পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ) 'প্রবাসী’ পত্রিকা মুখ্যতঃ স্বকুমার সাহিত্য আর কলা, আর সমাজেন্নিতি আর রাষ্ট্রোন্নতির আলোচনা নিয়ে । অন্যায় এবং অবিচারের বিরুদ্ধে প্রবাসী’র পরম শ্রদ্ধাস্পদ সম্পাদক মহাশয়ের নিভীক প্রতিবাদ, ‘প্রবাসীকে আর তার সহধুর্ঘ্য মডার্ণ-রিভিউকে ভারতবর্মের তাবৎ পত্রপত্রিকার মধ্যে অনন্যসাধারণ শক্তি দিয়েছে। এ বিষয়টি এতই সৰ্ব্বজনবিদিত যে তা নিয়ে এখন আলোচনা করার আবশ্যকতা নেই । ‘প্রবাসীর ‘বিবিধ প্রসঙ্গ’ শীর্ষক আলোচনা-মালা বাঙলা দেশের তথা ভারতবর্ষের মুক্তি অর্জনের পথে এই পচিশ বছর ধ’রে অবিশ্রান্ত সহায়তা ক’রে এসেছে। - এখন থেকে বারো-পনেরো বছর আগে আমাদের ছাত্র-জীবনে’প্রবাসী যে বাঙলার একমাত্রমানসিক-উৎকর্ষবৰ্দ্ধক পত্রিকা ছিল, একথা মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করতে হয় ; আর এখনও "প্রবাসী’ তার সেই উচ্চ আদর্শ আর উচ্চ স্থান অক্ষুন্ন রেখেছে। বঙ্কিমের বঙ্গদর্শন’ পুরাতন ‘ভারতী’, ‘সাধনা”—এইসব পত্রিকার ভাবের ধারা ‘প্রবাসীই বহন ক’রে এনেছে। অধুনা-লুপ্ত প্ৰদীপ’ বোধ হয় বাঙলায় সর্বপ্রথম একাধারে সাহিত্য আর চিত্রকলার সমাবেশ করতে চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু ‘প্রবাসী’ যখন ১৩০৮ সাল থেকে প্রচারিত হ’লে, তখন থেকেই বাঙল সাময়িক সাহিত্যে একটি নোতুন জিনিস এলো । কলেজে পড়বার সময়ে আর কলেজ থেকে বেরিয়ে, বিনয়েন্দ্রনাথ সেন, মনোমোহন ঘোষ প্রমুখ দু-চার-জন পুণ্যশ্লোক অধ্যাপকদের দুর্লভ সংস্পৰ্শ, আর কলেজের পুস্তকাগার—এই দুইয়ের বাইরে, মাতৃভাষার সাহচর্য্যে যে এক ‘প্রবাসী’ব কাছ থেকেই সব বিষয়ে মানসিক পুষ্টি আর রসায়ন পেয়ে এসেছি, এ কথা প্রবাসীর পঞ্চবিংশ বৈজয়ন্তী উপলক্ষে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্বীকার করছি। দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের দার্শনিক নিবন্ধ ; সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতা; আর সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, স্বকুমার কলা, ভাষাতত্ত্ব, সমাজতত্ত্ব, বাঙালীর কৃতিত্ব যার কথা পড়ে আমাদের কাজে উৎসাহ আসতে পারে—এইসব বিষয়ে বাঙলার সমস্ত শ্রেষ্ঠ লেখকদের নিবন্ধ, ‘প্রবাসী'র বাঙলার উৎকর্ষ ও প্রবাসী’ ఏఏ মধ্যে দিয়েই প্রচারিত হ’য়ে এসেছে ; সাধারণ্যের মধ্যে নোতুন তথ্য আর ভাব বিতরণের জন্য নানা স্বদেশী আর বিদেশী পত্রিকা থেকে উদ্ধৃত করা শিক্ষাপ্রদ সবাদ আর সন্দর্ভ প্রবাসী’ বাঙালী পাঠককে এনে দিয়েছে ; আর ‘প্রবাসী’র যে সব-চেয়ে বড়ে আকর্ষণ যার জন্য বরাবরই আমাদের প্রবাসী’র জন্য প্রতিমাসের শেষে উদগ্রীব ক’রে রাখে সেট হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের লেখা, তার গল্প, তার কবিতা, র্তার গদ্য লেখা, তার আলোচনা । ইদানীং ‘প্রবাসী”কে জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ জীবিত লেখকের প্রধান প্রকাশ-ভূমি আখ্যা দিতে হয় ; রবীন্দ্রনাথের এদিককার রচিত শ্রেষ্ঠ কবিতা আর অন্য লেখা ‘প্রবাসীর পৃষ্ঠাকে গৌরবমণ্ডিত ক’রে বাঙালী পাঠকের কাছে পৌছেচে । তার ‘গোরা’ আর ‘জীবন-স্মৃতি’র মতন দুখানা বড়ো বই, যে দুটিকে 曾 আধুনিক যুগের সাহিত্যের দুটি শ্রেষ্ঠ রত্ন বলতে পারা যায়, আমরা মাসের পর মাস অধীর অপেক্ষায় থেকে ‘প্রবাসী’ বার হ’লে তবে প’ড়ে আনন্দ লাভ করেছি। সকল দিক্ দিয়েই ‘প্রবাসী এখন শিক্ষিত বাঙালীর নিজস্ব হ’য়ে দাড়িয়েছে । একটি বিষয়ের জন্য প্রবাসীর কাছে বাঙালীকে বিশেষভাবে ঋণ স্বীকার করতে হবে—সেটি হচ্ছে অবনীন্দ্রনাথ, নন্দলাল প্রমুখ রূপকারদের প্রতিভার সঙ্গে পরিচয়ের সুযোগের জন্য, আর সাধারণতঃ রূপকলা-সম্বন্ধে উন্নত মনোভাব গঠনের জন্য। বাঙালীর মধ্যে সুকুমার শিল্পের জ্ঞান আর আদর বাড়াবার জন্য ‘প্রবাসী’ যতটা করেছে, এতটা আর-কেউ করতে পারে নি। এ দিকে ‘প্রবাসী’র প্রথম সংখ্যা থেকেই তার বিশেষত্ব নজরে পড়ে । ‘প্রবাসী’র প্রথম বৎসরের প্রথম সংখ্যায় অজণ্টার চিত্রের উপর একটি চমৎকার সচিত্র প্রবন্ধ বা’র হয়, সেই প্রবন্ধটির সহায়তায় আমাদের দেশের এই প্রাচীন কীৰ্ত্তি, যা জগতের মধ্যে এক শ্রেষ্ঠ শিল্পভাণ্ডার, তার খবর ইস্কুলে পড়বার সময়ে প্রথম আমার কাছে আসে, আর আমার পরিচিত অন্য বহু বাঙালীর কাছেও প্রবাসী'র এই প্রবন্ধটির মারফংই এর সংবাদ এসেছিল শুনেছি। বাঙালী জাত যে ছবি ভালেবাসে এই আবিষ্কার প্রবাসীই ভালে ক’রে করেছিল— কিছুকাল ধ’রে তখনকার দিনের রুচির অতুকুল রবিবৰ্ম্মার