পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

و هوا আর্থিক অস্বচ্ছলতার দুঃখ দূর করিতে পারে, কিন্তু মা বোনের চেষ্টায় অশোকার মনের অবস্থা এখন এমন দাড়াইয়াছে যে ফাকা আনন্দে তাহার আর মন উঠে না ; সে চায় সাজ-সজ্জা, বিশ্রাম, বিলাস ; এগুলি অর্থসাপেক্ষ এবং ললিতমোহনের আর যাই থাকু এই অর্থজিনিসটার অভাব ছিল । ললিতমোহনের প্রথম উপন্যাস ‘কালের কোপ’ বেশ কাটিয়াছিল এবং সে ভবিষ্যতের অনেক রঙ্গীন স্বপ্নও দেখিয়াছিল। কিন্তু দ্বিতীয় বই ‘মহুর মা' একেবারেই কাটিল না। সেই নিশ্চিত ২১ly ও প্রথম উপন্যাসের আয় হইতে গোড়ার দিকে সংসার বেশ চলিয়াছিল, কিন্তু সম্প্রতি তাহা প্রায় অচল । বর্তমানের সামান্য আয়েই স্বামীস্ট্রীর বেশ চলিয়া যাইত ; কিন্তু রায়-বাহদুরকন্যা অশোকার খরচের হাতট বেশ একটু বেশী ছিল । ভালবাসার দিকে আজকাল যেমন সে ভালবাসার দাবী করিত, কিন্তু ভালবাসিত না, খরচের বেলায়ও খরচ করিয়া যাইত, সঞ্চয় করিত না । সংসার আরম্ভ করিবার প্রথমদিকে ম৷ বলিতেন, “বেবী, তোর মত এমন স্বন্দরী বউ পেয়ে ললিতের আয়ের দিকে নজর দেওয়া উচিত। দামী কাপড়চোপড়ে তোকে কেমন মানায় এটা লক্ষ্য করা তার কৰ্ত্তব্য । এই পোড় কাব্যি-নবেল লেখা ছেড়ে সে কোনো ব্যবসা করে না কেন ?” সাহিত্যিক-গৃহিনীর আত্মমর্য্যাদার নেশা তখনো কাটে নাই। সে মায়ের দিকে রোষ-কটাক্ষ নিক্ষেপ করিয়া চুপ করিয়া থাকিত । এখন তাহার মন ভাঙিয়াছে । সকাল নাই, সন্ধ্যা নাই, ম। বোন ও সঙ্গীরা সহানুভূতি দেখাইতে আসিয়া তাহার ঘরে জটলা পাকায় ; এই হট্টগোলে বেচার ললিতের সমস্ত কাজ বন্ধ হইয়। গিয়াছে। সে নিরিবিলিতে একবারও কাগজ কলম লইয়া বসিতে পায় না। সে ভাবে, আহা, অশোকাকে এর ভালবাসে, তাই আসে । সে চুপ করিয়া থাকে । কিন্তু ক্রমশ: এসব অসহ্যহইয়া উঠিল, তাহার কাজের অত্যস্ত ক্ষতি হইতেছে ; নিষ্ফল আক্ৰোশে তাহার মেজাজও খিটখিটে হইয় পড়ি প্রবাসী—শ্রোবণ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ঙ্গখণ্ড য়াছে। স্ত্রীর অবিবেচনায় আর মনের সঙ্গে যুদ্ধে সে আজ অমুস্থ । সে চুপি চুপি এক ডাক্তারের কাছে গিয়া পরামর্শ চাহিল। পরীক্ষা করিয়া ডাক্তার বলিলেন—পাড়াগায়ে এই হট্টগোলের বাহিরে ফাকা জায়গায় কিছুদিন বাম না করিলে তাহার শরীর সারিবে না। রোগের ওষুধ শুনিয়া ললিত একটু হাসিল । স্থান পরিবর্তন—হায় রে, সে না জানি কত টাকার ব্যাপার ! ডাক্তার অবাকৃ হইয়া বলিলেন, “হাসির ব্যাপার না মশাই, আপনার বুকটা—” ফ্যাকাশে শীর্ণ মুখখানি ডাক্তারের দিকে তুলিয়া ললিত আর একবার হাসিল । ডাক্তার বুঝিলেন ও মৃদুহাস্য করিলেন। ললিত বলিল—“আমার বুকট হাসির ব্যাপার নয়—আপনার প্রেস্ক্রিপশন শুনে হামি আসছে—আমার পক্ষে বেশ একটু রাজকীয় রকমের ওষুধের ব্যবস্থা করলেন কিনা।” ললিত বাড়ী আসিল এবং হাওয়া পরিবর্তন, বুকের অস্থখ ইত্যাদি ভুলিয়া একাগ্রচিত্তে তাহার “গদ্য-সাহিত্যে স্বরবিন্যাস” পুস্তকখানির তৃতীয় অধ্যায় লিখিতে বসিল কিন্তু পাশের ঘরে তখন তাহার শাশুড়ী,বড়শালী, অশোক ও তাহার দুই চারিজন প্রাণের বন্ধু মিলিয়া সশন্সে তাস থেলিতেছে। তাহদের উচ্চ কলোচ্ছ্বাস হাক-ডাকে তাহার সমস্ত স্বরবিন্যাস ঘুলাইয়া গেল। সে রাগে কলম কামড়াইতে লাগিল, চুল ছিড়িতে স্বরু করিল, এব: ভাবিতে ভাবিতে তাহার একেবারে ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটিল। সে সশব্দে মাঝের দরজাটি খুলিয়া দিল । মেয়েরা বিষম বিরক্তিতে তাহার দিকে চাহিল। বিরক্তি-কাতর-কণ্ঠে ললিত বলিল—“আপনারা কি আমাকে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বলেন ? একটু আস্তে আস্তে খেলুন না, নইলে আমার এই লেখা-ব্যবসাটা ছাড়তে হবে দেখছি " ক্ষণকালের জন্য সবাই চুপচাপ ; , তারপর স্বপ্রীতি খিলখিল করিয়া হাসিয়া উঠিল। শ্বাশুড়ী ঘৃণায় মুখ ফিরাইলেন, অশোক ঘাড় তুলিয়া ললিতের দিকে চাহিব চড়া গলায় বলিল, “আচ্ছা আচ্ছা, তা হ’লে তো বাচি " ললিত ক্রোধে বিরক্তিতে ঘর ছাড়িয়া বারান্দঃ