পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১০০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

సిలి8 উপায় না দেখে বি, এন, ডব্লিউ রেলের পুল দিয়ে পার হ’বার কথা হ’ল । ঝুলীর মিলের বিজলী বাতি দেওয়া রাস্ত। ছেড়ে বা দিকে অনেক খান, ডোবা, নালা, ঝোপঝাপ পার হ’য়ে প্রায় মাইল খানেক যাবার পর লাইনের উচু বাধের ওপর অতি কষ্টে উঠলাম। পুলের ওপর দিয়ে লাইকেল নিয়ে যাওয়া এক বিষম ব্যাপার! তিন চার হাত পর পর প্রায় আট দশ ইঞ্চি উচু লোহার কড়ি বরাবর লাইনের দু’পাশে বার হয়ে আছে। এর ওপর দিয়ে সাইকেল চালিয়ে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব । পথটি হাত তিনেক চওড়া, পাশে মাত্র দু'টি তার রেলিঙের কাজ করছে। সাইকেল কাধে নিয়ে আস্তে আস্তে চললাম। লোহার পাতে আমাদের জুতো মাঝে মাঝে পিছলে যেতে লাগল। সাইকেল শুদ্ধ নীচে গঙ্গায় পড়া বিশেষ বাঞ্ছনীয় হবে না ব'লে অতি সস্তপণে অগ্রসর হ’তে লাগলাম । পুল আর শেষ হয় না, কেবল জ্যোৎস্না ছিল ব’লে কোন দুর্ঘটনা ঘটল না । সম্মুখেই ষ্টেসনের মিটমিটি আলো জলছে। প্রায় ত্রিশ ফুট নীচে এলাহাবাদ সহরতলীর রাস্তা। ষ্টেসন দিয়ে যাওয়া যুক্তিযুক্ত হ’বে না ভেবে এইখান থেকেই নীচে নাম্বার চেষ্টা দেখতে লাগ লাম। লগলাইন দড়ি লগেজ খুলে বার ক’রে তার সাহায্যে একে একে সাইকেলগুলিকে বেঁধে ঝুলিয়ে নীচে নামান হ’ল । এতেও নিষ্কৃতি নেই, নীচে শালের খুঁটির বেড়া। কোনো রকমে বেড়া টপ কে রাস্তায় এসে ইiপ ছাড় কাম । চারদিকে অল্প অল্প কুয়াসা । ঘামে-ভেজা জামা গায়ে থাকায় এখন শীত শীত করতে লাগ ল । রাত প্রায় এগারটা । পুল পার হয়ে রাস্তায় আসতে দেড় ঘণ্টার ওপর লেগেছে। মাইল দুই আসার পর এলাহাবাদ সহরের মধ্যে পৌঁছলাম। সব দোকান পাট বন্ধ, সহর নিস্তব্ধ । ঘোরাঘুরি করতে করতে একটা কাশ্মিরী হোটেল খোলা দেখে সেইখানেই ঢুকে পড়লাম । আজ ৭৪ মাইল বাইক করা গেছে। মিটারে দেখা গেল কলকাতা থেকে মোট ৫১৩ মাইল এসেছি। 碎 ৩রা অক্টোবর, শনিবার—ডাঃ নীলরতন ধর মহাশয়ের সঙ্গে দেখা কবৃবার জন্যে সকালে উঠে আমরা কর্ণেলগঞ্জের প্রবাসী-আশ্বিন, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড দিকে রওনা হয়ে পড়লাম। তিনি আমাদের দেখে ভারী খুলী হলেন ও তার বাড়ীতে থাকার জন্যে অনুরোধ করলেন। হোটেলের পাওনা মিটিয়ে জিনিসপত্র নিয়ে ফিরতে বেলা হয়ে গেল। ধূলোয় সাইকেলগুলির অবস্থ৷ এমন হয়েছে যে রীতিমত পরিষ্কার না করলে আর তাদের কাছ থেকে কাজ আদায় করা ফুক্ষর । ইউনিভাগিট, হাইকোর্ট প্রভৃতি দেখতে দেখতেই সন্ধ্যা হয়ে গেল। রাস্তায় ট্রাম বা ট্যাকুসির চলন নেই, আছে কেবল টোঙ্গ—এক্কার উন্নত সংস্করণ । এক্কার মতে চারদিকে লোক না ব’সে কেবল সামনে পিছনে দু’জন দু’জন ক’রে বসতে পারে। এখানে ইতর ভদ্র সকলেরই যান টোঙ্গা ও এক। চাদনী রাত-রাস্তায় আলোর বালাই নেই । জিজ্ঞেস ক’রে জানা গেল কৃষ্ণপক্ষ ছাড়া অন্য সময়ে এখানে রাস্তায় আলো জালা হয় না । ৪ঠা অক্টোবর রবিবার-খুব ভোরে বেরিয়ে পড়লাম । ফোর্ট, ও যমুনার দ্বিতল পুলের ওপর থেকে গঙ্গাযমুনাসঙ্গম দেখে আবার গ্র্যাণ্ড ট্রাঙ্ক রোড ধরলাম। মাইল ছয় অতি খারাপ রাস্তা, বেজায় ধুলো । এইখানে রাস্তার বাদিকে বামরুল এয়ারডোমে যাবার পথ । কিছুদূর থেকে ভাল রাস্তা পাওয়া গেল । পাশে পাশে বরাবর গম, ভুটা ও জোয়ারের ক্ষেত, মাঝে মাঝে দু' একটা ধানের ক্ষেতও আছে। পথের ধীরে ধীরে শুকৃনে ডোবায় কাদাখোচা, কাক, সারস প্রভৃতি অনেক রকম পার্থী দেখা যাচ্ছে । আম জাম নিম গাছের সারি রাস্তার দু’পাশে চলেছে। তারি ছায়ায় ছায়ায় চ’লে আমরা দুপুরবেলায় খাগোয়া চটতে, বড় পুকুরের ধারে, এক বাগানের মধ্যে আডডা ফেললাম । এখানে একটা ভারি মজার ঘটনা হয়েছিল । বাগানের মধ্যে দলে দলে বাদরের সভা বসে গেছে। পুকুরে স্বান ক’রে ফিরছি, দেখলাম সামনেই এক ‘পালের গোদা আমাদের এক টুপি মাথায় পরে, একটু আগে আমরা যে রকম ভাবে গাছে ঠেস দিয়ে বসেছিলাম ঠিক সেইভাবে আসর জাকিয়ে বসে আছে। এই রোদে টুপি না থাকূলে যে কি বিপদে পড়তে হবে সে আর বুঝতে বাকী রইল না। তাড়া দিতেই টুপীপড়া বাদরটি লাফ মেরে গাছে