পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] বিবিধ প্রসঙ্গ—অধ্যাপক যন্ত্রনাথ সরকার bo¢ፃ সুবিধামত দরে ও সময়ে বিনিতে আইনত বাধ্য থাকিবেন। এই সোনার এক্সচেঞ্জ স্ববিধাম ত দরে ও সুবিধা মত সময়ে কেনা-বেচার “বাধ্যতা” আবহমান কাল হইতেই “গোল্ড এক্সচেঞ্জ ষ্ট্যানডার্ড” বাদী বৃটিশ ভারতে ছিল । ব্যাপারটিকে নূতন নাম দিয়৷ খাড়া করিবার কোনোই সার্থকতা নাই। দেশের মঙ্গলের দিক দিয়া দেশের কেনা-বেচার কাজ অবাধে চলা বিশেষ প্রয়োজন । সে কেনা-বেচা দেশের অভ্যন্তরেই হউক আর আন্তর্জাতিকই হউক। দেশের যে মান-মুদ্র তাহার মূল্য বা দ্রব্য-ক্রয়-ক্ষমতা যদি স্থির না হইয়া চঞ্চল ও চির পরিবর্তনশীল হয় তাহা হইলে দেশের সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা । সুতরাং কারেন্সী কমিশনের নুতন ব্যবস্থার মধ্যে যেটুকু মান-মুদ্রার দ্রব্য-ক্রয়-ক্ষমতার ভিতর স্থিরতা আনয়ন করিবে সেটুকু দেশের মঙ্গলজনক হইবে, সন্দেহ নাই । কিন্তু এই মঙ্গলটুকুর পথ বন্ধ করিবার এত ছিদ্র রিপোর্টের প্রস্তাব গুলির ভিতর রহিয়াছে, যে এসম্বন্ধে কিছু না বলাই শ্রেয়। কারেন্সী কমিশনের ব্যবস্থাকে অনেকে স্বর্ণমান প্রতিষ্ঠা নাম দিয়াছেন । এনামটি ঠিক হয় নাই । যে-স্থলে রৌপ্য মুদ্রার প্রচলন পূবামাত্রায় থাকিবে এবং স্বর্ণমানীয় কাগজের নোটগুলি নিজেদের পশ্চাতে গভর্ণমেণ্ট বা ষ্টেট ব্যাঙ্কের খস্তে পূরা, এমন-কি অৰ্দ্ধ-পরিমাণ স্বর্ণও মজুত বা রিজার্ভ ন। রাগিয়া দেশের বাজারে ঘুরিবে ফিরিবে সে-স্থলে এই ব্যবস্থা ততদিনই নিৰ্ব্বিবাদে চলিবে যতদিন বৃটিশ গভর্ণমেণ্টের অর্থ নৈতিক সুনাম দুনিয়ার বাজারে থাকিবে । কাজেই এব্যবস্থাকে স্বর্ণ-মান না বলিয়া বুটশ “সুনাম-মান বা বৃটিশ ক্রেডিট ষ্ট্যানডার্ড” নামে অভিহিত করিলেই উপযুক্ত হইত। কারেন্সী কমিশন আস্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুবিধার জন্যই বসিয়াছিল। ভারতের আভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের সুবিধার জন্য তাহার সাক্ষাৎ ভাবে বিশেষ কোনো চেষ্ট। দেখা যায় নাই । ইহার কারণ এই যে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের লাভ প্রায় সমস্তটিই ইংরেজের লাভ এবং ভেতরের কেনা-বেচার ব্যাপারে ইংরেজের ততটা স্বর্থ নাই। দেশের টাকার মূল্যের স্থিরতা, সময়মত টাকার পরিমাণ “দেশের বাজারে” ( কলিকাতা বা বোম্বাই এর বৃহৎ-বাণিজ্যের বাজারে শুধু নহে ) বাড়ান ও কমােনর স্বব্যবস্থার উপর নির্ভর করে। কারেন্সী কমিশনের প্রগুবি গুলির সাহায্যে ধাহা হইবে তাহাতে একাজ বৃহৎ-বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থানগুলিতেই সাধিত হইবে দেশের সর্ব এ সাধিত হইবে না। উপরস্তু দেশের সকল স্থান হইতে টাকা যাহাতে গ্রামবাসীর সঞ্চয়রূপে দ্রুত বৃহৎ বৃহৎ বাণিজ্য কেন্দ্রে ফিরিয়া আসিতে পারে সরকার বাহাদুর তাহার ব্যবস্থাই করিতেছেন । ইহাতে গ্রামে গ্রামে নগদ টাকার অভাব বাড়িহে বলিয়াই বোধ হয় । মোট কথা, কারেন্সী কমিশনের রিপোর্ট পড়িলে মনে হয় যেন বৃহৎ বাণিজ্যের উন্নতি হইলেই দেশের উন্নতি হইবে এইরূপ একটি অর্থনৈতিক সত্য কেহ ধ্রুব বলিয়া প্রমাণ করিয়া দিয়াছে ; কিন্তু এরূপ কথা কেহ প্রমাণ করিতে পারে নাই এবং অন্তত ভারতবর্ষে পরিবে না। ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থ। এরূপ যে, তাহতে এধরণের অবস্থা হওয়া অসম্ভব । অল্প কথায় সমস্ত বিষয়টি বুঝাইয়া বলা কঠিন। এবিষয়ের ভাল করিয়া আলোচনা হওয়া প্রয়োজন । কংগ্রেস অথবা স্বরাজ্য-দল হইতে একটি কমিটি বসাইয়। এই বিষয়ে মীমাংসা করা উচিত নহে কি ? - অধ্যাপক শ্ৰীযুক্ত যদুনাথ সরকার কলিকাতার “ভাইস-চ্যানসেলর” আমরা শ্ৰীযুক্ত যন্ত্রনাথ সরকার মহাশয় কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্‌চেলর নিযুক্ত হওয়ায় বিশেষ আনন্দি ত হইয়াছি । সরকার-মষ্ঠাশয় পণ্ডিত ও গুণী ব্যক্তি এবং কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান নেতৃবর্গের দোষ গুণের সহিত সুপরিচিত ; সুতরাং তাহার দ্বারা কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক উন্নতি সাধিত হইবে সন্দেহ নাই । ভারতের ইতিহাসের চর্চায় পারসী লেখকfদগের লেখার সাহায্য গ্রহণ করিয়া যদুনাথ সরকার মহাশয় ঐতিহাসিক আলোচনার এক নূতন পথ উন্মুক্ত করিয়া দিয়াছেন । এইজন্য র্তাহাকে সৰ্ব্বদেশের পণ্ডিতবর্গ বহু সমাদর করিয়াছেন। র্তাহার কার্য্যক্ষমতা, বুদ্ধিমত্তা ও ধৈর্য্যশীলতা অসাধারণ । এইসকল গুণের সাহায্যে তিনি আমাদিগের বিশ্ববিদ্যালয়কে গৌরবমণ্ডিত করিয়৷ তুলিতে পারিবেন বলিয়াই আমাদিগের আশা। কোনো অধ্যাপক ইতিপূৰ্ব্বে কখনও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যানসেলর নিযুক্ত হন নাই । এদিক দিয়াও এই নিয়োগের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার ব্যবস্থা উন্নততর হইবে মনে হয় । এই সম্বন্ধে একটি কথা বল প্রয়োজন যাহা অতিশয় দুঃখের ও লজ্জার বিষয় । শ্রযুক্ত যদুনাথ সরকার মহাশয়ের নিয়োগের সংবাদ প্রথম যখন বাহির হয় সেই সময় হইতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় নেতৃস্থানীয় লোক র্তাহার বিরুদ্ধে যথাসাধ্য কুৎসা করিয়া ও তাহার নিয়োগ খারিজার্করাই বার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করিয়া দেশবাসীর মনে তাহাদিগের সম্বন্ধে নিদাৰুণ ঘৃণার স্বষ্টি করিয়াছেন।