পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] প্রবাল |99 ছয় কেদারের রুদ্ধদ্বার একটু ঠেলা দিতেই আপনার হৃদয় খুলে দিয়ে প্রবালকে আসতে ঈঙ্গিত কবুলে ; কিন্তু প্রবাল ঘরে ঢুকে কেদারের পাশে প্রিয়ত্রতাকে দেখে একটু থতমত খেয়ে গেল। দুপুর বেলা যে কেদার আপনার ঘরে একলাটিই বিরহ অবসর যাপন করে আর বউটি শাশুড়ীর কাছে আশ্রয় নেয় তা সে ভাল রকমই জানত ; তাই সে সরাসর আসতে সাহস করেছিল। প্রিয়ত্ৰত প্রবালকে দেখে তখনি উঠে দাড়িয়ে মাথার ঘোমটা তুলে দিয়ে চটপট পালিয়ে গেল। প্রবাল নিজেকে সামূলে নিয়েছিল তাই চেচিয়ে বললে—“শুধু পালালে হবে না, বৌ-ঠান, কৰ্ত্তার চাকুরী হচ্ছে, একেবারে ইনস্পেকটারসীপ,—খাওয়াতে হবে। বিশেষ ক'রে দুর্মুখদের মিষ্টিমুথ করানোর প্রথা সংসারের চিরন্তন রীতি। নইলে নিন্দেয় কান পাতা যায় না ।” প্রিয়ৱতা প্রবালকে দেখে ঘোমটা দিলেও আলগোছে ঠাট্টা-তামাস খুব চালাত। তাই সে পালাতে-পালাতেও একটি ছোট কীল পেছন দিকে তুলে দেখিয়ে গেল ; যেন বললে “দুর্মুখদের জন্যে মিষ্টিমুখ নয়—মুষ্টিমুখই হচ্ছে উপযুক্ত ব্যবস্থা ।” প্রবাল হাসতে-হাসতে কেদারকে বললে “তোর বউএর ভাই কারেজ আছে বটে, এক মুহূৰ্ত্তে সনাতন রীতিকে ডিঙিয়ে মিষ্টির বদলে মুষ্টির ব্যবস্থ৷ ক’রে দিলে । তা কেদার—দিনের বেলায় মুখোমুখী করবার পাৰ্বমিশন কবে থেকে পেলিরে ?” কেদার হেসে বললে—“সাবালক হ’য়েও কি নাবালকের নিষেধ মেনে চলতে হবে নাকি ? বই যখন ছাড়লাম তখন বউটর নাগাল ত চাই। তুই যেমন এখনও আইবুড়ো কাৰ্ত্তিক হয়ে রইলি ।” প্রবাল কৃত্রিম নিঃশ্বাস ফেলে বললে—“আমার সাক্ষাৎভোজন আর কপালে জুটুল না দেখছি। ভ্রাণে অৰ্দ্ধ ভোজনেই তৃপ্ত হ’তে হ’বে । তোদের ভালবাসার যে স্বগন্ধ ভুর-ভুর ক’রে বেরুচ্ছে তাতেই আমি খুলী ভাই, তাতেই খুলী।” - কেদার বললে—“দেবীর-মা যে সম্বন্ধ এনেছেন শুনলাম বেশ ভাল সম্বন্ধ। তোর বাপ-মা সবারই খুব ইচ্ছে, তবে তোরই বা এত অমত কেন ভাই ?” প্রবাল এতক্ষণ দাড়িয়েই ছিল, এইবার একটু ভাল ক’রে বসে বলতে লাগ ল—“না ভাই বিয়ে এখন আমি কিছুতেই করতে পারব না। জান্‌ছিস ত শুধু মাষ্টারীতেই আমার দৃষ্টি লেগে নেই। পড়াতে-পড়াতে যাতে পরীক্ষা গুলো দিয়ে ফেলতে পারি তার চেষ্টাও করছি ; তারপর যদি অবস্থার কিছু উন্নতি করতে পারি তখন বিয়ে করব । এখন কিছুতেই ওদিকে মন দিতে পারছিনা। মা বলছেন বিয়ে ক’রে দেন শোধ কর । কিন্তু নিজের আয় থেকে সংসার খরচ যদি বারো মাস না চলতে পার্ল তাহ’লে আবার সেই দেনা দেন। তখন কি আবার বিয়ে ক’রে দেন শোধ করতে হবে না কি ? না ভাই, শ্বশুরের টাকা নিয়ে ঋণ শোধ ! এযেন ভাবতেও হাসি আসে, পুরুষ হ’য়ে জন্মেছি কি ঘুষ পাবার জন্তে ? শ্বশুরের মেয়েকে ত বিয়ে করলাম অলঙ্কার বক্স না হয় যৌতুক নিলাম, কিন্তু নগদ টাকা নিয়ে নিজের পৈতৃক ঋণশোধ ! এটা একটা হাসি আর লজ্জার ব্যাপার নয় কি ?” কেদার বললে—“তোমার মতন অতো খুৎ ধ’রে ব্যাপারটা সংসারে কেউ দেখেন প্রবাল । নগদ টাকাটা যৌতুক ব’লেই ধ’রে নেয়, আর প্রয়োজন মতো নিজেদের কাজে লাগায়। প্রবাল বললে—“আমারি মতন একদিন সবাই এটাকে হাসির আর লজ্জার ব্যাপার বলেই মেনে নেবে, আর তখন এমন ভাবে পণ নেওয়া সমাজ থেকে উঠেও যাবে ।” কেদার বললে—“সে স্বদূরের কথা, এখন কোন ভবিষ্যতের কুক্ষিগত—তা কে জানে ? তোমার আইবুড়ে৷ নাম তা হ’লে এখন তুমি খণ্ডাতে রাজী নও।’ দৃঢ়স্বরে প্রবাল বললে—“মোটেই না—বাড়ীতে বাপ রোগে ধু কৃছে দেনদার ক্রমাগত পাওনার জন্তে উত্ত্যক্ত করছে, আর আমি ছুটি—টোপর মাথায় বিয়ে করতে । না ভাই ও-সব বাজে দিকে মন দেবার এখন আমার অবসর নেই। এখন তোর কাছে কি বলতে এসেছি তাই শোন। আজকার কাগজে যে রকম পড়লাম তাতে পুলিস বিভাগের অবস্থা বড় জটিল হ’য়ে দাড়াবে। কলকাতায় মাণিকতলায়