পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] সাহিত্য-সন্মিলন ዓ » rم:سم-۔ مہم میی-ای-. জলিয়া থাকে সে বাংলা দেশে, কোথাও যদি দলে দলে দুঃসাহসিকের দারুণ দুঃখের পথে আত্মহননের দিকে আগ্রহের সহিত ছুটিয়া গিয়া থাকে সে বাংলা দেশে। ইঙ্গর অন্যান্য যে-কোনো কারণ থাকৃ, একটা প্রধান কারণ এই যে, বাঙালীর অস্তরের মধ্যে বাংলা সাহিত্য অনেকদিন হইতে অগ্নিসঞ্চয় করিতেছে,—তাহার চিত্তের ভিতরে চিন্তার সাহস আনিয়াছে, তাই কৰ্ম্মের মধ্যে তাহার নিৰ্ভীকতা স্বভাবতই প্রকাশ পায়। শুধু রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে নহে, তাহার চেয়ে দুঃসাধ্য সমাজক্ষেত্রেও বাঙালীই সকলের চেয়ে কঠোর অধ্যবসায়ে মুক্তির জন্য সংগ্রাম করিয়াছে। পূর্ণ বয়সে বিবাহ, বিধবা-বিবাহ, অসবর্ণ বিবাহ, ভোজন পংক্তির বন্ধনচ্ছেদন, সাম্প্রদায়িক ধৰ্ম্মের বাধামোচন প্রভৃতি ব্যাপারে বাঙালীই সকলের আগে ও সকলের চেয়ে বেশি করিয়া আপন ধৰ্ম্মবুদ্ধির স্বাতন্ত্র্যকে জয়যুক্ত করিতে চাহিয়াছে। তাহার চিন্তার জ্যোতিৰ্ম্ময় বাহন সাহিত্যই সৰ্ব্বদা তাহাকে বল দিয়াছে। সে যদি একমাত্র কৃত্তিবাসের রামায়ণ লইয়াই আবহমান কাল সুর করিয়া পড়িয়া যাইত, মনের উদার সঞ্চরণের জন্য যদি তাহার মুক্ত হাওয়া, মুক্ত আলে, মুক্ত ক্ষেত্র না থাকিত, তবে তাহার মনের শসাড়ভাই তাহার পক্ষে সকলের চেয়ে প্রবল বেড়ি হইয়। তাহাকে চিন্তায় . ও কম্মে সমান আচল করিয়া রাপিত । মনে আছে আমাদের দেশের স্বাদেশিকতার একজন লাকপ্রসিদ্ধ নেতা একদা আমার কাছে আক্ষেপ করিয়া fলয়াছিলেন, যে, বাংলা সাহিত্য যে ভাবসম্পদে এমন হুমূল্য হইয়া উঠিতেছে, দেশের পক্ষে তাহা দুর্ভাগ্যের ক্ষণ। অর্থাৎ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি এই কারণে |ঙালীর মমত্ব বাড়িয়৷ চলিয়াছে—সাধারণ দেশহিতের দেশেও বাঙালী এই কারণে নিজের ভাষাকে ত্যাগ রিতে চাহিবে না। তাহার বিশ্বাস ছিল, ভারতের ক্যসাধনের উপায়স্বরূপে অন্য কোনো ভাষাকে আপন যিার পরিবর্তে বাঙালীর গ্রহণ করা উচিত ছিল । শর ঐক্য ও মুক্তিকে যাহারা বাহিরের দিক হইতে খন, তাহার এমনি করিয়াই ভাবেন. তাহার। নো মনে করিতে পারিতেন যে, দেশের সকল লোকের বিভিন্ন দেহগুলিকে কোনো মন্ত্রবলে একটিমাত্র প্রকাণ্ড দৈত্যদেহ করিয়া তুলিলে আমাদের ঐক্য পাক হইবে, আমাদের শক্তির বিক্ষেপ ঘটিবে না। স্যামদেশের জোড়া যমজ যে দৈহিক শক্তির স্বাধীন প্রয়োগে আমাদের চেয়ে জোর বেশি পায় নাই, সে-কথা বল বাহুল্য। নিজের দেহকে তাহার নিজের স্বতন্ত্র জীবনীশক্তি দ্বার। স্বাতন্ত্র্য দিতে পারিলেই তবে অন্ত দেহধারীর সঙ্গে আমাদের যোগ একটা বন্ধন হইয় উঠে না । বাংল। ভাষাকে নিৰ্ব্বাসিত করিয়া অন্য যে-কোনো ভাষাকেই আমরা গ্রহণ করি না কেন, তাহাতে আমাদের মনের স্বাতন্ত্র্যকে দুৰ্ব্বল করা হইবে। সেই দুৰ্ব্বলতাই যে আমাদের পক্ষে রাষ্ট্রীয় বললাভের প্রধান উপায় হইতে পারে, এ-কথা একেবারেই অশ্রদ্ধেয় । যেখানে আমাদের আত্মপ্রকাশ বাধাহীন, সেখানেই আমাদের মুক্তি। বাঙালীর চিত্তের আত্মপ্রকাশ একমাত্র বাংলাভাষায়, একথা বলাই বাহুল্য । কোনো বাহ্যিক উদ্দেশ্বের-খাতিরে সেই আত্মপ্রকাশের বাহনকে বর্জন করা, আর মাংস সিদ্ধ করার” জন্য ঘরে আগুন দেওয়া, একই-জাতীয় মুঢ়তা। বাংলা সাহিত্যের ভিতর দিয়া বাঙালীর মন, যতই বড়ো হইবে, ভারতের অন্য জাতির সঙ্গে মিলন তাহার পক্ষে ততই সহজ হইবে। আপনাকে ভালে| করিয়া প্রকাশ করিতে না পারার দ্বারাই মনের পঙ্গুত মনের অপরিণতি ঘটে ; যে অঙ্গ ভালো করিয়৷ চালন| করিতে পারি না, সেই অঙ্গই অসাড় হইয়া যায়। সম্প্রতি হিন্দুর প্রতি আড়ি করিয়া বাংলা দেশের কয়েকজন মুসলমান, বাঙালী-মুসলমানের মাতৃভাষ৷ কাড়িয়া লইতে উদ্যত হইয়াছেন । এ যেন ভায়ের প্রতি রাগ করিয়া মাতাকে তাড়াইয়া দিবার প্রস্তাব। বাংলদেশের শতকরা ৯৯য়ের অধিক-সংখ্যক মুসলমানের ভাষা বাংলা । সেই ভাষাটাকে কোণ-ঠেযা করিয়া তাহীদের উপর যদি উর্দু, চাপানো হয়, তাহা হইলে তাহদের জিহবার আধখানা কাটিয়া দেওয়ার মতো হইবে না কি ? চীনদেশে’ মুসলমানের সংখ্যা অল্প নহে, সেখানে আজ পৰ্য্যন্ত এমন অদ্ভুত কথা কেহ বলে না ষে, চীনভাষী ত্যাগ না করিলে তাহাদের মুসলমানির খৰ্ব্বত ঘটিবে।