পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳԵս মাহ্য তখনই পারে যখন সে স্বেচ্ছায় অন্ধ হইতে চায়। কিন্তু পূর্ণভাবে সহজ সুস্থ ও অকপট চিত্তের লক্ষণ দুইটিকেই যুগপৎ স্বীকার করা, কোনটিকে বাদ না দেওয়া । নিশ্চয়তা না থাকিলে বাস্তব কিছুই না ; বাস্তবকে বাদ দিলে নিশ্চয়তার কোন অর্থই থাকে না ; এই দুইটির মধ্যে বিরোধ ভঞ্জন করিয়া উভয়কে মিলাইতে চাই-কারণ এই মিলনেই বিশ্বের তাৎপৰ্য্যটি পাই । ( २ ) অনুভব করিতেছি সুতরাং আছি। আমিত্বের মধ্যে আমি নিজেকে বন্দী করিলাম ; এই আমিকে নিস্তব্ধতায় আবৃত করিলাম, আমার চক্ষ বজিয় গেল—দৃষ্টি শুধু অন্তমুখী। বাহিরের কোলাহলের নিকট কর্ণ বধির করিয়া শুধু আত্মার অফুট কাকলী শুনিতে উন্মুখ করিলাম। সমস্ত ইন্দ্রিয় প্রায় সংহত হইয়। শুধু একটি বস্তুর প্রতীক্ষা করিতেছে । অতীতের ঘটনাবলী ও অস্পষ্ট প্রত্যাশ সব ভুলিয়াছি । শুধু এক স্বপ্ন যেন বাতাসে ভাসিতেছে আবার মিলাইতেছে । “আমি কে ?” যদি কোন দিন জানিতাম তাহাও ভুলিয়ছি। ঐ ঘূে বিদ্যুং চকিতে আকাশ চমকিত করিয়া অন্ধকারের বুকে মিলাইয়া গেল- তেমনই আমার সম্বন্ধে সব চেতনাই যেন লোপ পাইয়াছে। নিজেকে না ভাবিয়া না অনুভব করিয়া যেন আমি আছি। আমি আছি, কারণ আমি ছিলাম। কে বলিবে আমি ছিলাম কি না ? স্মৃতি আসিয়া অতীতের কথা বলে ; কিন্তু অতীতকে দেখি ত এক অস্পষ্ট ছায়া - যতই দেখি ততই যেন মিলাইয় যায়। বৰ্ত্তমানই দেখি যেন একমাত্র বাস্তব ; বৰ্ত্তমানকে আঁকড়াইয়াধরা যাক । আমার অস্তিত্বের স্তব্ধ অন্ধকারে যেন কি একটা জোয়ার-ভাটা নিয়মিত আসা-যাওয়া করে। তার তরঙ্গসঙ্গীত আমার কানে পৌছে—যেন ক্ষুদ্র স্রোতস্বিনীর একটানা কলধ্বনি—মানুষ শুনিয়াও শুনে না-কারণ তা’র শেষ নাই। এই স্রোতের বুকে মূহূর্তের জন্য একটি প্রবাসী—বৈশাখ, sees s ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড আলোকরেখা নাচিয় উঠে—এবং তখনি কোন অজানা অন্ধকারে ডুবিয়া যায়। কখন উজ্জল কখন কৃষ্ণবর্ণ মেঘতরঙ্গ আকাশে ভাসিয়া আসে আবার কখন নিঃশব্দে গলিয়া মিলাইয়া যায় । কত ইন্দ্রিয়-চেতনা, কত ভাব, কত ভাবরূপ অবিশ্রাম ভাসিয়া আসিতেছে, যাইতেছে, আর সেটি ফিরিতেছে না । সেই প্রবাহের দুএকটি কণা মাত্র ধরা যাক—বুঝিতে চেষ্টা করা যাকু—কিন্তু হায় আঙ্গুলের ভিতর দিয়া যে এড়াইয়া গেল !.. আমার ইন্দ্রিয়-চেতন ! দুঃখ সুখের লক্ষ এলোমেলো প্রবাহ লক্ষ পলাতক আলোক-শিখা চেতনার দ্বারে আঘাত করিতেছে-কখনও বুঝি কখনও বুঝি না ! তবু সহজবোধে সেই সমস্তকে আমার ‘আমি’র সঙ্গেই জুড়িতেছি। বেদন যদি জাগে তখনই বলিতেছি এ ধে আমার বেদন । কিন্তু এই যে ‘আমি’, এ যে কতকগুলি সন্দিগ্ধ স্মৃতির জড়পুঞ্জমাত্র ; কে ইহার উপর ঐ বেদনার আরোপ করিবে ? যে মুহূৰ্ত্তে বৰ্ত্তমানকেই স্থায়ী বাস্তব বলিয়া ধরিয়াছি, সে মুহূৰ্ত্তে আমার বাহিরে আর কোন জিনিষের বোধ থাকে কি ? তা হ’লে আমিত্বও নাই অনামিত্ব ও নাই ? তাহ ছাড়া যাহাকে বেদন বলিতেছি তাহা কি ? সে বিষয়ে আমার বোধ কি অবিসংবাদী ? মধ্যে মধ্যে ইহার বিরুদ্ধ প্রমাণ এমনভাবে পাইয়াছি যে সন্দেহ না করিয়া উপায় নাই । বেদনার সম্বন্ধে আমার ধারণা যতই পরিষ্কার করিতে চেষ্টা করিয়াছি ততই বিষয়টি যেন জটিলতর হইয়া উঠিয়াছে। এমন-কি, মধ্যেমধ্যে ইচ্ছাশক্তির প্রবল প্রয়োগে বেদনাকে উপেক্ষ করিয়া বলিয়াছি—“আমি বেদনা পাইতেছি না।” এবং ক-এক মুহূৰ্ত্ত ধরিয়া বেদনাবোধ লোপ পাইতেছে তাহ দেখিয়াছি। যদি ব্যক্তিত্বের সমস্ত ছাপ উঠাইয়া লই তাহা হইলে ইন্দ্রিয়-চেতনার কি থাকিবে ? ঐ চেতনার চিরন্তন প্রবাহটি থাকিবে; সেই সজাগ চেতন অপেক্ষ স্থায়ী বাস্তব আর কিছু নাই—“আমি আছি’ এই বোধের দীপ্তি অপেক্ষ স্থির নিশ্চয় আর কি আছে ? এই অামি অাছির অর্থ কি ?