পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ساوا)8 সমস্ত হইয়া ঘট-হস্তে গোগৃহে চলিল ; বিলাসিনীগণ নীলপদ্মকে কুমুদ্ৰমে কর্ণাভরণ করিল, ইত্যাদি। এই আলঙ্কারিক কল্পনার একটি অতি উপাদেয় দৃষ্টান্ত আধুনিক কাব্য হইতে উদ্ধত করিলাম। কৃষ্ণের লুকাচুরী পেলার উল্লেখ করিয়া সখীগণ বলিতেছে— গগনে যপন লুকাস তখন দেপিতে যে পাই মেঘে মেনে— হয় ঘনগুমি তোর তনুটির রঙ লেগে | চিনি চিনি ল'লে যদি দেরী হয়, তবে ভয় হাসিয়া ফেলিস্ রে চপল তুই চপলায়, মেঘ-আবরণে শিপিচুড় ঢাকা নাহি যায়-- ইন্দ্রধমুহে মাঝে মাঝে তাই উঠে জেগে – চপল অপেন অনুটি গোপন কেমনে করিলি মেঘে মেনে ? এই স্বত্রে আর একটি অতি সুন্দর কবিত। মনে পড়িতেছে— সীথীয় প্লাষ্ট্র সিপুর দেখে রাঙা হ’ল রঙন ফুল, সি দুর-টিপে, পয়ের টিপে কুচের শাপে জাগল ভুল ! নীলাম্বরীর বাহার দেখে রঙের ভিয়ান লাগল মেঘে, কানে জোড়া তুলু দেখে তার ঝুম্কে জব দোলায় দুলু, সরু সাঁথার সিদুর মেগে রাঙা হ’ল রওন ফুল ! তাঁর डद्रि তার কল্পনার আর একটি শক্তি প্রায় দেখা যায় —যাগ সম্পূর্ণ কাল্পনিক তাহাকে প্রত্যক্ষ করিবার কৌশল কবি জানেন । ‘শকুন্তলা’ নাটকে দুষ্ম্যন্থের বিমান-যাত্রা-বর্ণনায় আছে— অয়মরবিবরেভ্যশ্চাতকৈনিপতদ্ভির হরিভিরচির ভাসাং তেজসা চানুলিপ্তৈং । গতমুপরি ঘনানাং বারিগভোদরাণাং পিশুনয়তি রথস্তে শীকরকিল্লনেমিঃ ॥ [ রথ যে এখন বারিগর্ভ মেঘপুঞ্জের উপর দিয়া চলিয়াছে তাহ বেশ বুঝ। যাইতেছে ; কারণ, অরবিবরের মধ্য দিয়৷ চাতক যাতায়াত করিতেছে, অশ্বগৃষ্ঠে ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুতালোক বিলসিত হইতেছে, এবং সৰ্ব্বশেষে-গতিশীল রথের আলোড়নে মেথবাষ্প বারীভূত হওয়ার চক্রনেমি শীকরকিল্প হইয়াছে। ] উপরি-উদ্ধত কল্পনা-কীৰ্ত্তিগুলির অলঙ্কার নির্দেশ করিতে পারিব না ; কিন্তু তদুপরিবর্তে একটি নূতন অলঙ্কারের সন্ধান দিব, ইহার নাম দিয়াছি—‘কাব্যোক্তি" প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড ( যেমন “স্বভাবোক্তি' ) । একরূপ কল্পনা আছে তাহাতে বহুদিনের লুপ্তবিশিষ্ট আতর ও মাথাঘসা’র গন্ধের ন্যায়, প্রাচীন কাব্যবশিত নায়ক-নায়িকা বা স্থানবিশেষের নামসক্ষেতে অপূৰ্ব্ব ভাবের উদ্রেক হয় । ইংরেজ কবি কীটুন্‌ একদা নাইটিঙ্গেল পার্থীর গান শুনিয়া ভাববিহবল হইয়া লিথিয়াছিলেন— —Perhaps that selfsame song that found a path Through the sad heart of Ruth, when sick for home She stood in tears, amid the alien corn. ইহাব অনুবাদ অসম্ভব, কিন্তু তৎপরিবর্তে ইহার প্রায় অনুরূপ একটি বাংলা দৃষ্টান্ত দেওয়া যাইতে পারে। রবীন্দ্রনাথের একটি আধুনিক গানে, এই ধরণের কাব্যসংস্কার অপূৰ্ব্ববস্তু নিৰ্ম্মাণ করিয়াছে । ইংরেজী কবিতাটির মধ্যে যে কল্পনার হঠাৎ উৎন্মেধে রস গাঢ় হইয়া উঠিয়াছে, রবীন্দ্রনাথের কবিতায় বর্যার আকাশ প্রথম হইতেই সেই কল্পনায় আমুরঞ্জিত, তাই কবি গাইতেছেন— বল্লযুগের ওপার হতে আষাঢ় এল আমার মনে,

  • * × Σής

সেদিন এমনি মেঘের সর্ট। রেব নদীর তীরে, এমনি বারি ঝরেছিল স্যামল শৈল-শিরে । মালবিক অনিমিথে চেয়েছিল পথের দিকে, সেই চাহনি এল ভেসে কালে মেঘের ছায়ার সনে । এই কল্পনারই আর একটি অতি সুন্দর প্রমাণ রবীন্দ্রনাথের বিজয়িনী কবিতাটি—সেই যে অচ্ছেদ সরসী নীরে রমণী যেদিন নামিল স্নানের তরে— তারপর ঐ এক ‘অচ্ছেদে ভিন্ন আর কোনও নামের উল্লেখ নাই, কিন্তু তাহাতেই যেন সমগ্র কবিতাটির রস পরিস্ফুট হইয়া উঠিয়াছে। ওই একটি নামের সঙ্কেতে, কাদম্বর কাব্যের মদন-মোহিনী নায়িকার যাহা কিছু রূপ তাহার দেহ মনের অনবদ্য রূপভঙ্গি, কবিকল্পনার ইন্দ্রজালে ঘনাইয়া উঠিয়াছে। কবিকল্পনার পরিচয় হিসাবে যে কয়েকটি উদাহরণ সঙ্কলন করিলাম, তাহাতে ‘কল্পনা বলিতে কি বুঝায় তাহা কতকটা ধরিতে পার। যাইবে । ইহাতে অবাস্তব