পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১৬ হাঙ্গাম। যে এই সমুদয় প্রযত্নে অল্প বা অধিক ব্যাঘাত জন্মাইয়াছে, তাহাতে সন্দেহ নাই । প্রশ্ন এই, বিধাতা, জগৎকারণ, বিশ্বনিয়ম, কি আমাদের আত্মকর্তৃত্ব লাভের বিরোধী এবং সেইজন্য ঠিক সময় বুঝিয়। প্রতিকূল ঘটনা ঘটান ? না, ইহার মধ্যে মামুসের কারসাজি আছে ? বিধাতা আমাদের প্রতি বিরূপ, ইহা আমরা বিশ্বাস করি না। কিন্তু ইহাও ঠিক, ধে, আমাদের কৰ্ম্মফল আমাদিগকে ভোগ করিতে হইবে। এইজন্য ভারতবর্ষের সকল সম্প্রদায়ের স্বরাজ্যকামী লোকদিগকে কায়মনোবাক্যে এরূপ চেষ্টা সতত করিতে হইবে, যাহাতে স্বরাজ্যের প্রতিকুল এবং বিদেশী শাসক ও শোষকদের অন্যায় অভিলাযের অমুকুল কিছু না ঘটে। বিধাতা আমাদের সমুদয় বৈধ ইচ্ছার সহায়,ইহাতে সন্দেহ করিবার কিছু কারণ নাই। যদি আমাদের প্রতিকুল কোন ঘটনাবলীর উৎপাদনে আমাদের নিজেদের দোষ ছাড়া অন্য মানুষদেরও কোন কারসাজি থাকে, তাহা হইলে তাহ ব্যর্থ করিবার নিমিত্ত আমাদিগকে সৰ্ব্বদা মন বাক্য ও কাৰ্য্যের উপর সাত্ত্বিক ও সংযত ভাবে কড়া পাহার রাখিতে হইবে। তাহা না হইলে আমরা আত্মকর্তৃত্ব লাভের সাধনায় সিদ্ধি লাভ করিতে পারিব না। দাঙ্গার সময়ে ও পরে কর্তব্যাকৰ্ত্তব্য আত্মরক্ষা ও সম্প্রদায়-নির্বিশেষে দুৰ্ব্বল অসহায়ের রক্ষা সকলেরই কৰ্ত্তব্য, ইহা যেন আমরা ভুলিয়া না যাই। ইহার জন্য স্বস্থ সবল দেহ চাই, সাহস চাই, মানুষের প্রতি প্রতি চাই, দল বাধিবার ও নিয়ম মানিবার ক্ষমতা ও অভ্যাস চাই, অন্ততঃ পক্ষে লাঠি চাই এবং তাহ চালাইবার শিক্ষা ও অভ্যাস চাই। শ্ৰীযুক্ত পুলিনবিহারী দাস লাঠিখেলার উপযুক্ত শিক্ষক। অন্য শিক্ষকও তিনি হয়ত দিতে পারিবেন। স্বসভ্য স্বাধীন দেশের অস্ত্র-আইন যেরূপ, আমাদের দেশের অস্ত্র-আইন তেমন না হইলেও, আইনের বাধ্য লোকদের পক্ষে বলুকের পাস পাওয়া আগেকার চেয়ে কিছু প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড সোজা হইয়াছে। অতএব যাহাদের উক্ত আইন অনুযায়ী যোগ্যতা আছে, তাহার। যথাসাধ্য বন্দুক রাখিলে ও তাহ চালাইতে শিখিলে ভাল হয়। মানুষ শক্তিশালী হইলে একদিকে তাহার যেমন কতকগুলি সদগুণ বিকশিত হয়, তেমনি কিছু দোষ জন্মিবারও সম্ভাবনা ঘটে। শক্তির অপব্যবহার করিবার প্রবৃত্তি একটা দোষ । “আমাদের জোর আছে, আমরা দলে পুরু আছি, অতএব অন্য লোকগুলাকে কিছু শিক্ষা দেওয়া স্বীকৃ, তাহা হইলে তাহার। আর কখনও কোন অসদাচরণ করিবে না,” কাহারও কাহার ও এরূপ মনে হওয়৷ অসম্ভব নহে । কিন্তু এরূপ ‘শিক্ষা দেওয়া প্রথমতঃ ধৰ্ম্মবিরুদ্ধ ও গৰ্হিত, দ্বিতীয়তঃ ‘শিক্ষা”টা মানুষ যত শীঘ্র ভুলে প্রতিহিংসার ইচ্ছা তত শীঘ্র লুপ্ত হয় না। সিপাহী বিদ্রোহের সময়কার ভীষণ “শিক্ষা” উভয় পক্ষই হুলিয়া গিয়ছে, কিন্তু প্রতিহিংসার ভাবটা এখনও যায় নাই ; জালিয়ানওয়াল বাগের “শিক্ষা” পঞ্জীবকে নিবীৰ্য্য করিতে পারে নাই । শক্তির সৰ্ব্বাপেক্ষ শ্রেষ্ঠ ব্যবহার দুৰ্ব্বল ও অসহায়ের রক্ষা এবং আত্মরক্ষা ; তারপর অত্যাচারী ও দুবৃত্তকে শাস্তি দেওয়াও কখন কখন বৈধ বিবেচিত হইতে পারে। কিন্তু কোন স্থলেই নিরপরাধ লোকদিগের উপর অত্যাচার করিয়া একটা আতঙ্ক জন্মাইবার চেষ্টা করা উচিত নয়। ডায়ার জালিয়ানওয়ালা বাগে তাহাই করিয়াছিল । দেশের লোককে সৰ্ব্বদাই মনে রাখিতে হইবে, যে, কোন সম্প্রদায়ের কতকগুলি লোক অন্যায় কাজ করিলে তাহা উক্ত সম্প্রদায়ের সমুদয় লোকের দোষ বলিয়া গণ্য হইতে পারে না। হিন্দুরা কতকগুলি মুসলমানের দোষে যেন সমুদয় মুসলমানকে, মুসলমানেরা কতকগুলি হিন্দুর দোষে যেন সমুদয় হিন্দুকে দোষী মনে না করেন। অধিকন্তু, যখন দেখা যাইতেছে, যে, মূনকল্পে সম্প্রদায়নির্বিশেষে সকলেরই হিতাকাঙ্ক্ষী একজন মুসলমান এবং একজন হিন্দুও আছেন, তখন এই উদার ভাব সকলের মধ্যে বিকশিত বা সঞ্চারিত হইবার সম্ভাবনা রহিয়াছে। সুতরাং কোনও সম্প্রদায় সম্বন্ধে নিরাশ হওয়া উচিত নহে। খবরের কাগজওয়ালাদের মধ্যে স্বভাবতই বেশী পরিমাণে নূতন নূতন খবর দিবার ঝোক থাকায় এবং