পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] আবেদন পাকৃড়াশী R8S কোন উপাযে মানুষের অস্তরেই আপন হইতেই অসহযোগী আকাংক্ষা জাগ্রত হইয়া উঠে, তাহা হইলে তাহা অপেক্ষ বাহির হইতে অসহযোগ প্রচার করিয়া অৰ্দ্ধসক্ষম হওয়া নিশ্চয়ই শ্রেয় নহে—” মহাত্মা বলিলেন, “উত্তম কথা । কিরূপে এই অসহযোগ-আবেগ মানুষের মনে যুক্তিতর্ক না দিয়াই জাগাইয়া তোলা সম্ভব, তাহ বলুন।” : আবেদন বলিল, “হিন্দু-সঙ্গীতের এক-একটি স্বর এক-একপ্রকার আবেগ প্রাণে জাগ্রত করিয়া তোলে। যথা সা শান্ত ভাব, রে করুণা, গা তন্ময় প্রেম, মা ভয়, পা সৎসাহস, ধা পরার্থপরতা, নি যুদ্ধাকাঙ্ক্ষা, এবং এই সকল স্বরের কড়ি কোমল ও পরস্পর মিশ্রণের সাহায্যে যে-কোনভাবে মানুষকে অনুপ্রাণিত করিয়া তুলা যায়। তাহার জন্য যুক্তি লাগে না, তর্কও লাগে না। আমি নি-বর্জিত পাগা- প্রধান একটি রাগিণী রচনা করিয়াছি । ইহার নাম দিয়াছি অসহযোগিয়া রাগিণী । ইহার স্বরতরঙ্গে যে একবার পড়িবে সে আর কখন বিদেশীর সহিত সহযোগে কিছু করিতে চাহিবে না । যেমন বহি উৰ্দ্ধগামী ও জল নিম্নগামী স্বভাবতই হয়, তেমনি এই রাগিণীর স্পর্শে মানবহৃদয় স্বভাবতই এরূপ অবস্থা প্রাপ্ত হয় যে তাহার পক্ষে স্বভাবতই ব্যথার ব্যর্থী ব্যতীত আর কাহারও সহিত কোন সম্বন্ধ রাখা সম্ভব হয় না । আমার অনুরোধ, আপনি ভারতের এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্ত অবধি এই স্বরের আঁগুন জালাইয়া দিন। দেখুন, অচিরে কি অপরূপ ফল আপনি পাইবেন ।” মহাত্মা আবেদনের সকল কথা শুনিয়া উদ্ভাসিতবদনে একবার হাস্য করিলেন । তা’র পর নিজের টেকোটি বাহির করিয়া কিয়ৎকাল কোন কথা না বলিয়া সম্মিতমুখে স্বতা কাটিতে লাগিলেন। অল্পক্ষণ পরেই আবেদনকে তিনি একগাছি স্থত স্বহস্তে উপহার দিলেন। একজন চেলা । আবেদনকে বলিল, “বাৰুজি, এইবার চলুন।” 影 আবেদন মহাত্মাকে প্রণাম করিয়া ব্যাগ লইয়া বাহির হইয়া গেল । - আহমেদাবাদ হইতে ফিরিয়া আসিয়া আবেদন আচাৰ্য্য প্রফুল্লচন্দ্র ও আচাৰ্য্য জগদীশচন্দ্রের সহিত সাক্ষাৎ করিল। রাসায়নিকশ্রেষ্ঠ প্রফুল্লচন্দ্র তাহার অসহযোগী রাগিণীর কথা শুনিয়া তাহার বুকে জোরে-জোরে কয়েকটা ঘূপি মারিয়া বলিলেন, “ইয়ংম্যান, তোমার ত দেখছি গায়ে বেশ জোর আছে—তুমি খন্দর বিক্ৰী ক’রে বেড়াও ; পারবে ।’ আবেদন তাহাকে প্রণাম করিয়া ক্ষুন্নমনে চলিয়া গেল । আচাৰ্য্য জগদীশচন্দ্রের নিকটে সে খঙ্গর ছাড়িয়া রেশমের একটি চীনা কোট পরিয়া গমন করিল। আচাৰ্য্যকে আবেদন অনুরোধ করিল, যে, তিনি যেন উদ্ভিদের উপর রাগ-রাগিণীর প্রভাব তাহার আবিষ্কৃত ক্রেস্কোগ্রাফের সাহায্যে যাচাই করিয়া দেখেন। আচাৰ্য্য সেকথায় বিশেষ কান না দেওয়াতে আবেদন রাগতভাবে বাহিরে গিয়া গাড়ীতে উঠিতে যাইবে, এমন সময় প্রসিদ্ধ মনোবিজ্ঞানবিদ ডাক্তার গিরীন্দ্রশেখর বস্বর সহিত তাহার দেখা হইল। আবেদন তাহার সহিত বহুক্ষণ গাড়ীতে বসিয়া আলাপ করিল এবং শেষ অবধি র্তাহাকে বলিল যে প্রত্যেকটি স্বরের মামুষের শরীরের আভ্যন্তরীণ ডাক্টলেশ গ্লাণ্ডের কার্য্যের উপর বিভিন্নপ্রকার প্রভাব আছে, তিনি এবিষয়ে “এক্সপেরিমেন্ট” করিয়া দেখিলেই সকল কথা বুঝতে পারিবেন। অমায়িক ডাক্তার-বাবু তাহাকে বলিলেন, “অবশ্যই হইতে পারে। তবে কিনা এবিষয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা কঠিন ।” আবেদন তাহাকে এ বিষয়ে আর পীড়াপীড়ি না করিয়া নিজ স্থানে গমন করিল। মহাত্মা গান্ধীর ও অন্যান্য লোকদিগের নিকট কোন উৎসাহ না পাইয়া আবেদন শাস্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের সহিত সাক্ষাৎ করিতে গেল। সেখানে বিশ্বকবি তাহার ভ্রমণ প্রভৃতির কথা শুনিয়া তাহাকে সাদরে নিকটে বসাইয়া বলিলেন, “আপনি ত আমেরিকা ও চীন অনেক ভ্ৰমণ করিয়া দেখিলেন, জগতের অনেক সমস্তার কথাও শুনিলেন ; এখন এই যে জগদব্যাপী দুঃখ ও দৈন্তের তাওব লীলা, ইহার শেষ কোথায় বলিয়া আপনি অকুমান করেন ?” আবেদন বলিল, “হিন্দু সঙ্গীতের উচ্ছ্বসিত আলাপ,