পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] যে, গোয়ার্তমির দ্বার উপর ও নীচের অসামঞ্জস্ত থাকে না । অসামঞ্জস্তের কারণ মানুষের চিত্তবৃত্তির মধ্যে। সেইজপ্তেই আজকের দিনের ধাকটাকে উপরে তুলে দিলে, কালকের দিনের উপরের থাকটা নীচের দিকে পূর্বের মতোই চাপ লাগাবে। রাশিয়ার জার-তন্ত্র ও বলশেভিক-তন্ত্র একই দানবের পাশমোড় দেওয়া। পূৰ্ব্বে যে-ফোড়াটা বঁ। হাতে ছিল, আজ সেটাকে ডান হাতে চালান করে" দিয়ে যদি তাণ্ডব নৃত্য করা যায়, তাহলে সেটাকে বলতেই হবে পাগলামী । যাদের রক্তের তেজ বেশি, এক-এক সময়ে মাথায় বিপরীত রক্ত চড়ে গিয়ে তাদের পাগলামী দেথা দেয়—কিন্তু সেই দেখাদেখি পাগলামী চেপে বসে অন্ত লোকের, যাদের রক্তের জোর কম। তাকেই বলে হিস্টরিয়া। আজ তাই যখন শুনে এলুম সাহিত্যে ইসার চলচে– মহাজনকে লাগও বাড়ি, জমিদারকে ফেলো পিষে, তখনি বুঝতে পার্লুম, এই লালমুখে বুলির উৎপত্তি এদের নিজের রক্তের থেকে নয় । এ হচ্চে বাঙালীর অসাধারণ নকল-নৈপুণ্যের নাট্য, ম্যাজেণ্ট। রঙে ঙ্গেবানো । এর আছে উপরে হতে পা ছোড়া, ভিতরে চিত্তহীনত । আমি নিজে জমিদার, এইজন্তু হঠাৎ মনে হতে পারে, আমি বুঝি নিজের আসন বঁচাতে চাই। যদি চাই তাহলে দোল দেওয়া যায় ন— ওটা মানবস্বভাব । যারা সেই অধিকার কাড়তে চায় তাদের যে বুদ্ধি, যারা সেই অধিকার রাগ্‌তে চায় তাদেরও সেই বুদ্ধি—অর্থাৎ কোনোটাই ঠিক ধৰ্ম্মবুদ্ধি নয়, ওকে বিষয়বুদ্ধি বলা যেতে পারে। আজ যার কাড়তে চায় যদি তাদের চেষ্টা সফল হয়, তবে কাল তারাই বনবিড়াল হয়ে উঠবে। হয়ত শিকারের বিবর-পরিবর্ত্তন হবে, কিন্তু তিনথের ব্যবহারটা কিছুমাত্র বৈষ্ণব ধরণের হবে না । আজ অধিকার কাড়বার বেলা তার যে-সব উচ্চ অঙ্গের কথা বলে, তাতে বোঝা যায় তাদের “নামে রুচি” আছে ; কিন্তু কাল যখন “জীবে দয়া'র দিন আসবে, তখন দেখুব আমিষের প্রতি জিহার লেলিহান চঞ্চল্য। কারণ নামটা হচ্ছে মুণে, আর লোভটা হচ্ছে মনে । অতএব দেশের চিত্তবৃত্তির মাটিতে আজ যেজমিদার দেখা দিয়েছে সে যদি নিছক কাটাগাছই হয়, তাহ’লে তাকে দলে ফেললেও সেই মরগাছের সারে দ্বিতীয় দফা কাটাগাছের শ্ৰীবৃদ্ধিই বটুবে । কারণ, মাটিবদল হ’ল ন হে । আমার জন্মগত পেশা জমিদারী, কিন্তু আমার স্বভাৰগত পেশ আসমানদারী । এই কারণেই জমিদারীর জমি অকড়ে থাকতে আমার অন্তরের প্রবৃত্তি নেই। এই জিনিষটার পরে আমার শ্রদ্ধার একান্ত অভাব । আমি জানি জমিদার জমির জোক, সে প্যারাসাইট, পরাশ্রিত জীব । আমরা পরিশ্রম না করে’ উপার্জন না করে' কোনো যথার্থ দায়িত্ব গ্রহণ না করে” ঐশ্বয্যু-ভোগের দ্বারা দেহকে অপটু ও চিত্তকে অলস করে তুলি। যার বীৰ্য্যের দ্বারা বিলাপের অধিকার লাভ করে, আমরা সে জাতির মানুষ নই। প্রজার আমাদের অন্ন জোগায় আর আমলার আমাদের মুখে অন্ন তুলে দেয়—এর মধ্যে পৌরুষও নেই, গৌরবও নেই। নিজেকে ছোটাে হাতের মাপে রাজা বলে কল্পনা করবার একটা অভিমান আছে। আমরা এদিকে রাজার নিমক খাচ্চি, রায়তদের বলুচি “প্রজা", তারা আমাদের বলচে “রাজা”,—মস্ত একটা ফাকির মধ্যে আছি । এমন জমিদারী ছেড়ে দিলেই তো হয়। কিন্তু কাকে ছেড়ে দেব ? অস্ত এক জমিদারকে ? গোলামচোর খেলার গোলাম যাকেই গতিয়ে দিই—তার স্বারা গোলাম-চোরকে ঠকানো হয় না। প্রজাকে ছেড়ে দেব? তখন দেখতে দেপতে এক বড় জমিদারের জায়গায় দশ ছোটো জমিদার গজিয়ে উঠবে। রক্ত-পিপাসার বড়ো জোকের চেয়ে ছিনে জোকের প্রবৃত্তির কোনো পার্থক্য আছে তা বলতে পারিনে। জমি চাষ করে যে, জমি তারই হওয়া উচিত। কেমন করে তা হবে ? কষ্টিপাথর রায়তের কথা ૭૨૭ জমি যদি পণ্যদ্রব্য হয়, যদি তার হস্তান্তরে বাধা না থাকে ? একথা মোটের উপর বলা চলে যে, বই তারি হওয়া উচিত, যে মানুষ বই পড়ে । যেমানুষ পড়ে না অথচ সাজিয়ে রেখে দেয়, বইয়ের সদ্ব্যবহারীকে সে বঞ্চিত করে। কিন্তু বই যদি পটোলডাঙার দোকানে বিক্রি করতে কোনো বাধা না থাকে, তাহলে যার বইয়ের শেল্ফ আছে, বুদ্ধি নেই, সে যে যই কিনবে না এমন ব্যবস্থা কি করে" করা যায় ? সংসারে বইয়ের শেল্ফ বুদ্ধির চেয়ে অনেক স্বলভ ও প্রচুর। এই কারণে অধিকাংশ বইয়ের গতি হয় শেলুফের তাকে, বুদ্ধিমানের ডেস্কে নয়। সরস্বতীর বরপুত্র যে-ছবি রচনা করে, লক্ষ্মীর বরপুত্র তাকে দখল করে’ BBB S BBBB BBB BBS BB SBBB BBS BB BBBS BB মেজাজ কড়, সম্বল কম. এ অবস্থায় তারা খাপ্প হ’য়ে ওঠে । বলে— মারে টাকাওয়ালাকে, কাড়ো ছবি। কিন্তু চিত্রকরের পেটের দায় যত দিন আছে, ছবি যতদিন বাজারে আসূতে বাধা, ততদিন লক্ষ্মীমানের ঘরের দিকে ছবির টান কেউ ঠেকাতে পারবে না । জমি যদি খোল বাজারে বিক্রি হয়ই, তাহ’লে যে-ব্যক্তি স্বয়ং চাষ করে তার কেনবার সস্তাবনা অল্পই ; যে-লোক চাষ করে ন৷ কিন্তু যার আছে টাক, অধিকাংশ বিক্রয়-যোগা জমি তার হতে পড়বেই। জমির বিক্রয়ের সংখ্যা কালে কালে ক্রমেই যে বেড়ে যাবে, এ কথাও সত্য"। কারণ, উত্তরাধিকারসূত্রে জমি যতই খণ্ড খণ্ড হতে থাকবে, চাষীর সাংসারিক অভাবের পক্ষে সে জমি ততই অল্প-সত্ত্ব হবেই ; কাজেই অভাবের তাড়ায় খরিদ-বিক্রি বেড়ে চলবে। এমূনি করে ছোটো ছোটো জমিগুলি স্থানীয় মহাজনের বড় বড় বেড়াজালের মধ্যে ঝণকে ঝাকে ধরা পড়ে। তার ফলে জাতীর দুই পাথরের মাঝখানে গোটা রায়ত্ব আর বাকি থাকে না। এক জমিদারের আমলে জমিতে রায়তের যেটুকু অধিকার, জমিদার-মহাজনের দ্বস্ব-সমাসে তা আর টেকে না। আমার অনেক রায়তকে এই চরম আকিঞ্চনত থেকে আমি নিজে রক্ষা করেচি, জমি-হস্তাস্তরের বাধীর উপর জোর দিয়ে । মহাজনকে বঞ্চিত করিনি, কিন্তু তাকে রফা কলাতে বাধ্য করেচি। যাদের সম্বন্ধে তা করা একেবারে অসম্ভব হয়েছে, তাদের কান্না আমার দরবার থেকে বিধাতার দরবারে গেছে । পরলোকে তার কোনো খেসারৎ পাবে কি না সে-তত্ত্ব এই প্রবন্ধে আলোচ্য নয়। নীল চাষের আমলে নীলকর বখন ঋণের ফাসে ফেলে প্রজার জমি আত্মসাৎ করবার চেষ্টায় ছিল, তখন জমিদার রায়তকে বঁচিয়েচে । নিষেধ-আইনের বাধ যদি সেদিন না থাকৃত, তাহ’লে নীলের বস্তার রায়তী জমি ডুবে একাকার হত। মনে করে, আজ কোনো কারণে বাংলার উৎপন্ন ফসলের প্রতি যদি মাড়েীয়ারি দথল-স্থাপনের উদ্দেশে ক্রমশঃ প্রজার জমি ছিনিয়ে নিতে ইচ্ছা করে, তাহলে অতি সহজেই সমস্ত বাংলা তার ঘানির পকে ঘুরিয়ে তার সমস্ত তেল নিংড়ে নিতে পারে। এমন মৎলব এদের কারে মাথায় যে কোনো দিন আসেনি, ত। মনে করুবার হেতু নেই। যেসব ব্যবসায়ে এরা আজ নিযুক্ত আছে, তার মুনফায় বিঘ্ন ঘটলেই আবদ্ধ মূলধন এইসব খাতের সন্ধান খুঁজ বেই। এখন কথা হচ্চে, ঘরের দিকে বেনে জল ঢোকাবার অনুকূল খাল খনন কি রায়তের পক্ষে ভালে ? মূল কথাটা এই— রারতের বুদ্ধি নেই, বিদ্যা নেই, শক্তি নেই, আর ধন-স্থানে শনি। তার কোনোমতে নিজেকে রক্ষা করতে জানে না। তাদের মধ্যে যারা জানে, তাদের মত ভয়ঙ্কর জীব আর নেই। রায়ৎখাদক রায়তের ক্ষুধ যে কত সৰ্ব্বনেশে, তার পরিচয় আমার জানা আছে। তার যেপ্রণালীর ভিতর দিয়ে স্ফীত হ’তে হতে জমিদার হয়ে ওঠে, তার মধ্যে সয়তানের সকল শ্রেণীর অনুচরেরই জটলা দেখতে পাওয়া যায়। জাল, জালিয়াতি, মিথ্যা-মকদ্দমা, ঘরজালানো, ফসল-তছরূপ—কোনো