পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নারীর উপর অত্যাচার সম্বন্ধে কর্তব্য মামুষের এমন কোন কোন ব্যক্তিগত, সামাজিক বা জাতীয় কৰ্ত্তব্য আছে, যাহা রহিয়া বসিয়া দু'দিন পরে করিলেও চলে। কিন্তু যে-কৰ্ত্তব্য পালনের উপর মানুষের মনুস্থ্যত্ব ও সমাজের স্থিতি নির্ভর করে, যাহা স্বাধীন দেশেও মানুষের কৰ্ত্তব্য পরাধীন দেশেও কৰ্ত্তব্য, তাহ একদিনের জন্তও ফেলিয়া রাখিবার নয় । নারীর সম্মান ও সতীত্ব রক্ষা, মাতৃত্বের মর্য্যাদা ও পবিত্রত রক্ষা, এই প্রকারের একটি কর্তব্য । গত কয়েক বৎসর ধরিয়া বাংলা দেশে মারাহরণ, নারীর সতীত্বনাশ ও সতীত্বনাশচেষ্টা এত বেশী হইতেছে, যে, দেশে পাশবিকতার রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হইতে সুইতেছে বলিলে অত্যুক্তি হয় না। নারীর উপর এবংবিধ অত্যাচার ভারতবর্ষের অন্যা প্রদেশেও হয়, কিন্তু বাংলা দেশের মত এত বেশী কোথাও হয় না । ইহা মুসলমান বাঙালী ও হিন্দু বাঙালী উভয়েরই ঘোরতর লজ্জা ও কলঙ্কের বিষয় । এইপ্রকার অত্যাচারের প্রতিকার করিতে হইলে হিন্দুর ধৰ্ম্মবুদ্ধিকে যেমন জাগাইতে হইবে, মুসলমানের ধৰ্ম্মবুদ্ধিকেও তেমনি জাগাইতে হইবে । ইহা সহ্য বটে, ধে, খবরের কাগজে এইরূপ অত্যাচারের ধত স বাদ বাহির হয়, তাহাঁদের অধিকাংশ মুসলমান-নামধারী এবং অত্যাচরিতার অধিকাংশস্থলে হিন্দু । কিন্তু হিন্দু নারীর উপর হিন্দু পুরুসের অত্যাচারের সংবাদও একান্ত বিরল নহে, এবং মুসলমান পুরুধের দ্বারা মুসলমান নারীর নিদ্যাতনের সংবাদ ও মধ্যে মধ্যে সংবাদপত্রে বাহির হয় ; "দু পুরুষের দ্বারা মুসলমান নারীর নিয্যতিনের কোন সংবাদ অবশু এপর্য্যস্ত আমাদের চোখে পড়ে নাই । গত এব, বঙ্গে নারীর উপর অত্যাচার কেবলমাত্র হিন্দু* লমানের সাম্প্রদায়িক বিরোধের অন্যতম রূপ মনে পাবলে চলিবে না ; ইহা তাহ অপেক্ষা ও ব্যাপক অমঙ্গল । প বৰ্ণ অত্যাচরিতাদের মধ্যে হিন্দু ও মুসলমান দুই আছেন, * ৪ মুসলমান কম ; এবং অত্যাচারী দুবৃত্তদের মধ্যেও মুসলমান ও হিন্দু দুই আছে, যদিও মুসলমানই খুব বেশী । থতএব, এই অধৰ্ম্ম নিবারিত না হইলে হিন্দু মুসলমান ট ভয় সমাজকেই বিনষ্ট করিবে বলিয়া ইহার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা উভয় সম্প্রদায়েরই কৰ্ত্তব্য । , যদি অত্যাচারিতার সকলেই হিন্দু হইতেন এবং { § |叫 ក្,ព្រៃវ្នំ অত্যাচারীষ্মা সকলেই মুসলমান হইত, তাহা হইলেও এই অমঙ্গলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা উভয় সম্প্রদায়েরই কৰ্ত্তব্য হইত। কারণ, যাহাদিগের উপরে এইরূপ অত্যাচার হয়, তাহাদের এবং তাহীদের সমাজের দুর্দশা, দুৰ্গতি ও অধোগতি হইলেও, অত্যাচারীদের এবং তাহারা যে সম্প্রদায়ভুক্ত সেই সম্প্রদায়ের অধঃপতনও নিশ্চয়ই হয়, এবং খুব বেশী হয়। কুষ্ঠিয়াতে অল্পদিন পূৰ্ব্বে তিনটি নারীর উপর যেঅত্যাচার হইয়। গিয়াছে, তাহাতে দেখা যায়, যে, তাহীদের উদ্ধারসাধন করেন মাধু সেথ ও র্তাহার পুত্র ও প্রতিবেশীগণ। অবশ্ব তাহার পূৰ্ব্বে দুইজন হিন্দুও নারীদিগকে রক্ষা করিবার চেষ্টা করেন, কিন্তু তাহ বিফল হয় । এই অত্যাচারের পর কুষ্ঠিয়ার মুসলমানগণ প্রকাশ সভায় এরূপ বর্বরতার নিন্দ করেন। বঙ্গীয় মুসলমানদের ইংরেজী মুখপত্র “মুসলমান” ও “মোক্সেম ক্রনিক্ল ’ এবং অন্যতম বাংলা মুখপত্র “খাদেম” সম্প্রতি নারীর উপর অত্যাচারের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করিয়াছেন। অতীত কোন দৃষ্টাস্তের উল্লেখ না করিয়াও ইহা হইতেই আমরা বুঝিতে পারি, যে, সমগ্র মুসলমান সম্প্রদায়ের এরূপ অত্যাচারে মৌন সম্মতি আছে মনে কর। অদ্যায় হইবে । হইতে পারে, যে, র্যাহার এরূপ দুৰ্ব্ব ত্ততার বিরোধী, মুসলমান সম্প্রদায়ের দুর্নীতিপরায়ণ লোকদের উপর তাহদের যথেষ্ট প্রভাব নাই । কিন্তু তাহাদের প্রভাব নিশ্চয়ই কাল ক্ৰমে বুদ্ধি পাইবে । নারী-নিৰ্য্যাতন সমূলে বিনষ্ট করিতে হইলে যাহা ধাই। করা আবশ্যক, তাহার আলোচনা খুব বেশী হওয়া দরকার ; আলোচনার ফলে যে-ধে উপায় নিৰ্দ্ধারিত হইবে, তদনুসারে কাজ করা আরও বেশী দরকার। অনেক সময় আমরা লিথিয়া, স্বকৃত করিয়া ও কর্মীটি নিয়োগ করিয়া নিশ্চিন্ত হই । তাহা আকুচিত । আত্মরক্ষার সামর্থ্য উৎপাদন, আত্মরক্ষার সামর্থ্য থাক, নারীদের রক্ষণের সৰ্ব্বোৎকৃষ্ট ও একাস্ত আবশ্যক উপায় । নারীদের শিক্ষালাভ, নারীদের স্বাধীনতা লাভ, তাহাদের নিজের শক্তির উপর দৃঢ় বিশ্বাস লাভ, অন্তঃপুরের বাহিরের জগৎ সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করিয়া সাহস অর্জন,— এবংবিধ নানা দিক দিয়া তাহারা আত্মরক্ষার সামর্থ্য লাভ করিতে পারেন । দৈহিক পটুতা অর্জন নারীদের শিক্ষার