পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

«ፃ8 লাবণ্য বিপদ দেখিয়া বুদ্ধি করিয়া বলিল, “আরে দূর বোকা মেয়ে, এখনি কি জন্যে ছুটেছিস কাকীমার কাছে ? ময়নার বিয়ের এখন অনেক দেরী আছে। তুই ফাঁকতালে বেড়িয়ে আয় না, এইবেল। আর কারুর ভাগ্যে ত জুটুবে না।” গৌরীর বন্ধুপ্রীতি উথলিয়া উঠিল ; সে মার আঁচল ধরিয়া টানিয়া বলিল, “তা হ’লে ময়নাকেও নিয়ে চল না, মা । বেশ দুজনে কেমন বেড়াব !” ম। তাহার কখার জবাব না দিয়। তাড়াতাড়ি আঁচলটা ছাড়াইয়া লইয়া নীচে চলিয়া গেলেন । কলতলায় বিধু ঝি কোমরে আঁচল জড়াইয়া বাসন মাজিতে বসিয়াছিল ; সে গিন্নিকে দেখিয়া আসিয়া হুমড়ি খাইয়া পায়ে পড়িল, “হেই মা, আমাদের কার হাতে ফেলে দিয়ে যােচ্ছ মা ? তুমি চলে গেলে মেজমা ত আমাদের একটা কথা কানেও করবে না ; আর ছোট মা সারাদিন খিটির খিটির করবে। তবে মা, আমাদের হিসাব চুকিয়ে দাও, আমরা চলে যাই । তুমি না থাকূলে এবাড়ীতে আর কাজ করবনি।” নিশি ঝি উঠান ঝাট দিতেছিল, সে ঝাটা ফেলিয়৷ ছুটিয়া আসিয়া বিধুর কথায় সায় দিয়া বলিল, “হ্যা মা, জগুও তাই বলছিল ; আমাদের তবে হিসাব মিটিয়েই দাও।” তরঙ্গিণী স্নান হাসি হাসিয়া বলিলেন, “কেন রে, তোদের এত হৈ চৈ কিসের ? আমাকে কি তোরা নিমতলার ঘাটে পাঠাচ্ছিস যে, এজন্মের মত সব হিসেব মিটিয়ে যেতে হবে ? আমার ঘর-সংসার কি আঞ্জ থেকেই শেষ হ’ল ?” 龜 নিশি জিব কাটিয়া বলিল, “ষাট, যাট, মা অমন কথা মুখে আনতে আছে ? তুমি জন্ম জন্ম তোমার ঘরে রাজত্ত্বি কর । আমরা গরীব দুধী, দিন আনি, দিন থাই ; তাই মা দুদিনের ভয়েও মরি।” বাহির বাড়ী - হইতে তরঙ্গিণীর ছোট তিন ছেলে অন্যান্য ছেলেদের সঙ্গে ভিতরে মুখ হাত ধুইতে আসিতেছিল। মাকে দেখিয়া তাহারা আজ পাশ কাটাইয়া চলিয়া গেল, যেন দেখিতেই পায় নাই । , ছোট ছেলে শঙ্করপ্রসাদ অনেক দিন পৰ্য্যন্ত মার আমুরে কোলের ছেলে ছিল। আট বৎসর বয়স পর্য্যন্ত প্রবাসী—শ্রোবণ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড রাত্রে মায়ের গায়ে পা না তুলিয়া দিয়া এবং মুখখা ন; পাখীর ছানার মত মায়ের বুকের ভিতর না গুজিয়া দিয়া সে ঘুমাইতে পারিত না । মায়ের আদর পাইয়া পাইয়া কান্নাকাটি মান অভিমানে সে অনেকটা মেয়েদের মতই দুৰ্বস্ত হইয়া উঠিয়াছিল ; সেইজন্য বেশী বয়স পৰ্য্যস্ত “পানসে চোখের” জন্য দাদাদের কাছে তাহাকে যতখানি ধিক্কার পাইতে হইত, ডানপিটেমির অপবাদ ততখানি জীবনে তাহাকে কখনও সহিতে হয় নাই । তাহার আট বৎসর বয়সে গৌরী যখন অকস্মাৎ মাকে বেদখল করিয়া লইল, এবং অতটুকু কচি মেয়ের পাশে তাহার আট বছরের শিশুত্বট যখন মা বাবার চোখেও বেমানান ঠেকিতে লাগিল, তখন হইতেই গৌরীর প্রতি তাহার মনে কেমন একটা ঈর্ষার সঞ্চার হইয়াছিল । সে গৌরীকে আর সকলের কাছে খুব ঘটা করিয়া ভালবাসিত, আদর দেখাইত এবং নিজের একটা মূল্যবান সামগ্ৰী বলিয়া গৰ্ব্ব ও অনুভব করিত, কিন্তু বয়সের অতখানি তফাৎ হুইলেও মাকে লইয়া এবং তাহার ভালবাসার লঘুত্ব গুরুত্ব বিচারে গৌরীর সঙ্গে তাহার একটা রেসারেসির ভাব বরাবর থাকিয়া গিয়াছিল। এদুর্বলতাট। সে ছাড়িতে পারিত না । গৌরী কথ। বুঝিতে এবং বলিতে শিখিবার পর সে যখন তথন গৌরীকে মায়ের কোল হইতে ঠেলিয়া সরাইয়া দিয়া বলিত, “যা, বেরো আহলাদী মেয়ে, কোথা থেকে একটা ঢেপ সী মেয়ে এসে আমার এতদিনের মাকে কেড়ে নিয়েছে ! যা, তোকে দেব না ।” গৌরী কান্না জুড়িয়া দুই হাতে চড় চাপড় চালাইলে কখনও কখনও শঙ্কর সদয় হইয়া পিতাকে গৌরীর সম্পত্তিরূপে দান করিয়া দিতে রাজি হইত, কিন্তু মাতাকে বেহাত করিতে তাহার বিশেষ আপত্তি ছিল । আজ একদিনের আয়োজনে বিদায়ের কোনো ভূমিকাই না করিয়া গৌরীর জন্ত মাকে চলিয়া যাইতে দেখিয়া শঙ্করের মনে এই উনিশ বৎসর বয়সেও শৈশবের সেই ঈর্ষা জাগিয়া উঠিয়াছিল। কিন্তু এবয়সে ঈর্ষ। অভিমানরূপেই বেশী প্রবল হইয় উঠে, তাই আজি সে মাকে কিছু না বলিয়া মুখ ধুইয়া তাড়াতাড়ি বাহিরের ঘরে গিয়া জগুকে ডাকিয়া বাজারের খাবার জানিতে