পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

¢ፃ :- . প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড হরিকেশব বলিলেন, "ঘরে এক সমস্ত সংসারের সঙ্গে কি আমি যুদ্ধ করতে পারব ? সংসার যে আমার বিরুদ্ধে। আমার সমস্ত শক্তি ক্ষয় হ’য়ে যাবে কেবল লড়াইয়ে ; মেয়ের জন্য ত কিছু করা হবে না। তা ছাড়া সেই লড়াইয়ের এক-একটি ঘা এসে তার বুকেও যে পড়বে। তার থেকে সে এই কচি মনটি নিয়ে বেঁচে উঠবে কি করে’ ? তাকেই যদি সংসার পিশে ফেলে তবে মুক্তিই ব। আমি দেব কাকে প্রায়শ্চিত্তই বা কবুব কাকে নিয়ে ? এই আনন্দ-উৎসবের মাঝখানেই যে আঘাত আর লড়াই-. এর সময় আসন্ন হয়ে উঠেছে তার পরিচয় কি কালকেই পাওনি ? এখানে থাকতে হ’লে হয় আমাকে ওই দ্বন্দ্বআঘাতের তলায় এই ছোট মেয়েটাকে নিয়ে তলিয়ে যেতে হবে, নয় সংসারে নানা অস্বথ ও অশান্তির হষ্টি করে’ পরকে দুঃখ ও আঘাত দিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠা বজায় রাখতে হবে। তার চেয়ে চল না তরু, আমরা এই তিনটি প্রাণী কিছু দিনের মত দূরে চলে যাই । সেখানে হয়ত শাস্তি পাব, হয়ত মনটা অনেক দুঃখ ভুলে’ আবার তাজা হ’য়ে কাজে নামৃতে পারবে ।” স্বামীর বেদন সমস্ত। দ্বন্দ্ব সমস্তই তরঙ্গিণী বুঝিয়াছিলেন ; কিন্তু তাহার রমণীর মন সংসারের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য অচ্ছেদ্য বন্ধন কি করিয়৷ হঠাৎ ছিড়িয়া যাইবে, ভাবিয়া পাইতেছিল না । এই সামনে ময়নার বিবাহ, একরকম স্থির হইয়াই গিয়াছে ধরা যায়। কে সে কৰ্ম্মসমুদ্রে কর্ণধার হইয়া কাৰ্য্য উদ্ধার করিবে ভাবিয়া কুলকিনারা মিলে না। ময়নার বাবা মেয়ের গহন কাপড়গুলাই দিবেন, কিন্তু তাহার পর এই দীর্ঘকালব্যাপী বিরাটু যজ্ঞ-ব্যাপার, এই তত্ত্ব-তল্লাস, বিদায়, প্রণামী, আশীৰ্ব্বাদী, আদর-অভ্যর্থনা, সভা-বৈঠক, যানবাহন ইত্যাদির ধে অজস্র খরচ সে ত তাহারই স্বামীর তহবিল হইতে যাইবে । সে-সব খরচের ভার আজ পর্য্যন্ত কোনো কাজে কাহারও হাতে তিনি সাহস করিয়া ছাড়িতে পারেন নাই, তাহারা এলোমেলো করিয়া পাছে সংসারটা ডুবাইয়া দেয় এই ভয়ে। আজ অনভিজ্ঞ ও দায়িত্বজ্ঞানহীন তাহাদেরই হাতে সব ফেলিয়া স্বামীকে কপদকশূন্ত করিয়া তুলিবার সাহস তাহার আসিবে কোথা হইতে ? বাড়ীতে এই যে এতগুলি পোষ্য, ইহাদের কেহ যদি বা দুই পয়সা আনে ত নিজের পুজিতেই তাহা তুলিয়া রাখে। কাজেই সংসারে তাহাদের ভার যে লইয়াছে, হিসাব করিয়া তাহাদের খরচষ্টা একটা সীমার মধ্যে রাখিবার ব্যবস্থাও তাহাকে করিতে হয় । সংসারের মাথা যদি আজ সরিয়া দাড়ায় তবে সকলেই কৰ্ত্ত হইয়া উঠিলে হয় নিঃসম্বল পোব্যকে দুঃখ পাইয়া দূরে চলিয়া যাইতে হইবে, নয় তাহার স্বামীটি দানছত্র খুলিয়া যাইবেন এবং দশ জন নিৰ্ম্মম ভাবে তাহার রক্তশোষণ করিয়া আপন আপন অঙ্গ পুষ্টি করিবে। নূতন যে আর-একটা সংসার গড়িয়া তাহার দূরে দূরে ঘুরিবেন, তাহ অর্থ ত জোগাইবেই না বরং অনেক দাবী করিবে। কোথা হইতে আসিবে তাহার খোরাক যদি এমন উদাসীন ভাবে ভাণ্ডারের চাবি দশ জনের হাতে ফেলিয়া চলিয়া যাওয়; যায় ? তরঙ্গিণী স্বামীকে আর-কিছু বলিতে পারিলেন না ; কিন্তু একের পর এক করিয়| শাশুড়ী, ননদ, দেবর, জা, ছেলে বেী, নাতি-পুতি সকলকার ভাবনা তাহাকে ঘিরিয়া ধরিতে লাগিল । কে র্তাহার অভাবে অযত্বে দুঃখ পাইবে, কে অবিবেচনায় সংসারটা ছাইরাই করিয়া ফেলিবে, কে অভিমানে মুখ বুজিয়া কষ্ট সুহিবে কিন্তু একটা কথাও জানাইবে না, কে র্কাদিয়া আকুল হইবে, সব যেন তিনি চোখে দেখিতে পাইতেছেন । ঘরের ঝি চাকর, গরু-বাছুর তৈজসপত্রগুলার জন্য পৰ্য্যন্ত মনটা কেমন করিতে লাগিল । তাহাকেই কেন্দ্র করিয়া ইহারা ঘুরিতেছিল। আজ তিনি কোন অজানা আবেষ্টনের ভিতর গিয়া পড়িবেন আর ইহার এখানে ছত্রভঙ্গ হইয়া কাহাকে যে অবলম্বন করিবে ভাবিয়া পাইবে না । ( br ) প্রতিদিনের মতই সকালের আলো ঘর দ্বার উজ্জল করিয়া তুলিল। খোকা ডাক দিল,“থাম্ম, খোকা দাকৃছে ?” তরঙ্গিণী বাহিরে আসিলেন; কিন্তু খোকার কলোচ্ছাসে দিনের আলো আজ উজ্জলতর বোধ হইল না। র্তাহার রুদ্ধ অশ্রুর বাম্পে আজ সমস্ত মলিন দেখাইতেছিল । ঠাকুম খোকাকে কোলে করিয়া বুকে চাপিয়া বলিলেন,