পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কইমাছের বিচিত্র কাহিনী শ্রীগোপালচন্দ্র ভট্টাচাৰ্য্য কেবল রমনাতৃপ্তিকর বলিয়াই নহে, অস্তৃত জীবনীশক্তি, অনাহারে দীর্ঘকাল জীবনধারণ করিবার ক্ষমতা, উভচর-বৃত্তি প্রভৃতি অন্য নান। কারণেও কইমাছ আমাদের দেশে সৰ্ব্বজনপরিচিত । ছিন্নবিছিন্ন অবস্থায়ু কষ্টমাছ তপ্ত কটাহে নিক্ষিপ্ত হইয়াও জীবনবক্ষার জঙ্গ যেরূপ আস্ফালন করিয়া থাকে, তাহাতে স্বতই মনে হয়, অতীতে ইহাদিগকে অতি কঠোর জীবন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ু বৰ্ত্তমান অবস্থায় উন্নীত হইতে হইয়াছে। অতীতে ইহাদের পূর্ববৰ্ত্তী স্ব জাতীয়দিগকে হয়ত কেবল কর্দমাক্ত ভূমির মধ্যেই অনাহারে বা স্বল্পাঙ্গারে বহু যুগ কাটাইতে হইয়াছে। এই অপরিসীম কৃচ্ছসাধনের ফলেই বোধ হয় এখন ইহার প্রতিকুল অবস্থায়ু পড়িয়াও অন্যান্য প্রাণী অপেক্ষ অল্পায়াসে জীবনধারণ কানকে। প্রসারিত করার কইমাছ জালে আটকাইয়াছে করিতে পারে এবং উত্তরাধিকারসূত্রে কতকগুলি অদ্ভূত বৃত্তির অধিকারী হইয়াছে। কিন্তু এই বৃত্তিগুলি আত্মরক্ষার পরিপোষক হইলেও সংস্কারমূলক বলিয়া প্রকারাস্তরে বুদ্ধিজীবী শত্রুর হস্তে ইহাই তাহদের লাঞ্ছিত হইবার সুযোগ করিয়া দিয়াছে। কইমাছ সাধারণতঃ ঘাসপাতাসমাচ্ছন্ন অন্ধকার অগভীর জলেই বাস করিয়া থাকে, মৃত মৎস্ত বা অস্তান্ত ক্ষুদ্র প্রাণীদের দিহাবশেষ বা কীটপতঙ্গ ভক্ষণ করিয়াই ইহাৱা জীবনধারণ করে। দুই বৎসরের অধিক কাল পরীক্ষাগারের কৃত্রিম জলাশয়ের মধ্যে সাতআটটি কই-মাছকে অনাহারে জীবিত রাথিতে সমর্থ হইয়াছিলাম । এই দুই বৎসরের মধ্যে মাত্র চার-পাচ দিন সামাঙ্ক কিছু খাবার দিয়াছিলাম । দীঘ কাল অনাহারে ইহাদের শরীরের চব্বি । নিঃশেষিত হইয়া গিয়াছিল, দৈর্ঘ্যে বা প্রস্থে কোনরূপ বৃদ্ধির চিহ্ন পরিলক্ষিত হয় নাই । শল্পীর ক্ষীণ হইবার ফলে মাথা অসম্ভব বড় দেখাইতেছিল চোখগুলি যেন বাহির হইয়া পড়িয়ছিল—কি রকম এক প্রকার শূন্ত উদাস দৃষ্টিতে চাহিয়া থাকিত ও প্রায়ই এক স্থানে সকলে মিলিয়া চুপ করিয়া পড়িয়া থাকিত । সৰ্ব্বশেষে এমন অবস্থায় উপনীত হইল যে খাবার দিলেও আর যেন খাইবার প্রবৃত্তি ছিল না । একটি মাছ এক টুকরা রুটি চার-পাচ বার উদগীর্ণ করিয়া গিলিতে গিয়া দম আটকাইয়াই মারা গেল । স্বাভাবিক অবস্থায় ইহার এমন সুকৌশলী ও সস্তরণপটু ষে সহজে ইহাদিগকে ধরিতে পারা যায় না । ইহারা অতি সুদক্ষ জলজ ঘাসের উপর পাতিয়া রাখা জালের উপরে শিকারের লোভে আসিয়া পড়িয়া কইমাছ আটকাইয়া গিয়াছে শিকারী। শিকার ধরিবার সময় ইহার বেশ বুদ্ধির পরিচয় দেয় । সাধারণতঃ মৃত মৎস্ত বা অন্ত কোন প্রাণীর মৃতদেহ ভক্ষণের সময় ইহার হায়েন প্রভূতি শিকারী জন্তুর মত দল ৰাধিয়া মৃতদেহ ছিন্নবিচ্ছিন্ন করিয়া ছিড়িয়া-খুড়িয় খাইয়া থাকে। মৃত প্রাণী অবশ্য সৰ্ব্বদাই জোটুে না, তখন প্রয়োজন-মত ইহারা মশা মাছি ও অস্কাঙ্ক কীট-পতঙ্গ শিকারে মনোনিবেশ করে। ইহার। সাধারণতঃ ঘাসপাতা ও জঞ্জাল পরিপূর্ণ• অগভীর জলেই বাস করিয়া থাকে ।