পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ف ه R) নরেন বলিল, “অভয়বাবু বাড়ী আছেন?” সেই গলার স্বরেই উত্তর হইল, “বাবু বাড়ী নেই, আরো ঘণ্টা দুই পরে আসবেন।” নরেন আবার পথে হঁটিতে সুরু করিল। তাহার সঙ্গে ঘড়ি ছিল না, কাজেই পাঁচ মিনিটকে তাহার কখনও আধ ঘণ্টা বোধ হইতে লাগিল, কখনও বা আধঘণ্টকেই পাঁচ মিনিট বোধ হইতে লাগিল। পথে পথে অকারণে একটা মাতুষকে ঘুরিতে দেখিয়া পাহারাওয়ালা, চায়ের দোকানের ম্যানেজার পথের পথিক সকলেই যেন একটু সন্দেহাকুল চোখে তাকাইতে আরম্ভ করিল। নরেনের অত্যন্ত অস্বস্তি বোধ হইতে লাগিল, দীড়াইয়। ভাবিতে লাগিল, বাড়ীই ফিরিয়া যাইবে না কি । নিকটের কোনো একটা স্কুলের ঘড়িতে ঢং ঢং করিয়া দশটা বাজিয়া গেল। নরেন প্রথম কখন যে অভয় নন্দীর বাড়ী গিয়াছিল, তাহা ঠিক করিয়া বুঝিবার তাহার কেনে উপায় ছিল না, তবু আন্দাজে সে স্থির করিল আটটার সময়ই সে গিয়া থাকিবে । এখন গেলে হয়ত গৃহস্বামীর দেখা মিলিলেও মিলিতে পারে। ন মিলিলেও আর তাহার পথে পথে ধরিবার সাধ্যি ছিল না, শারীরিক এপ্তি তাহার মনের অশান্তির তাগিদকে ও অতিক্রম করিয়া তাহাকে ক্রমাগত ঘরে ফিরিতে ব্যস্ত করিয়া তুলিতেছিল। পাচ মিনিট জোরে জোরে পা চালাইয়া আসিয়া সে অভয় নদীর বাড়ীর সামনে পৌছিল । তাকাইয়া দেখিল দোতলার ছোট জানলাটি খোলাই আছে। দরজায় সজোরে আঘাত করিয়া সে ডাকিল, “অভয়বাবু!” , দরজাটা খোলাই ছিল, নরেনের হাতের ঠেলায় সেটা হড়tং করিয়া খুলিয়া গেল। অভয় নন্দীর বাড়ীতে এহেন ঘটনা বোধ হয় এই প্রথম । বার-পচিশ ধাক্কা না মারিলে এবং চীৎকারে পাড়াপ্রতিবেশীর ঘুম এবং আহবানকারীর গলা না ভাঙ্গিলে এবাড়ীর দরজা সন্ধ্যার পর কেহ কখনও খোলাইতে পারে নাই। সেই দরজা এমনভাবে খুলিয়া যাওয়াতে নরেন বেশ খানিকট অবাক হইয়া গেল, এবং দাড়াইয়া ভাবিতে লাগিল তাহার প্রবাসী—আষাঢ়, రిరికి [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড ভিতরে ঢোকা উচিত কি না । সাড়া শব্দও নাই। মিনিট দুই ইতস্তত করিয়া নরেন ঢুকিয়া পড়িল । অভয় নন্দীর সংসারে মানুষের মধ্যে তিনি এবং দুইটি বৃদ্ধ নারী। অতি বুদ্ধাটি তাহার জননী, অন্তটি ঝি। সে সারাদিন থাকিয়া বাড়ীর রান্নাবান্না, বাসন মাজা, বাজার করা প্রভৃতি সব কাজই করে, রাত্রে বাড়ী চলিয়া যায়। সুতরাং ভিতরে ঢুকিয়া কাহারও সাড়াশব্দ বা চিহ্ন না পাইয়া নরেন বিশেষ আশ্চৰ্য্য হইল না। ঝি নিশ্চয়ই এতক্ষণ বাড়ী, গিয়াছে। বাড়ীর বৃদ্ধ গৃহিণী চোখেও দেখেন না, কানেও শোনেন না, তিনি এতক্ষণ নিশ্চিন্থ মনে নিদ্রা দিতেছেন। কিন্তু অভয়বাবু থাকিতে র্তাহার বাড়ার দরজা রাত্রিকালে থোলা, এ বড় আশ্চৰ্য্য । আর তিনি যদি বাড়ীতে নাই থাকেন, তাহা হইলেই বা দরজ খোলা কেন ? ভাবিতে ভাবিতে নরেন দোতলায় উঠিয়া আসিয়াছিল । অভয় নন্দীর ঘরের ভিতরও আলো নাই, কিন্তু দরজা একটুখানি খোলাই রহিয়াছে বলিয়া তাহার মনে হইল । পকেট হাতড়াইয়া দেখিল একটা দেশলাইয়ের বাক্স তথন ও পকেটে বিরাজ করিতেছে । তাহার সিগারেট খাইবার অভ্যাসটা খুব বেশীই ছিল এককালে, কিন্তু পয়সার অভাবে এখন আর সিগারেট তাহার জুটিত না, কেবল দেশলাইয়ের বাক্সটাই অকারণে তাহার জামার পকেটে ফিরিত। দেশলাইয়ের বাক্স বাহির করিয়া সে ফশ করিয়া একটা কাঠি জালিল। ঘরের ভিতরের জমাট অন্ধকার আলোর আঘাতে নিমেষে টুটিয়া যাইতেই, নরেন ভয়ানক চম্কাইয় একলাফে ঘরের বাহিরে আসিয়৷ দাড়াইল । দেশলাইয়ের কাঠি তখনই পুড়িয়া শেষ হইয়। গেল, কিন্তু আর একবার আর একটা কাঠি জালাইবার সাহস সে আপনার মধ্যে খুজিয়া পাইল না। ঘরের ভিতরের দৃশুটি ঐ দুই তিন মুহূৰ্ত্তের মধ্যেই তাহার স্মৃতিপটে কাটিয়া কাটিয়া যেন বসিয়া গেল । ঘরের মেজেতে জিনিষ পত্র, কাগজ বই চারিদিকে ছড়ানো। ভাঙা টেবিলটা তাহার উপরের পুরানো ভিতরে অন্ধকার, কোন