পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] কাব্য-সাহিত্য সমালোচনা &సి) সব সমালোচনার চৌদ্দ আনাই অনেক সময়ে নিরবচ্ছিন্ন পদোদ্ধারের লহরীমাল । সৰ্ব্বশেষে বিজ্ঞান-মূলক zil theoreical x{SIjলোচনা। এই সমালোচনাতে অনেক মূল্যবান জিনিষ পাওয়া যায় এবং ইহা নিশ্চয়ই পাঠের যোগ্য । ইহাতে কাব্যের দার্শনিক বা বৈজ্ঞানিক তত্ত্বার্থ বুঝাইয়া দিবার চেষ্টা করা হয়। এই যে একটি কবিতা তোমার সম্মুখে রঙ্গিয়াছে ইহার অন্তর্নিহিত সত্যটি কি ? কোন গুঢ় নীতির উপর ইহার প্রতিষ্ঠা ? কোন বিশ্বজনীন ভাব চহাতে স্বীকৃত হইয়াছে ? এইসব দেখাইবার প্রয়াস । মূল কবিতাটিকে বা কাব্যখানিকে বিশেষরূপে অবলম্বন করিয়া এবং তাহাকে ঘনিষ্ঠভাবে কেন্দ্র করিয়া যখন এই সমালোচন ক্রিয়মান হয় তখন ইহা নিশ্চয়ই উপাদেয় জিনিষ। কিন্তু এই সমালোচনা অনেক সময়ই— আমাদের দেশে—শুন্ত-গর্ভ ভাব-প্রবাহ মাত্রে পর্য্যবসিত হইয়া যায়। একটা গুরু-গম্ভীর চিন্তা-পরম্পরায় সঘন ঘোরাড়ম্বরে সমাচ্ছন্ন হইয়া কাব্য কোথায় পড়িয়া থাকে তাহার উদ্দেশ থাকে না । এই জাতীয় সমালোচনা পাঠকের পক্ষে ভয়াবহ । রবীন্দ্র-কাব্যের এইপ্রকার সমালোচনা করিয়া কোনো-কোনো ব্যক্তি অশেষ যুশ অর্জন করিয়াছেন। এক শ্রেণীর লোক আছে, যাহাঁদের অভ্যন্তরে অন্বেষণ করিলে বিশেষ কিছু পাওয়া যাইবে না। কিন্তু চেহারাগুলি এমন মাননীয় মুগম্ভীর সন্ত্রমবান যে দেখিলেই শ্রদ্ধা করিতে হয় । এই সমালোচনা গুলি সেই শ্রেণীর । একটি ছোট্ট উদাহরণ দেই । Hail to thee, blithe Spirit ! Bird thou never wert. এই দুই লাইন,কবিতার সমালোচনার নমুনা দিই। (১) অন্ধ-নিন্দাবাচক । (ক) একটি বিহঙ্গ সম্বন্ধে ইহাতে একটি অর্থহীন শূন্ত ভাব প্রকাশ করা হইয়াছে। এই ভাবের পশ্চাতে কোনো বস্তু নাই । ● (খ) পার্থীকে পার্থী বলিলে ত আর কবিতা হয় না ! তাই এখানে বলা হইয়াছে যে-হে পাখী, তুমি পার্থী নও ! যেন হয় কে নয় বলিলেই কবিতা হয় ! কবি-ত বটে ! (গ) একটা ফাক বাজে খেয়াল । না লিখিলেও চলিত । (২) অন্ধ-প্রশংসা-বাচক । (ক) দেখ দেখি কি মুন্দর ভাবটি ! তোমার আমার কাছে পার্থী, কিন্তু কবির কাছে তাহ Spirit. এই Spirit কথাটির মধ্যে কত কবিত্ব ! (খ) পাখীকে পার্থী বলিয়া স্বীকার না করিয়া কবি যে গভীর ভাবের আভাস দিয়াছেন তাঙ্গ প্রকাশ করা অসম্ভব। এ শুধু অহুভবের বিষয় । প্রাণ দিয়া অনুভব করিতে হইবে । (গ) আহা কি চমৎকার ভাবখানি । প্রাণ যেন নাচিয়া উঠে ! যেন হিয়ার মাঝারে একটা অজানা ভাব ফুটিতে চাহিয়া ফুটিতে পারে না ! পার্থী তুমি নষ্ট ! কি মুন্দর । (৩) বর্ণনাত্মক । এই দুই ছত্রে কবি একটি পক্ষীকে স্বাগত সম্ভাষণ করিতেছেন। ইহাকে আনন্দময় বলা হইয়াছে। অদৃশ্য বলিয়া অথচ অন্য কোনো কারণে ইহাকে অশরীরী কোনো কিছু বলিয়া উৎপ্রেক্ষা করা হইয়াছে। ইহা এখন ত পার্থী নয়ই, যেন কোনোকালেও পার্থী ছিল না। (৪) বিজ্ঞানমূলক । এখানে একটি ভরত পক্ষাকে অদৃশ্যমান ভাবরূপী বলিয়। কল্পনা করা হইয়াছে । কিন্তু বাস্তবিক ইহা কল্পনা নহে । শুধু পক্ষ নয় ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য পদার্থ মাত্রই প্রকৃত পক্ষে এক-একটি ভাব। এক-একটি idea কিংবা এক-একটি spirit ব্যতীত আর কিছুই নহে। আমরা যে ইন্দ্রিয়দ্বারের বিষয় অনুভব করি তাহা সম্পূর্ণ ভ্ৰমাত্মক। আমরা যাহা দেখি সবই মায়া বা illusion. এই মায়ার পশ্চাতে সত্য আছে। তাহ আমরা জানি না। কিন্তু ইংরেজীতে যাহাঁকে spirit বলা হয়, বাস্তবিক ইহা কি, বিশেষ প্রণিধানপূর্বক বিচার করিয়া দেখা উচিত। তাহার কোনো প্রকার শরীর আছে কি ? না অশরীরী ? তাহ। কি সত্য সত্যই ভাব মাত্র ? কিন্তু ভাব মনের বাহিরে কি