পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] আমাদের চরকা আবিষ্কার ৬৬১ রঙ্গ সিরাজগঞ্জ জিয়ার পাড়ার স্বয়ং-ক্রিয় চরক, কমলা অটোমেটিক্‌, প্রভৃতি অসংখ্য চরকা বাজারে দেখ দিয়া ক্রমে ক্রমে সকলেই লোপ পাইয়াছে। আমি বিশেষরূপে পর্য্যবেক্ষণ করিয়া দেখিয়াছি, ষ্ট হাদিগের মধ্যে যান্ত্রিক আড়ম্বর ও অভিনবত্ব ভিন্ন, সূত্রউংপাদন-ক্ষমতা হিসাবে কোনও উৎকর্ষ ছিল না। বরং প্রাঃ সব চরকাতেই প্রাচীন চরকা হইতে অল্প স্থত। *:ট। যাইত ! লাভের মধ্যে ঐগুলির দাম ছিল বেশী, এ দং চালাইতে বেশী পরিশ্রম লাগিত। প্রথমতঃ আবিষ্কারকগণ ভাবিয়াছিলেন, সুতায় পাক দেওয়া আর নলিতে জড়াইবার কাজ যদি চরকা ঘুরাইলেই একত্র ইয়া যায়, এবং এই ভাবে বাম হস্তে তুলার পাজ লইয়া একবার হস্ত সম্প্রসারণ আর একবার আকুঞ্চন না করিয়া উঃ যদি স্থির হস্তে নিবদ্ধ থাকে ; তবে অল্প সময়েই বেশী স্বত্র উৎপন্ন হইবে আর শ্রমলাঘবও হইবে । এই ধারণার বশিষ্ট স্বত অটোম্যাটিক চরকার স্বষ্টি, স্বত্র বাহির হইয়া আপনা-আপনি নলিতে জড়াইয়া যাওয়ার অভিনবত্বচকু “ আমাদের দেশের কেহ আবিষ্কার করেন নাই, তাহা মিলের চরকারই অল্প অহকরণ মাত্র। যাহা হউক ঐ Sবক গুলি স্বতাও বেশী কাটিতে পারিল না, ইহাদের চলাচতেও জোর বেশী লাগিল । এই চরকাগুলির কথা fডয়া দিই-কিন্তু মিলের চরকার একটি টেকোতে & ঘৃত উৎপন্ন হয়, আমাদের ২ ফুট ব্যাস বিশিষ্ট পুরাতন চরকাতে তাহা হইতে কম স্থত কাটা হয় না। মিলের প্রস্থত অত্যুৎকৃষ্ট পাজ লইয়া একজন চরকা কাটিতে পুসিয়া ঘাউন ; আর মিলের মত প্রাতঃকাল ৫টা হইতে ব: ৭টা কি ৮টা পৰ্য্যন্ত আহার-নিদ্রা ত্যাগ করিয়া স্তর মত চরকা ঘুরাইতে থাকুন, দেখিবেন আপনি মিলের সমকক্ষ হইতে পারিয়াছেন। খাটি স্বতা প্রস্থত ইষ্টতে মিলে অন্ততঃ ২টি চরকার দরকার হয়, প্রথম চরকায় #লার পাজ জুড়িয়া দিলে অতি অল্প-পাক-বিশিষ্ট খুব Fট স্বত হয়, তাহাকে স্বত না বলিলেও চলে । তার পর পষ্ট অৰ্দ্ধ-পাকবিশিষ্ট সুত্র বা পাজকে আর-একটি চরকায় *ড়িয়া দিলে খাটি স্বতা তৈয়ার হয়। এই দুইটি চরকার *জই কিন্তু, আমাদের প্রাচীন একটি চরকায় হইয়া থাকে, সুতরাং প্রাচীন চরকা যদি মিলের চরকার অৰ্দ্ধ পরিমাণ স্বতাও কাটিতে পারে তবুও তাহাকে মিলের সমকক্ষ ধরিতে হইবে। তবে মানুষ ত আর ভূতের মত খাটিতে পারে না, তাহার আহার, তৃষ্ণা, বিশ্রাম চাই । কেহ কেহ মনে করিয়াছিলেন যদি পায়ে চরকা চালান যায়, তবে দুই হাতে দুই পাজ ধরিয়া একই টেকোর দুই প্রাস্তেই স্বত-কাটা সম্ভব হইবে। এ জাতীয় চেষ্টার মধ্যে ম্যাচ মেসিন আবিষ্কৰ্ত্ত কালীকচ্ছ-নিবাসী শ্ৰীযুক্ত মহেন্দ্র নন্দী মহাশয়ের আবিষ্কার বিশেষ উল্লেখযোগ্য। অনেক চেষ্টা করিয়া তিনি দুই হাতে দুই থেই স্থত কাটার জন্য পদচালিত চরকার উদ্ভাবনা করিলেন, কিন্তু পাজের অসমতার জন্য পরিণামে এচেষ্টার ব্যর্থত বুঝিয়া ইহা ছাড়িয়া দিলেন । তাহার পর একাধিক টেকো একই চরকার সাহায্যে চালাইবার চেষ্টা অনেকেই করিয়াছেন। মাদারিপুরের জনৈক ডাক্তার, বৰ্দ্ধমানের অজ্ঞাতনাম জনৈক ভদ্রলোক, এই চেষ্টা করেন। পরিশেষে কাশ্মীরের জনৈক মুসলমান যুবক নাকি বারটি শলা পৰ্য্যন্ত চালাইতে পারিয়াছিলেন, কিন্তু বাজারে ত তাহার চরকা দশ বিশটা দেখিতে পাই না। চাদপুরের একজন ব্যাবসায়ী এজাতীয় চেষ্টায় অনেক টাকা ব্যয় করিয়াছিলেন ; র্তাহার চেষ্টাও সাফল্য-মণ্ডিত হয় নাই । তাহার পর আন্দোলন একটু মন্দীভূত হওয়ায় আবিষ্কারকগণও হাল ছাড়িলেন, আর দৈনিক কাগজগুলির পৃষ্ঠায় “বিংশ শতাব্দীর অভিনব আবিষ্কার, বঙ্গের অভাব ঘুচিল,” ইত্যাদি সব বড় বড় হরফে লেপা সচিত্র বিজ্ঞাপনগুলিও লোপ পাইল । এই ত গেল আবিষ্কারকগণের প্রচেষ্টার ব্যর্থতার ইতিহাস । পূর্বেই বলিয়। রাখি, আবিস্কারকগণকে মন্দ বলিবার জন্য আমি এ প্রবন্ধের আলোচনা করি নাই । আমাদের প্রাচীন চরকার গুণগান করাও আমার লক্ষ্য নহে । কি ভাবে চরকাকে অধিক পরিমাণ স্বত্র উৎপাদনক্ষম করা যায় আবিষ্কারকগণের চিন্তার ধারা কোন পথে চালিত হওয়া আবশ্বক এসম্বন্ধে কংগ্রেসের কর্তৃব্য কি এইসকল বিষয় আলোচনা করাই আমার উদ্দেশ্য । চরকা সম্বন্ধে যিনিই যাহা করিয়া থাকুন, তাহা ব্যৰ্থ