পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\૭૭૭ আন্তর্গত । ইহা কেহ অস্বাভাবিক মনে করিবেন না । বাঙালীর মেয়েদের মধ্যে এখনও অনেকে আছেন র্যাহারা ঘোড়ায় চড়িতে ও লাঠি থেলিতে পারেন, যদিও তাহীদের সংখ্যা কম । বঙ্কিম-বাবু যে তfহার শাস্তিকে ঘোড়সওয়ার করিয়াছেন, এবং তাহার দেবী চৌধুরাণীকে সকল প্রকার ব্যায়ামে অভ্যস্ত করিয়াছেন, তাহ{ তাহার খেয়াল নতে । অনেকে মনে করিবেন, ঠগ কবি-কল্পনা মাত্র । কিন্তু অশ্বারোহিণী ভারতীয় নারীর দৃষ্টান্ত বিরল নহে। এখনও পশ্চিমে প্রতিবংসর রামলীলার সময় অশ্বারোহিণ ঝান্সীর রাণ লক্ষ্মী বাঙ্গ মিছিলের একটি অপরিহার্য্য অঙ্গ । ফ্যানী পার্কসের ভারত-প্রমণ পুস্তকে বড় মহারাষ্ট্রীয় নারীর অশ্বারোহণ-দক্ষতার উল্লেখ দৃষ্ট হয় । রাজপুত নারার অশ্বারোহণে গিরিসঙ্কট অতিক্রমের একটি প্রাচীন চিত্র কলিকাতার গবন্মের্ণ আটস্থলে আছে । তাহার রঙীন প্রতিলিপি আমরা ছাপিয়াছিলাম । বাজ বাহাদুর ও রূপমতীর গল্প একটি প্রসিদ্ধ কাহিনী । তাহাদের অশ্বরোহিত মুর্ধর প্রাচীন ছবি আছে । বাংলা দেশেরও আধুনিক সময়ের একটি গল্প কিছুকাল পূৰ্ব্বে শুনিয়াছিলাম । নাম বাদ দিয় তাহ বলিতেছি । পূর্ববঙ্গের কোন জমীদারিন তাহার কন্যাকে কোন কারণে জামাতার গুহে পাঠাইতে অস্বীকার করেন । জামাতা মোকদম করিয়া পত্নীকে গৃহে লইয়া যাইবার ডিক্ৰী পান। কিন্তু তথাপি তাহার শ্বশঠাকুরাণী কন্যাকে পাঠাইতে রাজী না হওয়ায় আদালত হইতে থানাতল্লাসীর ওয়ারেন্ট বাহির হয় । তখন তিনি কন্যাকে কোট প্যাণ্টালুন হাট পরাইয় অশ্বারোহণে অন্যত্র পাঠাইয়া দেন । এই কন্যাকে আমরা দেখিয়াছি, এবং তাহার জীবনে উপন্যাসস্থলভ আর যাহা ঘটিয়াছিল, তৎসম্বন্ধে কিছু প্রত্যক্ষ জ্ঞান আমাদের আছে । তাছ। বলিতে বিরত থাকিলাম । যে-ঘটনার কথা বলিলাম, তাহ। অবশ্য শোনা কথা, সত্য কি না বলিতে পারি না । আত্মরক্ষার জন্য ব{ঙালীর মেয়েদের অস্ত্রব্যবহারের দুঃান্ত খবরের কাগজে একাধিকবার বাহির হইয়াছে। সরলা ও চপল নামী দুই আস্থঃপুরিকা একবার এক তুৰ্ব্ব স্তুকে আপনাদের সতীত্ব রক্ষার জন্য বধ করিয়াছিলেন, ভাঃ খবরের কাগজে বাহির হইয়াছিল । তাহীদের ছবি প্রবাসীতে ছাপা হইয়াছিল । অল্পদিন পূৰ্ব্বে আর-একটি খবর অনেক কাগজে বাহির হয়, সে, এক পুরোহিত ব্রাহ্মণ তাহার যজমানের স্ত্রীর নিকট কুপ্রস্তাব করে । সমস্ত ঘটনাট বলিবর আবশ্যক নাই । শেষে এই সাপী নারী এবং দুরাত্ম পুরোহিতের মধ্যে সশস্ত্র যুদ্ধ হয় । সতী মহিলাটি নিহত হন । বদমায়েস বামুনট ও সাংঘাতিক আঘাত পায়, কিন্তু শেষ পৰ্য্যস্ত মারা পড়িয়াছে কি না অবগত নহি । এরূপ সত্য ঘটনা আরও ঘটিয়াছে। প্রবাসী—শ্রোবণ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড অপ্রাসঙ্গিক হইলেও এখানে বলিয়া রাখি, নারীরা ব্যায়াম করিলে ও অস্ত্রব্যবহারে নিপুণ হইলেও তাহাদের নারীসুলভ শ্ৰী কমিবে না, বরং স্বাস্থ্য ভাল হওয়ায় অনেক বয়স পৰ্য্যন্ত হিন্দুর চক্ষে তাহারা মা ভগবতীর মত প্রতীত হইবেন । স্ত্রীস্বাধীনতার কথা উঠিলেই বাংলা দেশের একশ্রেণার লোক পাশ্চাত্য দেশে স্ত্রীস্বাধীনতার কুফল বর্ণনা ও পাশ্চাত্য স্ত্রীলোকদের কুংস করিতে আরম্ভ করেন। পুরুষদের স্বাধীনতাতেও তাহদের উচ্চ স্থলতা বৃদ্ধিপ দৃষ্টাস্ত অনেক আছে । কিন্তু ত জন্য কেহ ত তাহীদের স্বাধীনতা লুপ্ত করেন না। এমন কোন সামাজিক ব্যবস্থা এপর্য্যন্ত হয় নাই, যাচার অপব্যবহারে অনিদের উৎপত্তি হয় নাই। সেইজন্য সুব্যবহারে কি ফল হয়, তাহাই বিবেচ্য । বৰ্ত্তমান প্রসঙ্গে আমরা অন্যান্ত ফলাফলের কথা আলোচনা না করিয়া, নারীনির্য্যাতন স্ত্রীস্বাধীনতার ফলে বাড়ে কিম্বা কমে, তাহাই বিবেচন। করিব। প্রথমে পাশ্চাত্য দেশের কথাই ধরা যাক্ । যুদ্ধের সময় নারীর উপর অত্যাচার পুথিবীর সব দেশে হইয়া থাকে— এবং যুদ্ধের বিরুদ্ধে ইহা একটা প্রধান যুক্তি। যুদ্ধের সময়ের কথা ছাড়িয়া দিয়া শান্তির সময়ে দেখিতে পাই, যে, পাশ্চাত্য কোন দেশে নারীর উপর তেমন অত্যাচার হয় না, যেমন বাংলাদেশে হইতেছে । পাশ্চাত্য দেশের কথা ছাড়িয়া দিয়া ভারতবর্যের প্রতি দৃষ্টিপাত করা যাক । মহারাষ্ট্রে, অন্ধ দেশে, কেরলে, দ্রাবিড়ে, হিন্দুনারীদের মধ্যে পদ নাই, তাহীদের মধ্যে স্বাধীনতা আছে। এ সব দেশে বাংলাদেশের মত স্ত্রীলোকের উপর অত্যাচার হয় না। পঞ্জাবে ও বাংলা দেশের মত পর্দা নাই । সেখানেও বাংলা দেশের মত নারী দলন হয় না । অতএব স্ত্রীস্বাধীনতার অন্য কুফল যিনি যtহাই বলুন এবং তাহা আমরা স্বীকার করি বা না করি, ইং। আমরা দেখাইলাম, ষে, স্ত্রীস্বাধীনতা থাকিলে নারীর উপর অত্যাচার বাড়ে না। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, %ে স্ত্রীস্বাধীনতা থাকিলে নারীদের সাহস বাড়ে, দৃঢ়তা বাড়ে, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব বাড়ে, এবং তাহারা আত্মরক্ষা অধিকতর সমর্থ হন । মুসলমান সম্প্রদায় হিন্দুদের চেয়ে ও অবরোধ-প্রথার ভক্ত । অথচ পৃথিবীর সর্বাপেক্ষ শনি - শালী ও অগ্রসর মুসলমান দেশ তুরস্কে ভারতবর্গের ম’ অবরোধ- প্রথা নাই—পদ তথায় উঠিয়া গিয়াছে বলিলে’ হয় ৷ আমবা অবশ্য একথা বলিতেছি না, যে, হঠাৎ সমুস, অন্তঃপুরিকাকে যেখানে সেখানে একা পাঠাইয়া দেও, ব। যাইতে দেওয়া উচিত, এবং তাহা করিলেই নারী এঈ -