পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] আহার . করে বলিয়া উক্ত সময়ে রেশমচাষের আধিক্য দেখিতে পাওয়া ধায় । উতপাতাই যে এই কাঁটের প্রধান খাদ্য তাহ পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি । সিমুল, শাল, রেড়ি, ভেরেগু, বাদাম প্রভৃতি বৃক্ষের পাতা খাইয়া ইহার তেমন পরিপুষ্টি লাভ করিতে পারে না । অল্প দিনের মধ্যেই বিনষ্ট হইয়া যায় বা বাচিলে তাহারা খুবই ছোট গুটি নিৰ্ম্মাণ করে। বিভিন্ন জাতীয় রেশম প্রজাপতির মধ্যে বম্বিক্স মরি বড় পলু), বম্বিক্স ক্রেইসি, বম্বিক্স ফরটুনেটাস, বম্বিক্স সিনেনশিশ, বম্বিকু ঠেকৃষ্টার, বম্বিক্স মেরিডিথনৈলিশ, বম্বিক্স এরাকেনেনশিশ প্রভূতির নাম শুনিতে পাওয়া যায়। এই জাতীয় প্রজাপতির সকলগুলিই আমাদের এখানে পালন করা হয় না । প্রথম জাতীয় রেশম প্রজাপতিগুলি চীন, জাপান, ইতালি, ফ্রান্স , স্পেন প্রভৃতি দেশের গৃহাভ্যস্তরে পালন করা হইলেও আমাদের দেশে সাধারণতঃ ঐ-জাতীয় পলুপোকার চাষ করিতে দেখা যায় । এই জাতীয় কীট গুলি দেখিতে শ্বেত বা হরিদ্রাবর্ণবিশিষ্ট । অন্যজাতীয় রেশমগুটি অপেক্ষা এই জাতীয় গুটি হইতে অনেক বেশী পরিমাণে রেশম পাওয়া যায়। তজ্জন্য এই জাতীয় পলুপোকার চাষ অপেক্ষাকৃত অধিক পরিমাণে হইয়া থাকে। উক্তপ্রকার গুটি হইতে যে-রেশম পাওয়া যায় তাহা অপেক্ষাকৃত ভাল এবং টেকসই । এই জাতীয় প্রজাপতির ডিমগুলির রঙ পরিবর্তন হইতে দেখা যায়। প্রথমে পাড়ার সময় ডিমগুলি সাদা দেখায় । তাহার তিন চার দিন পরে ডিমের রঙ ধূসরবর্ণে পরিণত হইয়া ডিম ফুটিবার প্রায় তিন চার দিন আগে ইহাদিগকে কালো দেখায় । দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ জাতীয় কীটগুলি বৎসরে তিন চার বার গুটি নিৰ্ম্মাণ করে বলিয়া প্রথম জাতীয় কীটগুলি অপেক্ষ এই জাতীয় পলুপোকার চাষ এঅঞ্চলে বেশী হইয়া থাকে। ইহাদের কোষ ( গুটি) গুলির অগ্রভাগদ্বয় সরু এবং বর্ণ পীতাভ হয়। বর্ষাকালে, শীতের প্রারম্ভে" এবং বসন্তকালে পলুপোকা পালন স্ববিধাজনক বলিষ্ট এই অঞ্চলের পালনকৰ্ত্তারা তাহাই করিয়া থাকে। বীরভূমের রেশম-শিল্প ፃፃ© তৃতীয় জাতীয় পলুপোকার গুটি অন্যান্য জাতীয় গুটি অপেক্ষ দেখিতে স্বল্পাকৃতি হয় এবং পরিমাণে কম রেশম পাওয়া যায়, তাহাও আবার অন্যপ্রকার রেশম অপেক্ষ নিকৃষ্ট এবং কণ মজবুত হয়। এই নিমিত্ত এই জাতীয় পলু পোকার চাষ অপেক্ষাকৃত কম। ইহাদের গুটির আকৃতি অন্যজাতীয় গুটি অপেক্ষা আকারে সামান্য লম্ব বা টানা এবং দেখিতে ঈষৎহরিদ্রীযুক্ত শ্বেত বর্ণের হয়। তৃতীয় জাতীয় গুটির ন্যায় চতুর্থ জাতীয় গুটিগুলি আকারে ছোট এবং লম্বী । এই জাতীয় কোয়াগুলির রঙ পূৰ্ব্বোক্ত জাতীয় কোষের বর্ণের অনুরূপ হইয়া থাকে । শেষ জাতীয় গুলির চাষ আমাদের দেশে হয় না ; কেননা ইহাদের কোয়াগুলি আকারে বড় হইলেও তাহা হইতে অধিক রেশম পাওয়া যায় না । প্রথমতঃ কীটগুলিকে বংশ নিৰ্ম্মিত বড় ডালায় বা চালুনীতে তুতপাত দিয়া রাখা হয় এবং কীটগুলি বৃদ্ধাবস্থা প্রাপ্ত গুইলে গোলাকার ভাবে বংশদ্বারা ৰন্থবেষ্টিত বড় চালুনীতে ( চন্দ্রক ) রাখিয়া দেওয়া হয়। এক-এক চতুরকি বা চন্দ্ৰকীতে প্রায় দুই তিন সহস্ৰ কীট অনায়াসে থাকিতে পারে । তাহারা চন্ধুরকির ভিতর বেড়ায় । নীচু ও উপরের ঠোট হইতে (তসর-কীটের ন্যায় পশ্চাৎদিকৃ হইতে নহে ) লালা ( রেশম ) নির্গত করিয়া নিজকে দুই দিন মধ্যে সামান্যরূপ এবং পাচদিনের ভিতর গুটিমধ্যে সম্পূর্ণরূপ আবদ্ধ করিয়া ফেলে। মাস তিন এই অবস্থায় থাকিলে কোয়া হইতে প্রজাপতি বাহির । হয়। রেশম জাতীয় প্রজাপতিগুলি উড়িয়া পলাইতে সক্ষম হয় না। দেখিলে ইহাদিগকে অকৰ্ম্মণ্য বলিয়া মনে হয়। ইহারা দেখিতে প্রায় ধূসরবর্ণের মত । ইহাদের ডানায় দুই-তিনটি বা ততোধিক করিয়া কাল দাগ থাকে। স্ত্রী-প্রজাপতি পুং-প্রজাপতি অপেক্ষ লম্বায় কিছু বড় হয়। প্রজাপতিগুলি ফির ফির করিয়া যখন চন্দ্রকীর চারিপাশ্বে নড়িতে থাকে তখন তাহ দেখিতে অতীব সুন্দর বোধ হয়। ইংলণ্ড প্রভৃতি দেশে দেড় দুই সহস্ৰ প্রকারের রেশম-প্রজাপতি দেখা যায়। গ্রীষ্ম-প্রধান দেশে উহা অপেক্ষা আরও অনেক প্রকারের রেশম প্রজাপতি আছে ।