পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১২ পুলিসের লোকেরা যাহা করিয়াছেন, তাহার জন্য র্তাহারা সৰ্ব্বসাধারণের কৃতজ্ঞতাভাজন। কিন্তু সকল ক্ষেত্রেই পুলিসের ইংরেজ ফিরিঙ্গী ও দেশীলোকের নিজের কৰ্ত্তব্য করিয়াছে, বলিতে পারি না। কাগজে পড়িয়াছি এবং প্রত্যক্ষদশীর মুখে শুনিয়াছি, যে, কোন কোন স্থলে পুলিসের চোখের উপর লুট অত্যাচার হইয়াছে, তাহার নিবারণের চেষ্টা করে নাই। একটি থানার লোকেরা স্বয়ং লুটও করিয়াছে, শুনা যায়। কর্ণওয়ালিসষ্টাট শীতলা বস্ত্রালয় ওআৰ্য্যসমাজ মন্দিরের সম্মুখে কয়েক জন পুলিশ কন্‌ষ্টেবল বসিয়াছিল। তাহাদের চোখের উপর একটা ঘোড়ার গাড়ীর গাড়োয়ান ও আরোহীদের উপর কয়েক জন ছোকরাকে লাঠি চালাইতে আমরা স্বচক্ষে দেখিয়াছি। কন্‌ষ্টেবলরা বাধা দেয় নাই। একাধিক প্রবীণ হিন্দু ছোকরাদিগকে তিরস্কার করিলেন এবং একজনের কান ধরিয়া চড় মারিলেন, তাহাও দেখিলাম । টেলিফোনে পুলিসের সাহায্য চাহিলে অনেক স্থলে সাহায্য পাওয়া গিয়াছে, কিন্তু কখন কখন পুলিস তামাসার ভাব দেখাইয়া কৰ্ত্তব্যে অবহেলা করিয়াছে। একদিন রাত্রে গড়পার হইতে কতকগুলি পশ্চাদ্ধাবিত পলায়নপর লোকের কথা অনুসারে বেলিয়াঘাট থানায় টেলিফোন ৰুরিয়া সাহায্য চাওয়ায় সাহায্য ত পাওয়াই যায় নাই, অধিকন্তু ব্যাপারটা যে বিশেষ কিছু নয় উত্তরদাতা ইহাই বুঝাইবার চেষ্টা করিয়াছিলেন । আর্য্যসমাজীদের গীতবাদ্যসমম্বিত যে শোভাযাত্রা উপলক্ষে এই দাঙ্গাহাঙ্গামার সূত্রপাত হয়, তাহার জন্য উক্ত সমাজের নেতারা পুলিসের অনুমতি লইয়াছিলেন । অনুমতি দিবার পূৰ্ব্বে পুলিসের কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই সকল অবস্থা বিবেচনা করিয়াছিলেন । শোভাযাত্রা যে যে রাস্তা দিয়া হইবে, তাহার একটির উপর যে মসজিদ ছিল, তাহ নিশ্চয়ই র্তাহার জানা ছিল। জানা না থাকিলে এরূপ অজ্ঞলোকের উপর এরূপ অনুমতি দিবার ভার থাকা উচিত নহে। বাহা হউক,তিনি যে অজ্ঞ নহেন, ইহা ধরিয়| ল ওয়াই কৰ্ত্তব্য । অনুমতি দিবার সময়, মুসলমানদের রমজানের উপবাস চলিতেছে এবং উপবাসে মামুষের মেজাজ সহজেই বিগড়াইয়া যায়, একথাও কর্তৃপক্ষের অগোচর ছিল না। মসজিদের সম্মুখ দিয়া হিন্দুরা গান বাজনা প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড করিয়া গেলে মুসলমানের কিছু দিন হইতে আপত্তি করিতে আরম্ভ করিতেছেন এবং তাহার ফলে অনেক জায়গায় দাঙ্গাহাঙ্গামা রক্তপাত নরহত্যা হইয়াছে, ইহাও পুলিসের জানা আছে। অতএব আমাদের বিবেচনায় শোভাযাত্রার অনুমতি দিবার সময় পুলিসের এই বন্দোবস্তও করা উচিত ছিল, যে, মসজিদের সম্মুখে বা নিকটে কোথাও যথেষ্টসংখ্যক অস্ত্রধারী ও অশ্বারোহী পুলিস প্রস্তুত থাকিবে। সচরাচর মিছিলের সঙ্গে যেমন ২১ জন কনষ্টেবল থাকে, এক্ষেত্রেও তাহা ছিল। দৈনিক কাগজে তাহাই লেখা আছে । কিন্তু তাহা যথেষ্ট নহে। মুসজ্জিত ও সশস্ত্র এত বেশী লোক রাখা উচিত ছিল, যাহাতে তাহাদিগকে দেখিয়াই গুণ্ডারাও ভয় পায় । এইসকল কারণে আমাদের মনে হয়, পূৰ্ব্বাহ্নেই যাহা করা উচিত ছিল, পুলিস-কর্তৃপক্ষ তাঙ্গ করেন নাই । তাহা করিলে সম্ভবতঃ এত অশান্তি, লুটু, রক্তপাত, ও নরহত্যা হইত না । দাঙ্গ ও লুট আদি আরম্ভ হইবার পরও, ব্যাপারটা যেরূপ গুরুতর; পুলিস-কর্তৃপক্ষ প্রতিকার ও নিবারণ চেষ্ট সেরূপ যথাযোগ্য পরিমাণে প্রথম হইতেই করেন নাই। আমরা এরূপ বলিতেছি না, যে, প্রথমেই জনতার প্রতি অবিচারিতভাবে ৰুব গুলি চালাইয়। কতকগুলা লোককে জখম ও খুন করা উচিত ছিল, এবং তাহা হইলেই সব ঠাণ্ড হইয়া যাইত। কিন্তু ইহা আমরা দৃঢ়তার সহিত বলিতেছি, যে, কাল ও পাত্র এবং অন্যান্য অবস্থা বিবেচনা করিয়া গোড়াতেই সরকার পক্ষের যথেষ্টসংখ্যক অস্ত্রধারী পুলিস ও সৈনিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত ও প্রদর্শন করিয়া উগ্রপ্রকৃতির লোকদিগের মনে ভয় জন্মান উচিত ছিল । তাহার পর সহরের ও উত্তর দিকের সহরতলীর অনেক রাস্ত দিয়া সৈনিক ও কামানের প্যারেড করাও উচিত ছিল । ইহাতে ফল না হইলে অগত্যা গুলি চালাইতে হইত। যাহারা ধৰ্ম্মান্ধতা ও প্রতিহিংসাজাত উত্তেজনায় উন্মত্ত হইয়া উঠে, তাহারা আমাদের চেয়ে নিকৃষ্ট শ্রেণীর জানোয়ার এবং নিহত হইবারই যোগ্য, এমন কথা আমরা বলিতেছি না। তাহাদের অপরের অধিকারে হস্তক্ষেপ করিবার প্রবৃত্তি