পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>>Wり প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড তরঙ্গিণী দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন, “কবে ষে মেয়ের বুদ্ধি হবে, ভগবানই জানেন । এ ক’টা দিন কেটে গেলে আমি বঁাচি। বেয়ানকে ব’লে ক’য়ে যদি আর দুটে বছর কাছে রাখতে পারি, ত ভাবনা কেটে যায়। তখন আপনি আপনার ঘর সংসার চিন্‌বে। মেয়ের এই কচি বয়েস, আর কেউ না বুঝুক, জামাই যদি বোঝে, তবু মেয়েটা একটু কম ভয় পায়।” ছোট ঠাকরুণ অবজ্ঞা ভরে ঠোট উন্টাইয়া বলিলেন, “হ্যা বাছা, তুমিও যেমন ! একে পুরুষ মানুষ, তায় পরের ছেলে। সে আবার বুঝবে ?” তরঙ্গিণী গল্প ছাড়িয়া চঞ্চল হইয়া উঠিয়া বলিলেন, “কপালে যা আছে, তাই হবে মা। তুমি একবার মেয়েটাকে ডেকে দাও।” অগত্যা বৃদ্ধাকে উঠিতে হইল। গৌরীকে গোয়াল ঘরের দরজার কাছ হইতে ধরিয়া আনিয়া ছোট ঠাকরুণ তাহার মার হাতে সপিয়া দিলেন। আপাদমস্তক ধূলিধূসরিত। গৌরীর রূপ দেখিয়া মা ত অবাক্। এ মেয়েকে বধুবেশে সাজাইতে র্তাহার পরিশ্রম যে কিছু কম হইবে না, তাহা তিনি বেশ বুঝিলেন। এ যেন ভৈরবী মূৰ্ত্তি । 舉 歇 蠍 来 গৌরীর পিতা হরিকেশব বন্দ্যোপাধ্যায় ভালমন্দ নানারূপ ভাবিয়া চিন্তিয়া নিজের মনেই সিদ্ধান্ত করিয়া গেীরীর বিবাহ দিয়াছিলেন আট বৎসর বয়সে । এ-বিষয়ে কাহারও পরামর্শ তিনি লন নাই ! সেই কচি বয়সে গৌরীকে যখন মায়ের কোল হইতে ছিনাইয়া লইয়া যাওয়া হয় তখন পিতামাতার প্রাণ র্কাদিলেও প্রথমটা সে বিশেষকিছু বুঝিতে পারে নাই । শানাইন বতের আনন্দ কোলাহলে উৎসবের জাকজমকে তাহার শিশুচিত্ত বেশ ভুলিয়াছিল। এত আদর, এত গহন কাপড়, এত মিঠাইমগু, কাহার না ভাল লাগে ? শ্বশুরবাড়ী যাইবার সময় মা-বাবা সকলে যখন তাহাকে বুকে চাপিয়া ধরিয়া চক্ষের জলে তাহার "মুৰ্থখানা স্বান করাইয়া দিয়াছিলেন তখন সে কাদে ত নাই, ইহাদের ব্যবহারে বিস্মিতই হইয়াছিল। কিন্তু তাহার পর সেই দূরগ্রামে রাত্রি যখন গভীর হইয়া উঠিল, আত্মীয়স্বজন উৎসব-আনন্দ সমাপন করিয়া আপন-আপন গৃহে কপাট দিল, সানাইয়ের স্বর থামিয়া গেল, আলো নিভিয় গেল, ভাঙাহাটের মতন সেই অপরিচিত অন্ধকার মস্ত বাড়ীটা তাহাকে যেন আপনার নিস্তব্ধ বিরাট শূন্ততার গহবরে টানিয়া লইতে লাগিল, তখন সে মা মা করিয়৷ কাদিয়া আকুল হইল। তাহার চোখের ঘুম কোথায় ছুটিয়া গেল। কাছে একমাত্র পরিচিত মুখ ছিল তাহার বাপের বাড়ীর দাসীর। গৌরী তাহারই বুকে মুখ লুকাইয়া তাহার গলা ধরিয়া কাদিতে লাগিল, “আমাকে মার কাছে নিয়ে চল ।” শাশুড়ী-ননদ যত কাছে টানিতে চান, ঘুমাইতে লইয়া যান ততই তাহার ভীতি বাড়িয়া উঠে । এ কোথায় কাহার ভরসায় মা তাহাকে বিসর্জন দিল ? এ অন্ধকারে কার কোলে আপনাকে নিশ্চিন্তে সপিয়া দিয়া নিৰ্ভয়ে সে চক্ষু মুদিবে ? এরা ত তাহার কেহ নয়। এমুনি করিয়া একরাত্রি নয় আট রাত্রি এই অজানা পুরীতে ভয়ে শোকে দুঃখে অনিদ্রায় অৰ্দ্ধনিদ্রায় মাতৃক্রোড়চু্যত গৌরীর প্রাণ কাদিয়াছিল। ফিরিয়া আসিয়া আজ দুই বৎসরেও তাহার মন হইতে শ্বশুরবাড়ীর সে বিভীষিকাময় ছবি মুছে নাই। - বিবাহের একবৎসর পরে জামাই একবার আসিয়াছিল ; কিন্তু থাকে নাই। এই প্রথম সে শ্বশুরবাড়ীতে নিমন্ত্রিত হইয়া চার পাচদিন কাটাইবার জন্য আসিতেছে। তাই সমস্ত বাড়ীতে সাড়া পড়িয়া গিয়াছে। কিন্তু গৌরীর সম্বন্ধে সকলেরই মনে অল্পবিস্তর ভয় আছে। গেীরী বাড়ীর বড় অাদরের মেয়ে । সে হরিকেশবের একমাত্র কন্যা । হরিকেশব বৃহৎ একান্নবর্তী পরিবার লইয়৷ বাস করেন। বাড়ীর কর্তা এখন তিনিই, কারণ পিতা আজ বহুদিন হইল চারটি কন্যা ও দুইটিপুত্রকে এই জ্যেষ্ঠের হাতেই সপিয়া দিয়া পরলোকযাত্রা করিয়াছেন। তাহার দ্বিতীয় ভ্রাতা হরিমাধব নিঃসস্তান ; হরিসাধনের দুইটি পুত্র তিনটি কন্যা। ময়না, শৈল ও টিনি তিনজনই গৌরীর পর এ সংসারে দেখা দিয়াছিল। গৌরীর সহোদর পাচ ভাই যখন স্কুলে-কলেজে পড়ে, যখন তরঙ্গিণীর কোলে নূতন একটি কচি শিশুকে আবিভূত হইতে দেখিবার কল্পনা ও