পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

مسيs ot কচুরি পান,—আর নদীর দুই ধারে পাটের ক্ষেত, বাশের জঙ্গল, আরো কত রকম গাছের বন, আর তারই মধ্যে গায়ে গায়ে ঘেসাধেসি হয়ে আলো-আঁধারের কোল জুড়ে পল্লীর থ’ড়ো কুটার। দারিদ্র্য আর অস্বাস্থ্যের প্রতিমূৰ্ত্তি। যারা কলসীকক্ষে নদীতে জল নিতে এসেছে, কিম্ব যারা ঘোমটা টেনে, ঘাটে ব’সে বাসন মাজছে কিম্বা কাপড় কাচছে—তাদের সকলের অঙ্গে বস্ত্রে দারিদ্র্য । নদীতীরবাসীদের চেহারায় নেই আনন, আছে কোন রকমে দিন কাটাবার ব্যথার একটা মলিন ছায়া । শহর থেকে দূরে গিয়ে একটু চোখ বদলাবার মত নূতনত্বের আস্বাদ অবশু পেয়েছিলাম । নদীতীরের কুটীর থেকে গ্রামের পখ একেবেঁকে বেরিয়ে চলেছে নদীর মতই, এর বাগানের পাশ দিয়ে ওর উঠোনের ভিতর দিয়ে, তার ক্ষেতের উপর দিয়ে, তার পর কোথাও সে-পথ গেছে চ’লে জনতার মধ্যে গঞ্জে-বাজারে, কোথাও সে-পথ নির্জনতার ভিতর দিয়ে ধীরে ধীরে এসে নেমেছে সোপান বেয়ে নদীর জলে । এই পথে ধীরমন্থর গতিতে কলসীর্কাথে ঘর থেকে চলেছে বউ নদীর ঘাটে, সেখানে এটা-ওটা করবার ছলে, ষত ক্ষণ পারে দেরি করে । তার পর চলে ফিরে বউ কলসী ভ'রে আবার নিজের কুটীরে। নদীর পাড়ে, গাছের উচু শিকড়ের উপর বসে, কোথাও হাটুর উপর পর্য্যস্ত কাপড় তুলে গ্রামের ছেলেবুড়ে ছিপ দিয়ে মাছ ধরবার চেষ্টা করছে । কোথাও আঁকাবাক পথ বেয়ে মাথায় ডাল বোঝাই ভরি-তরকারি নিয়ে গঞ্জের দিকে শ্ৰুতগতিতে ছুটে চলেছে চাধী। কোথাও নদীর জলে কুল ঘেসে, অশ্রাস্ত ভাবে খালি গায়ে রোদে বর্ধায়, চাষী নতুন পাট ধুয়ে তুলছে ডাঙায়। এমনই সব দৃশু দেখতে দেখতে পৌছনো গেল পতিসরের ঘাটে। তখন রাত্রি অনুমান ১১টা মেঘলা রাত্রি। জমিদার কাছারিতে এলে দস্তুর আছে, বরকন্দাজের কয়েক দফা বন্দুকের আওয়াজ করে। এক্ষেত্রে সেরূপ কোন আওয়াজ বা অত্যধিক আড়ম্বর করা না হয়—সে-বিষয়ে পূৰ্ব্ব হতেই রবীন্দ্রনাথ ষ্টেটে' নিষেধ-আজ্ঞা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। { প্রবাসী $N988 ট্রেনে নৌকায় এক রাত্রি এক দিন বন্দী থাকার পর যখন সুযোগ পেলাম আর ক্ষণবিলম্ব মা ক’রেই ডাঙায় উঠে পড়লাম । তার পর দিন বুধবার। বুধবারে ঠাকুর-ষ্টেটের পুণ্যাহ। সেই জন্ত কাছারিতে আজ বেশ ধুমধামের আয়োজন চলেছে। সকাল বেলায় আকাশও ঐ উৎসবে যোগ দিতে কৃপণতা করল না । সেদিনকার প্রভাত বেশ উজ্জ্বলই ছিল । কিন্তু বেলা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আকাশে আবার মেঘ দেখা দিল । বেলা বারোটার পূৰ্ব্বেই কাছারিতে বিস্তর প্রজার ভিড়, শুধু পুণ্যাহের জন্ত নয়, রবীন্দ্রনাথকে দেখবার জন্তই বেশী। এই সময় এক দল প্রবীণ মুসলমান প্রজা এসে রবীন্দ্রনাথকে জানালে যে তাকে অন্ততঃ কিছুক্ষণের জন্যও পুণ্যাহের সভায় উপস্থিত হ’তেই হবে । বিশেষ কায়িক অসুবিধা সত্ত্বেও রবীন্দ্রনাথ রাজী হ’লেন । কিন্তু তখনি পুণ্যাহ-ক্ষেত্রে ন-গিয়ে, স্থানীয় বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করবার পরে পুণ্যাহস্থলে যাবার প্রস্তাব হ'ল। রবীন্দ্রনাথের পালকী চলল গেয়ে পথের সরু লাইন ধ’রে, এ-বাড়ীর ও-বাড়ীর আনাচ-কানাচ দিয়ে বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণের দিকে, আর পালকীর সামনে পিছনে চলল লোকের ভিড়। পালকী এসে থামূল “রথীন্দ্র বিদ্যালয়ে"র উঠোনে। সেখানকার একটি সভামগুপের নীচে একটি ইজি-চেয়ারে রবীন্দ্রনাথ বসলেন । প্রধান-শিক্ষক মহাশয় বিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচয় কবিকে দেওয়ার পর কবি সে-স্থান থেকে বিদায় নেবার ঠিক পূৰ্ব্ব মুহূর্বেই এক দল বালক-ছাত্র তাকে প্রণাম ক'রে, তার আগমন উপলক্ষ্য করে সাত দিনের । ছুটি চাইলে । রবীন্দ্রনাথ ছুটি মঞ্জুর করে দিলেন, এই ' মঞ্জুরীতে শিক্ষকদেরও বদনমগুলে আনন্দ ফুটে উঠেছিল। ' এই বিদ্যালয় সম্বন্ধে বিদ্যালয়ের মন্তব্য-বহিতে রবীন্দ্রনাথ যে বাণী দিয়েছেন তা নিম্নে উদ্ধৃত হ’ল — “রথীন্দ্রনাথের নামচিহ্নিত কালিগ্রামের এই বিদ্যালয়ের আমি উন্নতি কামনা করি। এখানে ছাত্র এবং শিক্ষকদের সম্বন্ধ যেন অকৃত্রিম স্নেহের এবং ধৈর্ষ্যের দ্বারা সত্য এবং মধুর হয় এই আমার উপদেশ। শিক্ষাদান । উপলক্ষ্যে ছাত্রদিগকে শাসন এবং পীড়নে অপমানিত করা । অক্ষম এবং কাপুরুষের কৰ্ম্ম, একথা সৰ্ব্বদা মনে রাখা উচিত ;