পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سوابع সুস্থ দিদি আর রুগ্ন দিদিতে কত না তফাৎ। রোগের প্রলাপে দিদির মুখে অন্য কথা নাই, শুধু ভূপতির কথা। তার খাওয়া, তার ঘুম বিশ্রাম, তার সুখ, তাকে সংসার পাতিবার অনুরোধ। রুগ্ন। বিধবার মুখে ভগবান নাই-আছে ভূপতির কথা। নিম্নগামী স্নেহের ধারায় ভূপতি রাত্রি দিন পরিপ্লাবিত হইতে লাগিল। সেই সঙ্গে তার কেবলই মনে হইতে লাগিল, দিদি যদি ন-বঁচে ? ভাবনার কারণ আছে। এ কয় দিন চেষ্টা করিয়াও সে ভাল ডাক্তার জোগাড় করিতে পারে নাই । ছোট পাড়াগা—ভাল ডাক্তার খুব বেশী সুa থাকিলেও স্ববল ডাক্তারের মুখ চাহিয়া অনেকের বুকে অনেকখানি ভরসা জাগে । সেই সুবলকে আজ সাধিয়াও সে এ-দিক পানে আনিতে পারে নাই। গ্রামের জমিদারের অসুখ, অসুখটা শক্ত, তাই শহর হইতে বড় ডাক্তার অসিয়াছেন । স্থবল এবং আরও অন্যান্য ক্ষুদে চিকিৎসকগুলি কয় দিন হইতেই জমিদারের বৈঠকখানায় কায়েমী ভাবে আশ্রয় লইয়াছে। পারিশ্রমিক মোটাই মিলিবে ; না মিলিলেও গ্রামের জমিদার—সকলেরই ত দু-পাচ বিঘা জমিজমা আছে–সংসারী মানুষ, চক্ষু মুদিয় গী তার শ্লোক অনুসরণ করিলে বানপ্রস্থ যে অবিলম্বে করতলগত হইবে সে-বিষয়েও নিঃসন্দেহ–সুতরাং জমিদারের বিপদে বুক দিয়া না পড়িলে চলিবে কেন ? স্থবল-ডাক্তার ত স্পষ্টষ্ট বলিয়াছে, তোমার দিদির জন্য ভাবনা কি ভূপতি, বিধবা মানুষ, ওঁদের হাড় খুব টনকে। উপোস দিলে আপনিই সেরে উঠবে। দেথছ ত জমিদার বাবুর অবস্থা, ভোগের শরীর-রোগটাও শক্ত, এখান থেকে নড়ি কি ক'রে বল দেথি ? ওঁর ভালমৰ্ম্ম হ'লে সারা দেশের লোক অনাথ হবে যে ! ডাক্তারবাবুর গষ্ঠীর মুখের পানে চাহিয়া ভূপতি দ্বিতীয় কথাটি কহিতে সাহস করে নাই। পথ চলিতে চলিতে নিৰ্ভীক ভূপতি ঐ কথাটাই ভাবিতেছে । কুটারবাসিনী দিদি আর গ্রামের জমিদারে কত না তফাৎ ! বনপ্রাস্তে ময়লা ও ছিন্ন শয্যায় দিদি তাহার গুইয়া অসহ্য রোগযন্ত্রণা ভোগ করিতেছে—পাশে সাস্তুনা দিবার কেহ নাই। না পড়িয়াছে এক ফোট ঔষধ— বিধবা মানুষ ঔষধ খাইতেও চাহে নাই—শুধু সকাল সন্ধ্যায় প্রবাসী ১৩৪৩ তুলসীতলার মাটি আনিয়া সে দিদির কপালে ঠেকাইয় দিয়াছে। তৃষ্ণার ক্ষণে দিয়াছে অল্প একটু জল । জল পান করিয়া দিদি অনেকটা সুস্থ বোধ করিয়াছে । ওদিকে জমিদারের অসুখে শহর হইতে বড় বড় ডাক্তার আদিতেছে —গ্রামের গুলি ত ফাউ–দিবারাত্র লোকজনে বাড়ী ভৰ্ত্তি। মন্দিরে চলিতেছে পূজা, পুরোহিত-বাড়ী শান্তিস্বস্ত্যয়ন, দুপ্রাপ্য মাদুলি ও দৈব ঔষধ চয়নের জন্য কত কষ্ট স্বীকার করিয়া দূর-দূরান্তরে লোক ছুটিতেছে। জমিদার যদিই দেন্ত রক্ষা করেন--নিতান্ত কপালের লেখা ছাড অন্য ক্রটি হেতু কেহ ক্ষোভ প্রকাশ করিতে পারিবে না।-- যাহারা গরিব তাঁহাদের কেন ব্যাধি হয় ? মৃত্যু আসিয়া একেবারে সব জালা চুকাইয়া দিলেই ত পারে। ভূপতি বাড়ী আসিয়া দেপিল দিদি ঘুমাইয়াছে । সে অনেকটা নিশ্চিস্থ হইয়া ও-বেলার জল দেওয়া পাস্তাভাত বাড়িয়া থাক্টতে বসিল । খানিকট তুম, কঁচালঙ্ক ও একটু তেল দিয়া পাস্তাভাত গাইতে বেশ লাগে । উপকন্থ রালির রান্নার হাঙ্গাম! বাচিয়া যায় । ভাত খাওয়া তখনও শেষ হয় নাই- সহগ একটা মিশ্র ক্ৰমানধনি শোনা গেল । কান পাতিয়; ভূপতি মিনিটথানেক সেই ক্ৰমবৰ্দ্ধমান ক্ৰন্দনধ্বনি শুনিয়া বুঝিল, ধ্বনিট জমিদার-বাড়ীর দিক হইতেই আসিতেছে। নিশ্চয়ই মামুষের মিলিত উদ্যমের পরাজয় ঘটিয়াছে। খাওয়া আর হইল না। দিদির তন্দ্রাণ্ড সেই কোলাহলে টুটিয়া গিয়াছিল। ক্ষীণস্বরে জিজ্ঞাসা করিলেন—কি হ'ল রে, ভূপি ? ভূপতি পলিল-জমিদার শশীকান্ত মারা গেলেন বোধ হয়। দিদি ক্ষীণস্বরে প্রশ্ন করিলেন--কি হয়েছিল তার ? কি জানি, অনেক ডাক্তার এসেছিল—অনেক কথাই ত বললে । দিদি বলিলেন—আহা ! দিদির এই সহানুভূতিপ্রকাশ ভূপতির ভাল লাগিল না । যেখানে ‘অtহ' বলিবার অসংখ্য লোক রহিয়াছে সেখানে অপ্রচারিত এই সহানুভূতির কতটুকু মূল্য ? কই দিদির অস্বথে কেহ ত একবার ‘আহা’ বলে নাই। জমিদার মরিলেন—গ্রামে হয়ত ইন্দ্রপাত হইল--তাহার দিদি মরিলে কেহ একবার ভাল করিয়া হয়ত তাকাইয়াও দেখিবে না।