেরই খেলা দেখছিলাম। হঠাৎ একখানা ঘুড়ি উড়ে এসে স্বমুখের একখানা বাড়ীর ছাদের আলসেতে আটকে গেল । একটা ছেলে ছুটল। ছাদে উঠে আলুসের ওপর ঝুকে ঘুড়িখানা ধরলে। কিন্তু আশ্চৰ্য্য ঘুড়িখানা হাত থেকে ফসকে গেল, সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটি ঝুকল— অমনি ঘাড় নীচু ক'রে একবারে নীচে একখানা পাথরের ওপর এসে পড়ল । উঃ, সে কি রক্ত আর তার মায়ের কি কান্না ! আমি শিহরিয়া উঠিলাম। রসরাজ আবার বলিল— উঃ, পৃথিবীতে অহরহ মৃত্যু-তাণ্ডব চলেছে—তার বিশ্রাম নেই, স্বপ্তি নাই, ড: । আমি কানে শুধু শুনছি কান্না । অবিরাম অহরহ যেন অনেক লোক একসঙ্গে কঁদিছে । বলিলাম—-উপায় কি ? ওঁ নিয়ে মন খারাপ ক’রে হবে কি ? সে প্রশ্ন করিল—মৃত্যু কি ? চিস্তা না করিয়াই বলিলাম--ও একটা নিয়ম । সে বলিল--ন । আমি যে প্রত্যক্ষ দেখলাম তার একটা নিষ্ঠুর কৌতুকময় আকর্ষণে সে ছেলেটার হাত থেকে ঘুড়িটা কেড়ে নিলে, তাকে ব্যঙ্গ-কৌতুকভরে নীচে আকর্ষণ করলে । এ কথার উত্তর দিতে পারিলাম না । চুপ করিয়া ভাবিতে লাগিলাম, সত্যই আকস্মিক মৃত্যুর মধ্যে একট। নিষ্ঠুর কৌতুক প্রত্যক্ষ করা যায়। রসরাজ হঠাৎ বলিল—আজ সেই সাধুর কথা আমার মনে পড়ছে। ঘাস পৃথিবী নয়-পৃথিবীর মধ্যে আছে শুধু অস্থি আর মেদ । পৃথিবীর নাম মেদিনী! আচ্ছ, লোকটা কি আমায় অভিশাপ দিয়ে গেছে ? আমার ভয় হচ্ছে নীলু, বোধ হয় আমি পাগল হয়ে যাব । ওরে, এ যে আদি-অন্তহীন চিস্তা ! সে র্কাদিয়া ফেলিল । রসরাজকে যত্ন করিয়া মানাহার করাইলাম, জোর করিয়া শোয়াইলাম। রাত্রে চাকরটা ডাকিয়া বলিল-বাবুজী— ছাদ পর আদমী উঠা হয় । চোটা ডাকু মালুম হোতী ! অনেক সাহস করিয়া ছাদে উঠিয়া দেখিলাম, রসরাজ দাড়াইয় আছে। গভীর রাত্রি, মাঝে মাঝে এখান ওখান হইতে শ্রাস্ত প্রবাসী ్సe8ల কান্নার স্বর শোনা যায় শুধু। রসরাজ তাহাই দাড়াহঁয়া শুনিতেছিল ।” তার পর মুখ তুলিয়া নীলমাধব বাবু বলিলেন, ক্রমে ক্রমে প্লেগ কম পড়ে এল । রসরাজ কিন্তু কলেজ ছেড়ে দিলে । ক্রমশ তার দেখা পাওয়াও ভার হয়ে উঠল । আমার পরীক্ষার বৎসর, তবু তাকে ধরবার অনেক চেষ্টা করলাম। ইচ্ছা ছিল পরীক্ষাটা দেওয়াব ওকে । কিন্তু দেখা পেলাম না । কোথায় থাকে, কোথায় যায় কেউ বলতে পারলে না । ক্রমে শুনলাম, রাত্রে নাকি শ্মশানে বসে থাকে রসরাজ । তারপর চার মাস পর--দাড়ান পড়ি। চিহ্ন দেওয়াই ছিল, তিনি খুলিয়া পড়িলেন, “আজ রসরাজকে ধরিয়াছিলাম। তাহার বাড়ীতেই পাইলাম ! দেখিলাম একগাদা বই লইয়া বসিয়া আছে । কিন্তু কি চেহারা হইয়াছে তাহার ! মুখে দাড়ি গোফ গঙ্গাইয়াছে, মাথায় বড় বড় চুল, সেগুলা রুক্ষ বিশৃঙ্খল । বলিলাম-এ কি চেহারা হয়েছে তোর ? সে উত্তর দিল-- ও কিছু ন! ! আমি বলিলাম–কিন্তু ব্যাপার কি তোর ? কলেজ ছড়লি কেউ বলছে শ্মশানে যাস তুষ্ট কালী সাধন করতে ! কি হ’ল তোর ? রসরাজ বলিল—সেই কান্না । আশ্চৰ্য্য মন হয়েছে নীলু—- আশ্চৰ্য্য দৃষ্টি, আশ্চৰ্য্য শ্রবণশক্তি আমার । মুতু্য কি, কি তার রূপ, কোথা তার বাস–এ ভিন্ন চম্ব নেই, মৃত্যু ভিন্ন চোথে কিছু দেখতে পাই না, কাল্প ভন্ন কিছু শুনতে পাহ না । অহরহ যেন অনেক লোক একসঙ্গে কাদছে । আমি অবাক হইয়া তাঙ্গর মুখের দিকে চাহয় রহিলাম । সহসা সে করুণ নেত্রে আমার দিকে চাহিয়া বলিল— আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি নীলু ! সেই সাধু— সে চুপ করিল । আবার বলিল-ডাক্তার বলে, এ চিস্ত আমার রোগের একটা সিম্পটম । বলিলাম --চিকিৎসা কর । —চেষ্টা করেছি। কিন্তু নিয়ম প্রতিপালন করতে পারি না। অনেক ভাবিয়া বলিলাম--বিয়ে কর তুই রসরাজ ! তখন সে চিস্তাকুল, উত্তর দিল-মৃত্যুকে কে নিবারণ করবে ? এ কথার উত্তর নাই, চুপ করিয়া রহিলাম। সে বিশৃঙ্খল চুলের মধ্যে হাত চালাইয়া বলিল জটিল রহস্য ! যত পড়ছি তত দুর্বোধ্য হয়ে উঠছে। সব ভ্রান্ত--- সব কল্পন! ৷ পড়ে কিছু পাচ্ছি না, রান্ত্রির পর রান্ত্ৰি শ্মশানে কাটিয়েও কিছু পেলাম না। কে সে মৃত্যু, কি তার রূপ, কোথা তার বাস ? কল্পনাও করতে পারি না, বর্ণহীন, স্পর্শহীন, আস্বাদহীন, গন্ধহীন, শব্দহীন-সৰ্ব্বোপরি সে