পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8כט\ ভালো ছিল না। - কিসের প্রত্যাশায় মন্ত্রচালিতের ন্যায় সে অশোকার কাছে গিয়া দেখিল সে বাক্স ইত্যাদি গুছাইতেছে। কোথায়ও যাইবার আয়োজন। ললিতের মনের আবেগ পাহাড়ের গায়ে ঢেউয়ের মত ভাঙ্গিয়াচুরিয়া ছড়াইয়া পড়িল। সে বিরক্তভাবে বলিল, “কোথা যাওয়া হচ্ছে শুনি ।” অশোক সহজ ভাবেই বলিল, “দার্জিলিং। গৌরীদি চিঠি দিয়েছে সেখানে যেতে ।” “বেশ !” বলিয়া ললিত ঘরের বাহির হইয়া গেল । হায় রে যশ আর খ্যাতি ! একটি আঘাতেই সমস্ত বিস্বাদ হইয়া গেল । অশোক চলিয়। গেল । ললিত ভাঙীশরীরে ছাদের কোণে আশ্রয় লইল ; এবার কিন্তু নিৰ্ভয়েই । বুড়ী ঝি মঙ্গলার মা উপরে গিয়া তাহার গাবার দিয়া আসে। সে বেশীর ভাগ সময় ছাদেই কাটায় ; কিন্তু কাজ আর বেশী অগ্রসর হয় না। সে নিঝুম হইয়া পড়িয়া থাকে। কয়েক দিন হইতে পাশের বাড়ীর মেয়েটিরও দেখা নাই। ললিতের দুৰ্ব্বল শরীর আরো দুৰ্ব্বল হইতে লাগিল । দ্বিতীয় উপন্যাসখানিও শেষ হইল কিন্তু সুখ, শান্তি আসিল কই ? মাঝে মাঝে সে ভাবে, বুঝি অশোকার দীর্ঘশ্বাসে তাহার সাধনা অভিশপ্ত হইয়াছে ; কিন্তু পীড়া যে তাহার নিজেরই মনের মধ্যে সেটুকু সে স্বীকার করে না। সে কোনো প্রকাশকের কাছে গেল না। উপন্যাস দুইখানি সযত্বে নিজের কাছে রাগিয়া দিল। কি হইবে প্রকাশ করিয়া ? te তাহার আকাশ-বাসরের সঙ্গিনীটিকে একদিন দেখা গেল, বিবর্ণ বিশীর্ণ শরীর লইয়া আলিসার উপরে হাত রাখিয়া চুপ করিয়া দাড়াইয়। ললিত ভাহাকে কাছে ডাকিল। ষ্টুডিওতে আলো ছিল না। মেয়েটিও এস্রাজ লইয়া আসে নাই । ললিতের ভয় হইল। আবার বুঝি সেদিনের মত— বলিল, “আপনার এসরাজ কই ?” মেয়েটি মৃদু হাসিয়া বলিল, “ভয় নাই। আমার স্বামীর বড় বিপদ-উদ্ধারের বুঝি কোনো উপায় নেই।” ললিত চকিত হইয়া উঠিল। বলিল, “ব্যাপার কি ?” সঙ্গিনীর কথা শুনিয়া বুঝিল,—আর্টিষ্টটি কিছুকাল যাবৎ প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩e [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড আয়ের অধিক ব্যয় করিতেছিল—আপনার খেয়াল পরিতুপ করিবার জন্য । কোথা হইতে হাগুনোট দিয়া টাক। ধার করিয়াছে । শোধ দিবার দিন চলিয়া গিয়াছে। তাহার নামে ডিগ্ৰীজারী হইয়াছে। স্ত্রীর গহনা-পত্ৰ যাহা ছিল ইতিপূর্বেই বন্ধক পড়িয়াছে—ছবিও সব বিক্রয় হইয়া গিয়াছে। সুতরাং পাওনাদার হয় জিনিষপত্র সব ক্রোক করিবে-কিম্ব তাহাকে হাজতে লইয়| যাইবে । মেয়েটির চোখ ফাটিয়া জল বাহির হইতে লাগিল, ললিতের জীর্ণ বুকের অন্তস্তল হইতে একটি গভীর দীর্ঘনিশ্বাস বাহির হইল। হায় রে, ওই স্বামী তাহার জন্যও কান্না । আর অশোকা ?— সে বলিল, “দুএকদিন পরে আমার সঙ্গে করবেন—দেখি যদি নতুন বই দুটো দিয়ে কিছু পাই ।” মেয়েটি আবেগকম্পিত স্বরে বলিয়া উঠিল, “না না, সে কিছুতেই হবে না। আপনার বুকের রক্ত দিয়ে গড় জিনিষ এমন ক’রে আমি নষ্ট করতে দেব না। তাড়াতাড়িতে হয়ত কিছুই দাম পাবেন না। আপনার এই রোগা শরীরে সেটা সইবে না। আর আপনার স্ত্রীরও ভ একটা দাবী আছে । আমিই বা কে যে, আমাপ দেখা জন্যে এত করবেন ?” “আমার আর কে আছে যার জন্যে আমি কিছু করতে পারি ? এই সামান্ত স্থখটুকু থেকে আমার বঞ্চিত করবেন না। কাল পরশু একবার খবর নেবেন।” ললিত আর দাড়াইতে পারিতেছিল না । বলিল, “আপনি যান ।” ডেক-চেরায়টিতে বসিয়া ললিত তাহার বুক-নিংড়ানো ধন দুইটি নাড়িয়া-চাড়িয়া দেখিতে লাগিল। পাত উণ্টাইতে উন্টাইতে একজায়গায় চোখে পড়িল— “মাতুষের ব্যথার ইতিহাসই চিরন্তন ইতিহাস নয় । মানুষ জন্ম হইতে মৃত্যু পৰ্য্যন্ত প্রতিনিয়ত বাহিরের ও ভিতরের দ্বন্দ্বে ক্ষত-বিক্ষত হইবে, জীবনে বিশ্বাস হারাইবে; . কিন্তু একদা রৌদ্রালোকে কুয়াশারই মত সমস্ত ব্যথা, সমস্ত দৈন্য তাহার নিঃশেষে মুছিয়া যাইবে। সেই শুভ মুহূৰ্বের জন্যে চিরন্তন মানব প্রতীক্ষা করিয়া আছে। হয়ত এ