পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●>パり প্রবাসী—শ্রোবণ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড অশোকা দার্জিলিঙে হাওয়া খাইতে লাগিল, এসবের কিছুই জানিল না। আর্টিষ্ট সকাল সন্ধ্য আসে। মেয়েটিতে দিনরাত্রি ললিতের সেবায় লাগিয়া রহিল। পিসীমা চিরদিন নির্বাক্‌ ; আজিও নির্বকভাবে হতভাগ্য ভ্রাতুষ্পপুত্রের শিয়রে বসিয় থাকেন। ডাক্তায় আসা বন্ধ হইল । ললিত গভীর পরিতৃপ্তির সহিত মৃত্যুকে বরণ করিতে প্রস্তুত হইল । বাহির হইতে দেথাইত যেন তাহার মনে কোনো ক্ষোভ নাই, কোনো দুঃখ নাই, কিন্তু তাহার আকাশ-বাসরের সঙ্গিনী তাহার মৰ্ম্মকোণের ব্যাথার কাহিনী জানিত । জানিত, তাহার বেদন কত নিবিড় ; অশোকার জন্য তাহার দুঃখ হইত। হায় হতভাগিনী, রত্ব চিনিল না । তাহার চোখ জলে ভরিয়া আসিত । ললিত হাসিত । সে-হাসি কান্নায় ভরা । ললিতের সাধের উপন্যাস "করুণা” বাজারে বাহির হইল। কাগজে অযাচিত প্রশংসা—হুহু করিয়া বই কাটিতে লাগিল। ললিতমোহনের খ্যাতি সর্ব ত্র ছড়াইয়া পড়িল । লোকে বলিতে লাগিল করুণ সাহিত্যে যুগ'স্তর আনিয়াছে—লেখক অমর হইয়া থাকিবে । প্রকাশক “করুণা’র পরের সংস্করণের জন্য ও লেখকের অন্য কোনো বই লেখা থাকিলে তাহার জন্য কন্‌ট্রাক্ট, করিবার জন্য ব্যস্ত হইলেন। অসম্ভব মূল্য দিতেও তিনি পিছ-পা নহেন । তিনি যেদিন ললিতের কাছে গেলেন তখন যমের সঙ্গে তাহার কনট্রাক্ট হইয়া গেছে। দার্জিলিঙ্গে অশোকার কানে স্বামীর বিপুল খ্যাতির বাৰ্ত্তা পৌছিল । স্বামী যে থ্যাতি-নিন্দার বাহিরে যাইতে বসিয়াছেন, সে খবরটুকু পৌছিল না। মা দার্জিলিঙে ছিলেন । মা বলিলেন, ‘বেবী, তোর কপাল ফিরিয়াছে । আমি বরাবরই জানি, ললিত একটা কিছু করিবেই করিবে ; তাহার মত খাতির আর কে পাইয়াছে!” অশোক চুপ করিয়া রহিল। মা বলিলেন, “বেবী চল, কলকাতায় যাই, এসময় তোয় তার কাছে থাকা দরকার। অনেক টাকা হাতে আসবে—হয়ত সব বাজে খরচ ক’রে বসবে ।” খরচের ভয়ে ব৷ অর্থলোভে নহে, অন্য কারণে অশোক ললিতের কাছে যাইতে চায়। নিজের সঙ্গে যুদ্ধে সে ক্ষত-বিক্ষত হইয়াছে। তাহাদের এই ঝগড়ার জন্য সে যত বারই স্বামীকে দোষী করিতে চাহিয়াছে ততবারই সে স্বামীর দোষ খুজিয়। পায় নাই—নিজের প্রচণ্ড অভিমান ও নীচতাকেই তা হার কারণ বলিয়া মনে হইয়াছে। অভিমান তখনো পূরামাত্রায় আছে, কিন্তু ক্ষমা চাহিবার জন্য মন ব্যাকুল,—সে আর পারে না এষ্ট অকারণ দ্বন্দ্বকে জীয়াইয়। রাখিতে। হয়তো এখনে: সময় আছে—শুধু তাহার নিরীহ স্বামীকে লইয়া আবার সে সুখের স্বৰ্গ গড়িতে পারে ; মা বোন নাই-ই থাকিল । সেদিন সকাল হইতেই আকাশ ঘনঘটায় আচ্ছন্ন—গ" কৃষ্ণ মেঘের প্রলেপে নীলাকাশে যবনিকা পড়িয়াছে : ললিতের আকাশ-বাসর কালবৈশাখীর তাণ্ডবলীলার প্রতীক্ষা করিতেছে । ললিত মাঝে মাঝে তন্দ্রাচ্ছন্ন হইয়া পড়িতেছিল ও প্রলাপ বকিতেছিল। থালি অশোকার আর আকাশবাসরের কথা। ডাক্তার বলিয়াছেন—সেদিন কাটিবে ন। মাঝে মাঝে তাহার জ্ঞান সম্পূর্ণ ফিরিয়া অসিতেছিল –মেঘভর আকাশের দিকে চাহিয়া তখন সে প্রবল বর্ষণ কামনা করিতেছিল । সে পিসীমার একহাত একতাতে ধরিয়া ছিল, অন্য হাত তাঠার দুঃখদিনের সঙ্গিনীর হাতের মুঠার মধ্যে ছিল । মেয়েটির চোখের জল বাগ মানিতেছিল না । ললিত শিয়রে হাত দিয়া কি যেন খুজিতে লাগিল । বালিশের নীচে তাহার দ্বিতীয় উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি ছিল, পিসীমা তাহা বাহির করিয়া ললিতের হাতে দিলেন । ললিত পরম আগ্রহে সেটি হাতে লইয়; নীরবে কিছুক্ষণ তাহা দেথিল। তাহার চক্ষু উদ্ভাসিত হইয়া উঠিল । ধীরে ধীরে তাহার সঙ্গিনীর হাতে সেটি তুলিয়া দিয়া বলিল, “দুৰ্দ্দিনের বন্ধুর এই শেষদান—আর কিছুই আমার নাই ।” মেয়েটি ফুলিয়াফুলিয়া কাদিতে লাগিল । আকাশ ভাঙিয়া বৃষ্টি নামিল। অবিরল জলধারে চারিদিক আচ্ছন্ন হইয়া আসিল । অদূরে নারিকেলশাখাগুলি বায়ু-তাড়নে হু হু করিয়া উঠিতেছিল। যেন