পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

¢ፃ¢. তুমি যদি না মা, হাসিমুখে আমাদের যাত্রা করাও তবে কি ঘর ছেড়ে বেরোতে পারি ? তোমার পায়েই ঘরসংসার সব ফেলে’ যাচ্ছি ; একদিন তুমিই একে গড়েছিলে, জানি আজও তুমিই একে রক্ষা করবে ; আর দূরে থেকে তোমার গৌরীকে আশীৰ্ব্বাদ করবে যেন ওর জীবনট। আমরা কোনো দিকে সার্থক করে তুলতে পারি।” বড় ঠাকরুণ বলিলেন, “কি আর বলব মা কচি মেয়েকে ? ভগবান ধৰ্ম্মে ওর মতি দিন, তাকে চিনতে শিখুক, সারাজীবনের দুঃখ আপনি জয় কবৃতে পারবে।” জা, ননদ সকলেই এতকাল তরঙ্গিণার উপর নির্ভর করিয়াছে, আজ অকস্মাৎ তাহাকে সরিয়া দাড়াইতে দেখিয়া সকলেই একটু বিচলিত হইয়া পড়িল—এত বড় সংসার টুক্র টুকুর ভাগ করিয়া ত’ চলিবে না, না জানি কাহাকে সব ঋকি পেহ্লাইতে হইবে । শাশুড়ী আজ আপনি ব্যবস্থা করিয়া বলিলেন, “মেজ বেীমাকেই সব বুঝিয়ে দাও মা, যা পারে ওই করবে। টাকার ঝকি ত আর বইতে হবে না। সে ত আমার কেশব দূরে থেকেও সমানে মাথায় করে’ বইবে জানি ।” সৰ্ব্বকৰ্ম্মে-উদাসীন মেজবেীর গৃহিণীপনায় কাহার ও মন উঠিল না বটে, তবে রুদ্রমূর্তি ছোটবেী অপেক্ষ মেজবেীকে সকলেই মন্দের ভাল বলিয়া স্বীকার করিতে বাধ্য হইল। আদর যত্ন সুবিচার না পাওয়া স্বাকৃ, তরঙ্গিণীর সর্বব্যাপী স্নেহস্পর্শ আর না জুটুক, অত্যাচার অবিচারের ভয় যে বেশী নাই, ইহাই সাত্ত্বনা। বালক বৃদ্ধ, দাসী চাকর সবাইকে যেন মাতৃহার অসহায় শিশুর মত তরঙ্গিণীর মনে হইতেছিল। মেজবেীকে দুই হাতে গলা জড়াইয়া ধরিয়া তিনি বলিলেন, “সংসারটার উপর চোখ রাখিস ভাই । দূর থেকে তোকে মনে করে আমার মনটা নিশ্চিন্ত হবে, এইটুকু আশ্বাস আমায় দে।” . বারে বারে নানা জনের হাতে সংসারটা সপিয়াও তিনি নিশ্চিন্ত হইতে পারিতেছিলেন না। কিন্তু দিন বহিয়া যাইতেছিল, এখন বন্ধন ছিন্ন না করিয়া গতি নাই ; তাহাকে যাত্রার আয়োজনও ত করিতে হইবে। সন্ধ্যা ঘনাইয়। আসিল ; সমস্ত সংসারটার উপর যে গাঢ় প্রবাসী—শ্রাবণ ১৩৩e [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড অন্ধকারের কালিমা ছাইয়া পড়িয়াছে, বাতির আলোতে তাহা আরো নিবিড় দেখাইতেছিল। এতবড় সংসারের নানা প্রয়োজন ও অপ্রয়োজনের যত কোলাহল, শিশু ও বয়স্কের হর্ষ ও বিষাদের যত রকমের প্রকাশ সব আজ নিস্তব্ধতায় ডুবিয়া গিয়াছে। ইাকডাক, কান্নাকাটি, ঝগড়াঝাটি, গল্পগুজব কোথাও কিছুর সাড়া নাই। গৃহসৰ্ব্বস্ব এই সংসারের বাহিরের সঙ্গে বড় সম্পর্ক ছিল না । আজ বিচ্ছেদরুপে অকস্মাৎ বাহিরের হাওয়া ঘরে আসিয়া পড়িয়া সকলের দৈনন্দিন সহজ জীবন-স্রোতকে হঠাৎ রুদ্ধ করিয়া দিয়াছে। বাহির পানে এই যাত্রার আয়োজন গৃহামুরাগী পুরাতন সংসারে যেন একটা দুৰ্দৈব । জগতে এমন অঘটন যেন কখনও ঘটে না ; তাই সকলেই বিস্ময় ও বেদনায় স্তম্ভিত হইয়া আছে। সময় হইয়া আসিল । গাড়ীতে জিনিষপত্র উঠিয়াছে। ময়নাকে সঙ্গে করিয়া লইয়া যাইতে না পারায় গৌরী সান্তন। স্বরূপ তাহার মেঘমালা প্রভৃতি সব পুতুলগুলি ময়নাকে দান করিয়া ফেলিল। টিনি শৈল ট্যাবাকেও সে বঞ্চিত করে নাই। কাশীর খেলনা, চিনামাটির ইসি প্রভৃতি যা কিছু সম্পত্তি তাহার ছিল দাতাকর্ণের মত সকলকে তাহ ভাগবাটোয়ারা করিয়া দিয়া নিঃসম্বল হইয়াই সে আজ চলিয়াছে । হরিকেশব তাহার লম্বা ছুটির জন্য দরখাস্তখানা পুত্র শিবপ্রসাদের হাতে দিয়া ও সেই সঙ্গে একটা বড়রকম চেকও তাহাকে বুঝাইয়া দিয়া ঘরের বাহির হইলেন । কাল অকস্মাং যাত্রার প্রতিজ্ঞ করিয়া ফেলিলেও আজ যেন ঘর ছাড়িয়া তাহার প৷ উঠিতেছিল না। এই চিরপরিচিত গৃহদ্বার, এই তাহার চিরসার্থী জীর্ণ পুথি ও পুরাতন আসবাবগুলিও যেন মুখ অন্ধকার করিয়া অভিমানভরে বলিতেছে, “আমাদের ফেলে কোথা যাও?” মনে হইতেছে মাতা পুত্র ভাইবোন সকলের কাছে তিনি যেন অপরাধী। তাহাদের ছাড়িয়া যাইবার অধিকার কি তাহার আছে ? সেই কল্পিত অপরাধের লজ্জায় তিনি মুখ তুলিয়া সকলের দিকে তাকাইতে পারিতেছেন না । দূরে থাকিয়াও তিনি যে তাহাদের সাহায্য যথাসাধ্য করিবেন এটা যেন কৈফিয়তের মতই সকলকে বুঝাইয়া