পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] বাঙলার বাইরেকার সজ্জনদের পূর্ণ সহানুভূতি আর সাহায্য এই কলাভবন লাভ করতে পেরেছে। ভারতীয় শিল্পের আদর, সাধারণ্যে বাড়াতে ‘প্রবাসী’ বাঙলা দেশে সবচেয়ে বেশী কাজ ক’রেছে। বাঙালীর মানসিক উৎকর্ষের ইতিহাস লিখতে হ’লে ‘প্রবাসী'র এই কাজ পূর্ণ ভাবে ব’ল্তে হয়। এ বিষয়ে ‘প্রবাসীর প্রদর্শিত পথ এখন বাঙলার আর বাঙলার বাইরেকার তাবৎ পত্র-পত্রিক গ্রহণ ক’রেছে । ইস্কুল-জীবনে ভারতীয় শিল্পের সৌন্দৰ্য্য আমার মনের উপর তার মোহ বিস্তার করেছিল,—তখন রাজপুত আর মোগল ছবি আর অবনীন্দ্রনাথের বুদ্ধ ও সুজাত, অভিসারিকা, গ্রীষ্ম ঋতু, বসন্ত ঋতু প্রভৃতি ক-খানি ছবি দেখতে আমি বহুবার চৌরঙ্গী রোডে আর্ট-ইস্কুলে গিয়েছি। এইসব ছবি ক্রমে ক্রমে যে জনপ্রিয় হ’য়ে উঠবে, আর পরে এমন রসজ্ঞ প্রকাশকও পাওয়া যাবে যিনি ঐ সব ছবি ছাপাবেন, আর ঘরে ব’সে ব’সে ঐসব ছবির মুদ্রিত প্রতিলিপি দেখতে পাওয়া যাবে—এ কথা তখন আমার স্বপ্নেরও অগোচর ছিল। ১৯০২ সালে আর তার দু তিন বছর পরে বিলাতের স্টুডিও’ পত্রিকায় হাভেল সাহেব যে অবনীন্দ্রনাথের সম্বন্ধে প্রবন্ধ লিখেছিলেন, আর র্তার কতকগুলি ছবির একরঙ আর অনেক-রঙা প্রতিলিপিও দিয়েছিলেন, সে কথা ইস্কুলের প’ড়ো আমার তখন জানা ছিল না। যখন প্রথম ‘মডার্ণ-রিভিউ আর ‘প্রবাসী’তে অবনীন্দ্রনাথের দুই-চার-খানি ছবি যা আমার বিশেষ প্রিয় ছিল তা বা’র হ’লে, তখন আমার মনে যে উল্লাস যে আনন্দ হ’য়েছিল সেরূপ উল্লাস আর আনন্দ খুব কম জিনিসেই আমি অনুভব ক’রেছি—এ হচ্ছে কোনও ভাবরাজ্যে অরসিক আর বে-সরদীদের মধ্যে সমান-ধৰ্ম্মার খবর পাওয়ার উল্লাস । ‘প্রবাসী’ আর "মডার্ণ-রিভিউ” দুইই তখন লাইব্রেরীতে গিয়ে পড়ে আস্তুম–কিন্তু কেবল এই দুই পত্রিকাতে প্রকাশিত ছবির লোভে এই পত্রিক দুটির অনেকগুলি সংখ্যা কিনেছি। এইসব ছুবির জন্য ক্রমে ক্রমে সাধারণের মধ্যে একটা যে আগ্রহ হ’য়েছে, তা এখন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ; আর এই আগ্রহের ফলেই এইসব ছবি এখন স্বতন্ত্র পুস্তকাকারে সংগৃহীত হ’য়ে, বাঙলার উৎকর্ষ ও ‘প্রবাণী’ Ye X ‘প্রবাসীর প্রকাশিত 'চ্যাটাজ্জাস পিক্চার এলবামস্, আর শ্ৰীযুক্ত অৰ্দ্ধেন্দ্রকুমার গঙ্গোপাধ্যায় মহাশয়ের সম্পাদিত"মডার্ণ, ইণ্ডিয়ান আর্টিস্ট্রস’ নামে মনোহর গ্রন্থমালায় প্রকাশিত হয়েছে আর সকলের পক্ষে সহজলভ্য হ’য়েছে। কিন্তু দশ বছর আগে আমাদের তো এই স্থবিধা ছিল না। আমাদের মধ্যে দু-চার-জন শিল্পাঙ্গুরাগী 'প্রবাসী আর মডার্ণ-রিভিউ থেকে প্রাচীন আর আধুনিক ভারতীয় ছবিগুলি ছিড়ে নিয়ে একটি প্যাডের মধ্যে রেখে দিতুম । এই ছিল আমাদের কাছে এক উৎকৃষ্ট চিত্রশালা, অবসরের বহু সময় আমাদের এখনও এই চিত্রশালার সংগ্রহ দেখেদেখে কাটে, এই সৌন্দর্য্যের, চিত্রময় কবিতার ভাণ্ডার আমাদের এখনও আগেকার মতনই আনন্দ দেয়। ইউরোপ-প্রবাসের সময় আমি আমার এই চিত্রশালাটি সঙ্গে ক’রে নিয়ে গিয়েছিলুম। অনিসন্ধিৎসু কলাকুরাগী বিদেশীর কাছে আধুনিক ভারতের মানসিক উৎকর্ষের একটা ধার রূপকৰ্ম্মের মধ্যে দিয়ে কিরূপে প্রকাশ পেয়েছে, পাচ্ছে, তা দেখাবার জন্য লণ্ডনে আর পারিসে, আর ইটালী গ্রীস আর জার্মানীতে আমার সমস্ত ভ্রমণের সার্থী প্রবাসী’ আর "মডার্ণ-রিভিউ থেকে কেটে নিয়ে তৈরী এই চিত্রসংগ্রহ সবচেয়ে বেশী কাজ করেছিল । আমাদেরভারতীয় সভ্যতার ইতিহাসের মাত্র এই কয়টি নাম, ইংলণ্ডের বাইরের জগতের সাধারণ উচ্চ-শিক্ষিত ইউরোপীয় মাত্রেই জানে—ঋগ্বেদ, উপনিষদ, রামায়ণ-মহাভারত, বুদ্ধ, গান্ধী, আর ‘তাগোরে’ বা রবীন্দ্রনাথ । এদের মধ্যে যাদের ভারতীয় সাহিত্যের আর ভারতীয় শিল্পের সঙ্গে অল্প-বিস্তর পরিচয় আছে, আর যারা নিজেদের দেশের আর চীন প্রভৃতি দেশেরও শিল্প সম্বন্ধে বেশ রস , তাদের আধুনিক ভারতীয় শিল্পের নিদর্শন দেখিয়েছি, তার স্বীকার ক’রেছেন যে এ-যুগে একমাত্র আধুনিক ভারতীয় শিল্পকলা রূপকৰ্ম্ম বিষয়ে পূৰ্ব্বোত্ত নামগুলির মর্য্যাদা রক্ষা ক’বৃতে পেরেছে, একাধারে বিশিষ্ট ভারতীয়ত্ব আর বিশ্বজনীনত্ব বজায় রাখতে পারায় এই শিল্প এক অপূৰ্ব্ব বস্তু হ’য়ে দাড়িয়েছে। বিদেশের মনীষীদের সঙ্গে এ বিষয়ে আমার আর আমার মতন অনেকের ঐকমত্য দেখে বিপুল আনন্দ লাভ ক’রেছি। যখন এদেশে ইণ্ডিয়ান সোসায়ুটা অভ_