পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রণবণ এ-বিষয়ে অনেকক্সপ সংজ্ঞাদি প্রদত্ত হইয়াছে কিন্তু আমি সে-সকল বিষয়ের মৰ্ম্মোদঘাটন করিতে পারি না” ইত্যাদি। পরে আমার দিকে তাকাইয়া বলিলেন, “বাপু, ধৰ্ম্মপ্রচার বড়ই কঠিন কাজ, প্রকৃত পথ দেখাইতে ন পারিলে মামুষের অনিষ্টই সাধন করা হয়।” এইরূপ কিছু বলিয়৷ চুপ করিলেন । মনে মনে ভাবিতে লাগিলাম, বিদ্যাসাগর মহাশয় ঠিক কথাই বলিতেছেন । ধর্মের ভ্রান্ত মত প্রচারে মানব-সমাজে কতই না অনিষ্ট সাধিত হইয়াছে । ধর্মের গোড়ামিতে কত দলাদলির স্থষ্টিই না হইয়াছে, কত রক্তপাতই না হইয়াছে : অতএব ধৰ্ম্মপ্রচার কঠিন কাৰ্য্য, এবং ধৰ্ম্মপ্রচারকের কার্য্যও বড় গুরুতর কায্য । যে-সময়ের কথা বলিতেছি, সে-সময় বঙ্গদেশে স্বগীয় পণ্ডিতবর শশধর তর্কচূড়ামণি মহাশয় হিন্দুধর্মের পুনরুত্থানের আন্দোলন সবেমাত্র শুরু করিয়াছেন । বিদ্যাসাগর মহাশয় এই বিষয়ে বলিলেন, “পণ্ডিত শশধর তর্কচূড়ামণি ইতিমধ্যে আমার সঙ্গে দেথা করিতে অ’সেন । তিনি আমাকে প্ৰণাম কবিয়ু উপবেশন করিলে আমি তাহাকে বলিলাম, আপনি হিন্দুধৰ্ম্ম প্রচারের জন্য আসি:াঠেন আমি তাই শুনিয়াছি । আপনি শাস্ত্রাদি কোথায় পাঠ করিয়াছিলেন ? উত্তরে তিনি বাললেন, "কাশীধামে (" জিজ্ঞাস করিলাম,কি পড়িয়াছিলেন ? বলিলেন, ‘দর্শন শাস্ত্র, এই কথা শুনিয়া, আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, ‘দর্শন শাস্ত্রের মধ্যে হিন্দু ধৰ্ম্মের, সাদা, রাঙ, নীল, কালে, এমন সকল রং কোথায় পেলেন । আমিও দর্শন পাঠ করিয়াছি, কিন্তু দুৰ্ব্বোধ্য বিষয়, কিছুই ভাল বুঝা যায় না । পণ্ডিত মহাশয় পড়াইবার সময় যখন জিজ্ঞাস করিতেন, “ঈশ্বর বুঝ ত ? আমি বলিতাম, আপনিও যেমন বুঝেন, আমিও তেমনি বুঝি, পড়িয়ে যাচ্ছেন পড়িয়ে যনে ' পণ্ডিত মহাশয় অামার এই কথা শুনিয়! খুব হাসিতেন ।” তংপরে বিদ্যাসাগর মহাশয় চূড়ামণি

  • আপনাকে হিন্দুধৰ্ম্ম প্রচারের জন্ম খ্ৰীঃর আনিয়াছেন তাহারা যে কিরূপ দুরের হিন্দু তাহা ত আমি বেশই জানি, তবে আপনি এসেছেন, বক্তৃত করুন । লোকে বলিবে, বেশ বলেন ভাল । এইরূপ একটা প্রশংস লাভ করিবেন, এই মাত্র ।” বলিয়া বলিলেন, “আমার স্কুলের

ছেলেরা যে মুরগীর মাংস খায়, আপনার বক্তৃতায় তাহারা যে মহাশয়কে বলিলেন, বিদ্যাসাগর-স্মৃতি &3& মাংস ছাড়িবে আমি তাহা একেবারেই বিশ্বাস করি না।” তৎপরে একটু রসিকতাচ্ছলে তিনি চূড়ামণি মহাশয়কে বলিলেন, "দেখুন, হিন্দুধৰ্ম্ম অঙ্গর অমর ও অক্ষয়।” চূড়ামণি মহাশয় বিদায় লইয়া চলিয় গেলেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় অতি উদারচেতা পুরুষ ছিলেন, ধৰ্ম্ম-বিষয়ে তাহার কোনই গোড়ামি ছিল না। তবে আমার বিশ্বাস, প্রচলিত হিন্দুধর্শ্বের অনেক উচ্চে তিনি বাস করিতেন। লোকের ধৰ্ম্ম-বিষয়ে মতামত প্রকাশ কর। বড় কঠিন বিষয় । তাই এখানে এ-বিষয়ে আর কিছু বলিলাম ন । আর একটি ঘটনার বিষয় বলি। যখন সিটি-স্কুল সংস্থাপিত হয়, তখন ঐ বিদ্যালয়-ভবনে আমি দুইটি প্রতিষ্ঠানের স্বষ্টি করি । একটি ‘রবিবাসরীয় নীতি বিদ্যালয়', অপরটি ‘ছাত্র-সমাজ । শেষোক্ত সমাজের সপ্তাহে একদিন করিয়া অধিবেশন হইত। উহাতে ছাত্রদিগের জন্য উপাসনা ও উপদেশ প্রদত্ত হইত। বিদ্যালয়ের উচ্চ শ্রেণীস্থ ও কলেজের ছাত্রেরাই তথায় যোগদান করিত । বহুদিনই উহার কায্য স্বচারুরূপে চলিয়া আসিয়াছিল । এই সমাজ হইতে অনেকেষ্ট রীতিমত ব্ৰাহ্মসমাজে যোগদান করিয়াছিল । সেই সময় একটি কলেজের ছাত্র আপনাদের পরিবার-মধ্যে হিন্দু প্রথাকুযায়ী অনুষ্ঠানাদিতে যোগ দিতে অস্বীকৃত হইলে, তাহার পিত কলেজের বেতন প্রভৃতি প্রদানে বিরতি প্রকাশ করিলেন । যুবকটি আমাকে এ-সকল কথা জানাইল বিদ্যাসাগর মহাশয়কে এ-বিষয় জানাইবে বলিল । একদিন বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নিকট গিয় তাহার ব্রাহ্মসমাজে যোগদান এবং এজন্তু তাহার কলেজের মাহিনী বন্ধ, ইত্যারির কথা জানাইল । বিদ্যাসাগর ভাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কোন কলেজে পড় " সে বলিল, “আমি আপনারই মেট্রোপলিটান কলেজে প্রথম বাষিক শ্রেণীতে পাঠ কার ।" বিদ্যাসাগর বলি:লন, “বাপু, আমি ত ব্ৰাহ্ম নই, আর ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গে আমার কোন যোগই নাই । যাহা হউক, তুমি ভাল বুঝিয় যে ধৰ্ম্ম ধরিয়াছ তাহার উপর আমার কিছুই বলিবর নাই ।” তৎপরে তিনি তাহাকে এজনু মাসিক দশ টাকা করিয়া দিবার প্রতিশ্রুতি দান করেন । সে যুবপুরুষটি এই দয়ার সাগর বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নিকট হইতে মাসে মাসে ঐ টাকা লইয়া আসিত । এবং