পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sb~8 বাগানের এক প্রাস্তে একটি বড় রকমের ফাদ নিৰ্ম্মিত হইয়াছে । তার মধ্যে স্তরে স্তরে সাজান রহিয়াছে বানরের প্রিয় খাদ্য। জলে দলে বানর আসে যায়—খাচার চতুদিকে নিঃশবে ঘূরিয়া বেড়ায়। কবাট ধরিয়া নাড়া দেয়— অনুসন্ধিৎসু ভাবে চারিদিকে চাহিয়া দেখে। কাছেই কোথাও হয়ত একটা শুকনা পাতা পড়িয়াছে, আমনি চক্ষের পলকে সব অদৃপ্ত হইয়া যায়। কিন্তু লোভ উহাদের দুঃসাহসী করিয়া তোলে—পুনরায় একে একে ফিরিয়া আসে কিন্তু ভরসা করিয়া ভিতরে প্রবেশ করে না। তপতী উন্মুক্ত গবাক্ষপথে বাদরের কীর্তি পৰ্য্যবেক্ষণ করে এবং এক-একাই হাসিতে থাকে আর মনে মনে ওদের বুদ্ধির তারিফ করে। হঠাৎ খাচার দরজা সশস্বে রুদ্ধ হইয়া গেল । তপতী হাত তালি দিয়া উঠিল। এত ক্ষণে বানর ধরা পড়িয়াছে। কিন্তু যে-আহাৰ্ষ্য বানরটিকে মৃত্যুর গহবরে টানিয়া আনিয়াছে তাহা যেমনকার তেমনি পড়িয়া রহিল । বানরটি তাহা ম্পর্শও করিল না, শুধু পাগলের মত খাচার লোহার গরাদগুলি ধরিয়া সাধ্যমত আকর্ষণ করিতে লাগিল । কিন্তু তাহার ক্ষুদ্র শক্তি বারবারই পরাভূত হইল। তপতী চাহিয়া চাহিয়া দেখে, কেমন করিয়া বানরটি ব্যর্থ রোধে নিজের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিজেই ক্ষতবিক্ষত করিতে থাকে। কান পাতিয়া শোনে, অক্ষমের করুণ ব্যাকুলত । ব্যথিত চিত্তে ভাবে, মামুষের মধ্যে যদি এমনি একতা থাকিত ! বন্দীকে উদ্ধার করিবার জন্য বানর-দলের সমবেত চেষ্টা তপতীর চিন্তাধারণকে এই পথে চালিত করিল। স্বৰ্য্য ডুবিয়া গিয়াছে। মজুররা কিছুক্ষণ হইল বিদায় লইয়াছে। সুবিমল গৃহে ফিরিয়া আসিতেই তপতী ডাকিল, বানরগুলির কাণ্ড দেখবে এস । সুবিমল তপতীর পাশে আসিয়া দাড়াইল, হাসিয়া কহিল, এবারে যদি উপদ্রবটা কিছু কম হয়। তপতী কহিল, চেয়ে দেখ কত বানর এসে জুটেছে। সঙ্গীকে উদ্ধার করবার কি প্রাণপণ চেষ্টা চলেছে । সুবিমল হাসিয়া কহিল, শত চেষ্টায় আজ আর কিছু হচ্ছে না । সত্যই তাদের উদ্যম সব দিক দিয়া ব্যর্থ হইল। একে প্রবাসী ১৩৪৪ একে বানরগুলি চলিয়া গেল, কেবল একটি বানর খাচার আশেপাশে ঘুরিয়া ঘুরিয়৷ চীংকার করিতে লাগিল । তপতী কহিল—ওটি বুঝি ওর সঙ্গী-দেখছ কেমন ক’রে কাছে। তপতীর মনে হয়ত একটু অমুকম্প দেখা দিল কিন্তু ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করিতে গিয়া তার এ-অনুকম্প৷ কোথায় তলাইয়া গেল। তপতী নিজের কাজে স্থানান্তরে গেল, কিন্তু কাজের ফঁাকে ফঁাকে বানরের আওঁ স্বর তাহাকে চকিত করিয়া তুলিতেছিল এবং নিজেদের জীবনযাত্রার সহিত বানর-যুগলের তুলনা করিতে গিয়া মুহূৰ্ত্তের জন্ত তপতী চঞ্চল হইয়া উঠিল। স্বামীর নিকট ফিরিয়া আসিয়া তপতী কহিল—ওটাকে ছেড়ে দিলে হয় না ? কানের কাছে দিনরাত কান্না কি ভাল লাগবে ! স্ববিমল হাসিয়া কহিল—তুমি কি মনে কর কালকেও ওর কান্না তোমায় শুনতে হবে ? বনের পশু সাময়িক খেয়ালের বশে খানিক চীৎকার করে আপনি সরে পড়বে। তপতী স্থবিমলের কথায় কান দেয় না—উদগ্রীব হইয় উহাদের করুণ কণ্ঠস্বর শোনে। তারপর এক সময় নিজের কাজে প্রস্থান করে। এবং অল্পক্ষণের মধ্যেই সুবিমলের বৈকালিক আহাৰ্ষ্য লইয়া উপস্থিত হয়—রোজকার মত হাত-পাখাটাও চলিতে থাকে। কিন্তু তাহাতে যেন প্রাণের স্পর্শের किहू অভাব-অন্ততঃ স্ববিমলের ত তাহাই মনে হইল। ঈষৎ একটু হাসিয়া কহিল, তোমাকে একটু অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে যেন । তপতী হাসিয়া নিজের ক্রটি স্বীকার করিয়া লইল । বন্দী গরাদের গা ধেসিয়া দাড়াইয়া আছে । বাহির হইতে অপর বানরটি ওর গায় হাত বুলাইয়া দে, মুখের কাছে মুখ লইয়া গিয়া অবোধ্য ভাষায় কি বলে এবং পরমুহুর্তেই উভয়ে তাহাদের মিলিত শক্তি দিয়া লোহার গরাদগুলি আকর্ষণ করিতে থাকে। বার-কয়েক রুদ্ধ কবাটের উপর সজারে আঘাত করে। তার পর ব্যর্থমনোরথ হইয়া অপর বানরটি বনান্তরালে অদৃগু হইয়া যায়। স্থবিমলও ঐ দিকেই চাহিয়া ছিল এবং নীরবে উহাদের কাৰ্য্যকলাপ লক্ষ্য করিতেছিল ; এতক্ষণে বলিল—আমার কথার প্রমাণ পেলে ত তপতী ?