পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাটির বাসা শ্রীসীতা দেবী

গরুর গাড়ী চড়িয়া ষ্টেশন হইতে বাড়ী পৌছিতে আধ ঘণ্ট। পার হইয়া যায়। মৃণালকে হাটিয়া যাইতে দিলে সে পনর মিনিটে এ পথটুকু অতিক্রম করিতে পারে, কিন্তু হাটিয়া ঘাওয়া মামামামী পছন্দ করেন না । গ্রামের বাজারটা মাঝে পড়ে, সেখানে নানারকম লোক থাকে, তাহাজের চোখের উপর দিয়া অতবড় মেয়ে নাই বা হাটিয়া গেল ? এমনিতেই কত কথা ওঠে। বাজার পার হইয়া রাস্তাটা খানিক নামিয়া গিয়াছে, মাঝে একটি ছোট নদী, ডিষ্ট্রিক্ট বোর্ডের কল্যাণে তাহার উপর একটি সাকোও আছে । গরুর গাড়ী হুড় হড় করিয়া নামিয়া গিয়া সেই সাকোর মুখে থামিল গ্রামের এক দল মেয়ে জল ভরিতে আর কাপড় কাচিতে আসিয়াছে, তাহারা কৌতুহলবিম্বফারিত নেত্রে গাড়ীর দিকে চাহিয়া রহিল। কে আছে ছইয়ের ভিতরে তাহ ভাল করিয়া বুঝা যায় না, আবার না জানিলেও এই সব সরল গ্রাম্য ললনাদের থেদের সীমা থাকে না। কয়েকজন ত জল ছাড়িয়া উঠিয়াই আসিল, সন্দেহভঞ্জন করিবার জন্ত । মৃণাল হাসিয়া মুখ বাহির করিয়া বলিল, “আরে, আমি রে আমি।” মেয়েদের ভিতর অগ্রবর্ধিনী হাসিয়া বলিল, “মল্পিক বাবুদের বিটী বটে গো ।” তাহারা সব কয়জন আবার ঘাটে নামিয়া গিয়া মহোৎসাহে কাপড় কাচিতে আরম্ভ করিল। মাঠ, নদী, বন, সব যেন মৃণালকে হাসিয়া অভ্যর্থনা করিতেছে। নদীর কুল কুল শব্দটিও যেন;আনন্দের রাগিণী । প্রাপ্তার দুই ধারের বড় বড় শাদা পাথরের ঢিপিগুলি যেন উজ্জল নেত্রে তাহার দিকে চাহিয়া আছে। ইহার ষে *ালের আজন্মকালের বন্ধু ; ইহাঙ্গের ভুলিয়া কি সে কখনও কলিকাতার নির্শম কারাগৃহে পড়িয়া থাকিতে পারে ? গরুর গাড়ী প্রায় বাড়ীর কাছাকাছি আসিয়া পড়িয়াঁছে । হয়, বাছ । দূর হইতে দেখা যায় মামীম বাহিরের দাওয়ার উপর ছোট খোকাটাকে কোলে করিয়া আসিয়া দাড়াইয়াছেন । চিনি আর টনি বাতাসে ঝাকড় চুল উড়াইয়া, পায়ের মল বাজাইয়া প্রাণপণে দৌড়াইয়া আসিতেছে। গাড়ী খামিবার আগেই তাহার ছোটখাট বুলিবায়ুর মত আসিয়া গাড়ীর উপর আছড়াই পড়িল। “আরে থাম্ খাম্, পড়ে যাবি গাড়ীর তলায়।” কে বা কাহার কথা শোনে ? মৃণাল গাড়ী হইতে নামিয়া পড়িল । গাড়োয়ান আর মামাবাৰু জিনিষপত্রগুলির ব্যবস্থা করিতে লাগিলেন । চিনি ইণপাইতে ইনপাইতে বলিল, “ম, দিদি এসেছে গে৷ ” মা যেন তাহ দেখিতে পান নাই, চিনির বলার অপেক্ষাতেই ছিলেন । o চিনি ঢোক গিলিয়া বলিল, "মস্ত বড় মাছ এনেছে গো, এত্ত বড় ।” মামীম বলিলেন, “মাছটা দেখেই তুই বেণী খুলি হয়েছিল, না ?” চিনি একথার কোনও প্রতিবাদ না করিয়া চারিদিকে ঘুরিয়া ঘুরিয়া নাচিতে লাগিল। খাইতে পাইলে খুনী আবার জগতে কে না হয় ? ইহা কি আবার একটা জিজ্ঞাসা করিবার কথা ? চিনি জিজ্ঞাস করিল, “দিদি, এবার বিলাতি মিঠাই আনি নি ?” মৃণাল মামীমাকে প্রণাম করিয়া বলিল, “এনেছি গো এনেছি, সব এনেছি । মামীম, খোকাটা ষে মস্ত হয়ে ੋਗ ? মামীম হাসিয়া বলিলেন, “বড় হবার 'বয়স হ'লেই বড় চল ঘরের ভিতর, হাত মুখ ধুবি, কাপড় ছাড়বি। কিছু খেয়ে এসেছিল, ন সারা পথ শুকিয়ে এলি ?” মৃণাল বলি, “সকালে ছ-গ্রাস ভাত খেয়েছি दर्रा, किस्त्र আসতে আসতে আবার খিদে পেয়ে গেছে।”