পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পতিসরে রবীন্দ্রনাথ শ্ৰীমুধাকান্ত রায় চৌধুরী এবার কবির সঙ্গে তার জমিদারী পত্তিসরে যাবার স্থযোগ ঘটেছিল । প্রজামণ্ডলীর মধ্যে কবি রবীন্দ্রনাথের জমিদাররূপ দেখবার ইচ্ছে অনেক দিন ধরেই প্রবল ছিল । গত ২৬,৭৩৭ তারিখে রাত্রি এগারটায়ু পার্শেলট্রেনে আমরা যাত্রা করেছিলাম। কবিপুত্রের মাতুল শ্ৰযুক্ত নগেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী মহাশয় এবং আমি, উঠলাম একটি ইন্টার ক্লাসে। গাড়ীতে ভিড় ছিল না মোটেই। যারা ছিলেন, তন্মধ্যে একটি পরিবারের চার-পাচ ওন ছিলেন । এদের সঙ্গে কিছুক্ষণ আলাপ-পরিচয়ে জানা গেল, এদের পরিবারের দুজন ভেটিস্থ হয়ে বন্দীশালায় আছেন । বনী-দুজনের বিধবা জননী, একটি বন্দীর স্ত্রী, হনীর একটি ভাই এবং তার কন্যাও ছিলেন । ব্যথাতুরা জননী সাশ্রনয়নে আমাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “কাগজে দেখছি, বন্দীদের মুক্তি দেবে, এ-খবর সত্যি ?” কি উত্তর দেব ভেবে পেলাম না। র্তার চোখেমুখে দারুণ বেদন ফুটে উঠেছিল, সে-ব্যথা আমাদের চিত্তকে স্পর্শ করলে । উার পাশে যে-মেয়েটি বসেছিল সে তার ঠাকুরমার কাছে আব্দার ক’রে কি-একটা উপহারের দাবী জানাতেই তার ঠাকুরমা ( রাজবন্দীর জননী) নাতনীকে সম্বোধন করে বললেন, “কত টাকা ব্যয় ক’রে তোমার জন্য একটা বর উপহারের জোগাড় করছি, তাতেও তোমার মন উঠছে না, এর চেয়ে বেশি আর কোন উপহার তোমায়ু দেব। নাতনী বললে, “সে দিচ্ছ তোমাদের গরজে, তাই বলে আমি ধ' চাচ্ছি সেটা ফাকি দিতে পারবে না।” এদের পরম্পরের বাক্যালাপের মধ্যে এমন একটি ঘরোয় রকমের সারল্য ছিল যে আমাদের পক্ষেও তাদের সঙ্গে ঘরোয়া পকমে বাক্যালাপ করতে একটুও সঙ্কোচ হয় নি। কিছুক্ষণ পরেই উারা টের পেলেন আমাদের মধ্যে একজন রবীন্দ্রপথের সহচর, এবং জার একজন ಟ್ಗ শুালক । আমনি তারা প্রস্তাব করলেন, পরবত্তী ষ্টেশনে ট্রেন থামলেই, তার রবীন্দ্রনাথের কামরায় প্রবেশ ক'রে তাকে প্রণাম ক’রে আসবেন । এই প্রস্তাব প্রসঙ্গে ঐ পনর-ষোল বছরের মেটে ব’লে উঠল, “আমি রবিবাবুর অনেক লেখা পড়েছি । সম্প্রতি র্তার “জাপানে পারস্তে" পড়েছি । আমরা ধন্ত, এমন লোককেও দেখতে পেয়েছি । আজ অনেক দিনের সাধ পূর্ণ হয়েছে।“ পরবর্তী ষ্টেশনে তারা সকলেই কবির কামরায় গিয়ে উপস্থিত হলেন । কিছুক্ষণ সেখানে থেকে তারা আবার ফিরে এলেন নিজেদের কামরায় । পূৰ্ব্বেই বলেছি, যে-ট্রেনে আমরা যাচ্ছিলাম, সেটা পার্শেলট্রেন। কাজেই তার গতি ছিল অন্য প্যাসেঞ্জার-ট্রেনের চেয়ে মন্থর । তার উপর প্রায় সব ষ্টেশনেই থামতে থামতে যায় । এর উপর আবার আর এক উপসর্গ জুটুল। সংলগ্ন তৃতীয় শ্রেণীতে একদল হিন্দুস্থানী মুসাফির উঠলেন, সঙ্গে গ্রামোফোন । গাড়ীতে উঠেই তারা ঐ যন্ত্রে রেকর্ড জুড়ে দিলেন, তার পর আর কি, গায়িকার কণ্ঠনিঃস্থত বেদম ঝঙ্কারপূর্ণ রেকর্ড-সঙ্গীত গাড়ীর সঙ্গে চলল পাল্লা দিয়ে । ফলে প্রত্যেক ষ্টেশনেই ঐ কামরার কাছে কিছু কিছু জনসমাগম হ'তে লাগল। কাজেই কথা কয়ে আর জেগেই, রাত্রির সঙ্গে পাল্প দিয়ে অবশেষে এসে পৌছনো গেল প্রভাত-আলোর দেশে। আত্রাই ঘাটে আমাদের পৌছতে হবে। সেখানে পৌছতে বেল প্রায় দশটা হ’ল । রবীন্দ্রনাথের জগু নদীতে ষ্টেশনের নীচেই বোট বাধা । কবি সেই বোটে গিয়ে উঠলেন । কিছুক্ষণ পরে উীর হতে ধীরে চলল বোট এবং তৎসহ গোটাকয়েক পানসী নৌকো পতিসর অভিমুখে। এবার এসে পৌছনে গেল একেবারে পাড়াগায়ে নদীর দেশে, খাটি বাংলা-মুল্লুকের একেবারে অস্তরে । মাঝখানে চলেছে নদী, নদীর বুকে ভাসছে নৌকো আর অনেক