পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আণশ্বিন মাথায় করিয়া দুৰ্ব্বল হস্তে তাহার খঞ্জের যষ্টি ধরিয়৷ বেড়াইবে । অবশ্ব তাহার দেবতুল্য হৃদাবানু স্বামী আছেন, ইহা একটা মস্ত সাম্বনার কথা। কিন্তু স্বামী তাহার জীবনে শ্ৰেষ্ঠ সহায় ও গুরু হইলেও অনেক ক্ষেত্রে স্বামীকে তিনি শিশুর মতই অসহায় মনে করিতেন। তাহার বলিষ্ঠ দেহ ও মন থাকা সত্ত্বেও সংসারের কাজে তিনি কোনও দিন মহামায়ার সাহায্য করেন নাই, করিতে ভয় পাইতেন বলিয়। ছোট শিশুকে কোলে করিতে গেলে তাঙ্গর দুই হাত আড়ষ্ট হইয়া যাইত, ধি-চাকরের ঝগড়া নালিশ শুনিলেই তিনি বলিতেন, “ওদের মাহনে চুকিয়ে দাও, ওরা বাড়ী যাক, আমি ঝগড়ার বিচার করতে পারব না।” রন্ধনে তাহার এত ভয় ছিল যে স্ত্রী কি ভগিনীর অমুখ করিলে তিনি শুধু দুধ মুড়ি খাইয়া কাটাতা দিতেন। তাই মহামায় শরীর অসুস্থ বোধ করিলেই আজকাল জাগিয়া স্বপ্ন দেখিতে আরম্ভ করিতেন, তাহার মৃত্যুর পর তাহার ছেলেমেয়ের কেত ছাদ হইতে পডিয়া মাথা ভাঙিতেছে, কেহ না থাইয়া শুকাইয়া যাইতেছে, কেহ মাসি-পিসির দরজায় ক্ষুধাশীর্ণ দেহ ও স্নেহবঞ্চিত হৃদয় লইয়৷ কাণ্ডালের মত পডিয়া রহিয়াছে । চন্দ্রকাস্ত মহামায়ার ভাবনা বুঝিতে পারিতেন । তিনি fচস্তার ভাবট হাল্কা করিয়ু দিবার জন্য প্রায়ই বলিতেন, "এত ভাবছ কেন ? তোমার মুধ শিবু ত মস্ত বড় হয়ে গিয়েছে, ওরা থোকাকে ঠিক মানুষ করতে পারবে। বুড়ে হয়ে আমরা অথৰ্ক হব, ওর শক্তিমান হবে, এই ত পৃথিবীর ধৰ্ম্ম ।” অলখ-বোগরণ *干 মহামায় বলিতেন, “আমাকে কেন ছেলে ভোলাচ্ছ, আমি সবই ত বুঝছি।” চন্দ্রকান্ত একদিন বলিলেন, “মানুষের কোনও দুর্ভাগ্য নিয়েই বেশী কাতর হওয়া ভাল নয় ; যদিও আমার নিজেরই যখন ও দুর্বলতাটা আছে তখন তোমাকে উপদেশ দেওয়া ঠিক নয়। কিন্তু পৃথিবীতে কোনও জিনিষই ত স্থিরনিশ্চয় নয়, তোমার এই সাময়িক অমুখ যে সারবে না, একথাই বা কেন তুমি ভাবছ ? আমাদের পক্ষে যতখানি করা সম্ভব আমরা ক’রে দেখি না, হয়ত সেরে যেতে পারে ” মহামায় বলিলেন, “আমরা গরীব মানুষ, অবস্থার অতিরিক্ত করতে তোমায়ু আমি দিতে পারি না । তাহলে ভবিষ্যতে ছেলেপিলের দশা কি হবে ? তুমি কাজকৰ্ম্ম ফে'লে ত কলকাতা যেতে পার না ।” চন্দ্রকান্ত বলিলেন, “আমি কলকাতাতেই একটা কাজ পেতে পারি, এটুকু যোগ্যতা আছে আমার। আজ থেকে সেই চেষ্টাই করব। তাছাড়া ছেলেমেয়েদের মানুষ করবার জন্যে আমাদের একবার কলকাতায় ত কিছুদিন থাকতেই হবে, কতকালের থেকে কথা ছিল। দেখি সে চেষ্টা ও ইচ্ছগুলো সফল হয় কি না। তবে হয়ত কিছু দেরী হয়ে যেতে পারে।” মহামায় অভিমান করিয়া বলিলেন, "তোমার চেষ্ট সফল হতে হতে আমি যাব মীরে। তারপর ‘মা ম'লে বাপ তালুই, ছেলে হবে বনের বাবুই, ওই আমার কপালে লেখা আছে ।” ( ক্রমশ: )