পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রতীক্ষা ঐশৈলেন্দ্রকৃষ্ণ লাহা নব-জাগরণ জাধেক চেতন, আধো-বা স্বপনময়, উতল প্রহর, কালের লহর দুলিয়া দুলিয়া ওঠে, মধুর-ভারতী প্রভাত-আরতি, প্রথম অরুণোদয়, ঝরে পলগুলি, ব্যথিত দিবার দিঠিতে বিরহ ফোটে । আরেক অাশার অপর ভাষার অচেনা-চেনার গান, পরাগ-বিলাসী—কনক-টাপার খোলা পাপড়ির কাছে অধীর মদির সে অথির সুরে থর থর করে প্রাণ । প্রজাপতিটির পাখায় মরণ-মূৰ্ছা জড়িয়ে আছে। শু্যামল নিলয়ে কাপে কিশলয় ; কুলায়ে-ঝাপট-হানা বনস্পতির চূড়ায় এখনো রক্তবহ্নি জলে ; ঘুম-ভাঙা পার্থী তুলি রাঙা আঁথি প্রথম মেলিছে ডানা। তরুবৗখিকার আস্তরালে কি আনাগোনা শোনা যায় ? মৃদুল কোমল ফুলের নিশাস বহি আনে বন-বায় । এমন প্রভাতে বনের শোভাতে, সবুজ সভাতে হেন, আসিবে আসিবে আসিবে করিয়া তুমি এলে ন-কে কেন ? মুনীল ছবির উপরে রবির তুলির আগুন-টানে কোন সমাহিত-মহিমা-মূৰ্ত্তি আকাশের পটে আনে ? চলে কি চলে না ক্লাস্ত তটিনী, নড়ে কি নড়ে না পাতা, জগৎপ্রবাহ গতিহার হ’ল, অগীত কালের গাথা । কৃজন ছাড়িয়া কপোত করুণ কপোতীর মুখে চায়, মৰ্ম্মরহীন বনানী গুমরে নিদারুণ বেদনায় ; ভর-সরোবরে তার ছায়া পড়ে ; মরাল বাকীয়ে গ্রীবা । খোজে মরালীর অলস নয়নে উষার অরুণ বিভা ৷ আসিতে আসিতে স্বপ্ন-আতুর তুমি কি থামিয়া গেলে ? দীপ্ত দিবার তন্দ্র-কুহকে কেন তুমি নাহি এলে ? কে গেছে—রাথিয়া অলক্তকের রেখা কমলের দলে ? বিহগ-কাকলী উঠিছে আকুলি, নীরবে ডাকিছে নীড়, মিলালো আলোর সেতারের তারে ক্ষীণ টানটির মীড় । প্রাস্ত যুথিকা যাব-সাব করে, বৃন্ত বলিছে থাকে, ' এমন বিদায়-মিলন-লগ্নে কেন তুমি এলে না-কো ? এ-পারের চখা, ও-পারের চৰী ডাকাডাকি শুধু করে, মাঝখানে নদী বহে নিরবধি গভীর করুশ-ভরে । ঝিলের সীমায় সারস ঝিমায়, ঝিল্লী কাদিয়া চলে, ডালে কেকাহীন ময়ুর একাকী নীলাম্বরের তলে । মায়া-আলিপনা-লেখা রহে পড়ি জনহীন বন-বীথি ; অনাদি কালের বেদনায়ু ঝরে চন্দ্রালোকের গীতি। গোলাপের কম-কপোলে লেগেছে বিন্দু অশ্র কার! চাহে উন্মুখ ক্ষণগুলি ফিরি পশ্চাতে বার-বার। ব্যথিত প্রহর,—রজত-রজনী জ্যোৎস্না-বিধুর যেন, এখনো এলে না, এখনো এলে না, এখনো এলে না কেন ?