পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ፃፃ: বিক্রয় করিয়া বেশ দু পয়সা উপার্জন করেন। রেশম কীটের প্রধান আহার তুত-পাত বলিয়া, অনেকে শুধু তুতেরই চাষ করেন । যাহাতে এই বৃক্ষগুলি সতেজ ও বলবান হইয়া বহুপত্র-বিশিষ্ট হয় তাহার যত্ব করিতে ক্রটি করেন না। এইভাবে অনেক গৃহস্থ তত-পাতা বিক্রয় করিয়। বৎসরে অন্ততঃ দেড়দুইশত টাকা উপায় করেন। তবে গণুটীয়ার বিশাল কুঠ উঠিয়া যাওয়ায় ততপাত বিক্রয় অবশ্য কিছু কম হইয়াছে বলিতে হইবে । অতি প্রাচীন কাল হইতেই বীরভূমবাসীরা রেশম চাষ ও রেশম-ব্যবসা করিয়া আসিতেছে । বীরভূমের তস্তুবায় সংখ্যায় অপেক্ষাকৃত অধিক বলিয়া গুটি অবিক্রীত অবস্থায় থাকে না । মনে করিলে অনেক ভদ্রসন্তান স্বাধীনভাবে পলুর চাষ ও রেশমা গুটি বিক্রয় করিয়া নিজেদের ভরণ-পোষণ-নির্বাহের সুন্দর উপায় করিতে পারেন । এই ব্যবসা করিলে সঙ্গে-সঙ্গে দেশীয় শিল্পের সমধিক উন্নতিও হয় । কুধি, শিল্প ও বাণিজ্যের সমধিক উন্নতি না হইলে দেশের উন্নতি হয় না একথা সকলেই স্বীকার করেন । তেঁতুলিয়া, বসোয়ী, বিষ্ণুপুর, মাড়গ্রাম প্রভৃতি গ্রামের তন্তুবায়ুগণ প্রায় সকলেই রেশম-চাষ ও রেশমব্যবসা করে। দাদনকারীরা বীরভূমের এইসমস্ত স্থান হইতে বৎসর বৎসর রেশম ক্রয় করিয়া ভারতের নানা স্থানে এবং ইউরোপ প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করিয়া থাকে। কলিকাতার মহাজনের থানগুলি রঙ করাইয়া ভারতেরই মাদ্রাজ প্রভৃতি প্রদেশে চালান দেয় । ইংলণ্ড- প্রভৃতি দেশে রঙ না করিয়াই রেশমের সাদা থান পাঠান হয় । উক্ত গ্রামসমূহ হইতে প্রতি বৎসর বহু লক্ষ টাকার রেশম বিদেশে রপ্তানি হইয়া থাকে। তসর-থান গুণানুসারে গজ ধরিয়া যেমন বিক্রয় হয়, রেশমী-থানও রেশমবস্ত্র ( পট্টবস্ত্র ) তেমন ভাবে বিক্রীত হইতে দেখা যায় না। রেশমী-থান ও রেশমী-বস্ত্রগুলি প্রায়ই ওজনে বিক্রয় হয় বলিয়া অধিকাংশ স্থলে তন্তুরায়গণ অসৎ পথ অবলম্বন করিয়া থাকে। থান পাট ( ভাজ ) করিবার সময় চিনি মিশ্রিত প্রবাসী—ভাদ্র, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খন করিয়া দিলে নাকি কেউ সহজে বুঝিতে পারে না ; অথচ থান ওজনে ভারী হয় । এইজন্য ক্রেতাদের পক্ষে উচিত মূল্য দিয়া থান ক্রয় করিয়া অনেক সময় ক্ষতি স্বীকার করিতে হয়। পূর্বে স্থানীয় মহাজনেরা রেশমবস্ত্র ও থান ক্রয় করিয়া মুর্শিদাবাদ প্রভৃতি বিভিন্ন জেলায় চালান দিত। এখন মুর্শিদাবাদের সহিত এই চালানী কারবার একরূপ উঠিয়৷ গিয়াছে বলিয়া মনে হয় । এই জেলার সদরে বৎসর-বৎসর যে-কৃষিশিল্পের বৃহৎ প্রদর্শনী হয় তাহাতে বীরভূমের বিভিন্ন গ্রাম হইতে এই শিল্প-প্রদর্শনীতে অনেক রেশমী-দ্রব্য প্রদশিত হইতে আসে। বহু স্বর্ণ ও রৌপ্যপদক এবং প্রশংসাপত্র শিল্পীকে উৎসাহ দিবার জন্য প্রদত্ত হইয়া থাকে। পলুপোকার চাষ, গুটি হইতে স্থতা তোলা, বস্ত্রবয়ন প্রভৃতি যাবতীয় তত্ত্ব এই প্রদর্শনীতে বিস্তৃত ভাবে বিবৃত করা হয়। এই প্রদর্শনী শুধু এই জেলার উন্নতি-কল্পে সমাবিষ্ট নহে । ধাহাতে বিভিন্ন জেলায় উন্নত উপায়ে কৃষি ও শিল্পের প্রচার ও প্রসার লাভ করে তাহার প্রতি মৃতীয় দৃষ্টি রাখা হয় । তসর-পোকা গৃহাভ্যন্তরে পালন করা যায় না, তাহ। সকলেই বিশেষভাবে অবগত আছেন । রেশ মীপোকা (পলুপোকা ) গৃহাভ্যন্তরেও পালন করা হয়। বন্য ভাবেও রেশমী গুটি পাওয়া যায় ; কিন্তু স্থানীয় লোকেরা পলুপোক গৃহাভ্যস্তরে পালন করে। শিশু অবস্থায় কীটগুলিকে জুতের কচি কচি পাতা খাইতে দেওয়া হয়। এক সপ্তাহ গত হইলে কীটগুলির শৈশবাবস্থা কাটিয়া যায় ; তখন তাহাদিগকে আর কচি পাতা খাইতে দেওয়া হয় না। কারণ, এই সময়ে কচি পাতা খাইলে তাহারা ভাল গুটি প্রস্তুত করিতে পারে না ; এবং তাহা হইতে ভাল রেশম পাওয়া একপ্রকার দুলভ হয়। শিশুকাল হইতে গুটি কোয়া (বা কোষ) নিৰ্ম্মাণের পূর্ব অবস্থা পৰ্য্যন্ত শীতকালে দশহাজার কীটের প্রায় নয় দশ মণ তত-পাতার আবশ্যক হয় । বর্ষাকালে শীতকাল অপেক্ষা কম পরিমাণে